আজকাল ওয়েবডেস্ক: গবেষকরা এমন একটি মহাকাশযান ডিজাইন করেছেন যা মহাকাশ যাত্রায় ২৪০০ জন মানুষকে বহন করতে সক্ষম। এই যানটির নাম ক্রাইসালিস। গবেষকদের বিবরণ অনুযায়ী এটি প্রায় ২৫ ট্রিলিয়ন মাইল দূরত্ব অতিক্রম করতে ৪০০ বছর সময় নেবে। এর মানে হল সম্ভাব্য যাত্রীদের অনেকেই সারাজীবন এই মহাকাশযানেই কাটাবে।


ক্রাইসালিসকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে এটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম মানুষকে আশ্রয় দিতে পারে যতক্ষণ না তারা পৌঁছায় নিজের পছন্দের স্থানে। এই প্রকল্পটি প্রোজেক্ট হাইপারিয়ন ডিজাইন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে। এটি এমন একটি চ্যালেঞ্জ যেখানে বহু প্রজন্মের জন্য আন্তঃনাক্ষত্রিক ভ্রমণের উপযোগী মহাকাশযান ডিজাইন করতে হয়।

আরও পড়ুন:  রাশিয়াতে ঘুরতে যাওয়ার এটাই সেরা সময়, কত টাকা হাতে নিলেই যেতে পারবেন সেন্ট পিটার্সবার্গ


ভ্রমণের আগে প্রস্তুতি
ক্রাইসালিসে ওঠার আগে যাত্রীদের প্রাথমিক কয়েক প্রজন্মকে ৭০ থেকে ৮০ বছর অ্যান্টার্কটিকার মতো একটি বিচ্ছিন্ন পরিবেশে বসবাস করতে হবে, যাতে তারা একঘেয়ে ও সীমাবদ্ধ পরিবেশে মানসিকভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। যানটি ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে তৈরি করা সম্ভব হতে পারে এবং এতে কৃত্রিম অভিকর্ষ (gravity) তৈরি করা হবে একটি ঘূর্ণনের মাধ্যমে।


যানটির গঠন ও বৈশিষ্ট্য
৩৬ মাইল (৫৮ কিমি) দীর্ঘ এই মহাকাশযানটি রাশিয়ান “নেস্টিং ডল”-এর মতো তৈরি করা হবে। এর কেন্দ্রের চারপাশে একাধিক স্তর থাকবে। প্রতিটি স্তরে থাকবে কমিউনাল স্পেস, খামার, বাগান, আবাসন, গুদামঘর, শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এগুলি সবই নিউক্লিয়ার ফিউশন রিঅ্যাক্টর দ্বারা চালিত হবে।
এখানে থাকবে যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং সেই শাটল যা মানুষকে মহাকাশে ঘুরতে দেবে। এখানে খাদ্য উৎপাদন হবে, পাশাপাশি উদ্ভিদ, ছত্রাক, অণুজীব, কীটপতঙ্গ ও পশুপালন হবে পরিবেশ-নিয়ন্ত্রিত এলাকায়। থাকবে কমিউনাল এলাকা — পার্ক, স্কুল, হাসপাতাল, গ্রন্থাগার ইত্যাদি। এখানে থাকবে পরিবারগুলোর বাসস্থান, যেখানে থাকবে বায়ু চলাচল ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।

এখানে চলবে শিল্প উৎপাদন, রিসাইক্লিং, ওষুধ উৎপাদন, কাঠামো নির্মাণ প্রভৃতি। এখানে থাকবে গুদামঘর, নানা রকম সম্পদ, কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি। এই স্তরে রোবটিক সিস্টেম ব্যবহার করে মানুষের শ্রম প্রয়োজন কমিয়ে আনা হবে। যানটির সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ২,৪০০ জন হলেও দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী জনসংখ্যা ১,৫০০ জন রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। যাতে খাদ্য ও সম্পদের ভারসাম্য বজায় থাকে। জন্ম নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পিতভাবে পরিচালিত হবে এই ভারসাম্য রক্ষার জন্য।


শাসনব্যবস্থা পরিচালনায় ব্যবহার করা হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যার ফলে সামাজিক কাঠামোর স্থিতিশীলতা বাড়বে। প্রজন্মের মধ্যে জ্ঞান হস্তান্তর সহজ হবে। মহাকাশযানটির জটিল সামাজিক ও কারিগরি ব্যবস্থার ওপর গভীর দৃষ্টি রাখা যাবে। এই ক্রাইসালিস প্রকল্পটি ভবিষ্যতের আন্তঃনাক্ষত্রিক মানব অভিযাত্রার একটি সাহসী ধারণা যেখানে প্রযুক্তি, জীববিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্বের অপূর্ব সমন্বয় দেখা যায়।