আজকাল ওয়েবডেস্ক: দক্ষিণ আমেরিকার দেশ বলিভিয়ার নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন মধ্যপন্থী নেতা রদ্রিগো পাজ। বলিভিয়ার মধ্য-ডানপন্থী ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিসি) সদস্য পাজ ৮ নভেম্বর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা তিনি পাননি এবং সরকার গঠন নিশ্চিত করার জন্য সম্ভবত অন্যান্য দলের সঙ্গে জোট গঠন করতে বাধ্য হবেন।

৫৮ বছর বয়সী রদ্রিগো পাজ একজন অর্থনীতিবিদ। বলিভিয়ার প্রাক্তন বামপন্থী রাষ্ট্রপতি জেইমে পাজ জামোরার ছেলে। জেইমে ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত দেশটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। রদ্রিগো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং পরে রাজনীতিতে যোগদানের জন্য নিজের দেশে ফিরে আসেন। তারিজা থেকে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন।

আরও পড়ুন: রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে ট্রাম্প এটা কী বললেন!‌ শুনলে মাথা বন বন করে ঘুরবে

আশির দশকে বলিভিয়ায় সামরিক একনায়কতন্ত্রের সময় পাজ পরিবার নির্বাসনে থাকাকালীন স্পেনের সান্তিয়াগো দে কম্পোস্টেলায় জন্মগ্রহণ করেন রদ্রিগো। জেসুইট স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং পরে ওয়াশিংটনের আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। ১৯৮০ সালে অভ্যুত্থানের আগে, রদ্রিগোর বাবা বলিভিয়ায় একটি বিমান দুর্ঘটনায় বেঁচে যান। যা পরে একটি পরিকল্পিত হামলা বলে জানা গিয়েছিল। নির্বাসনে থাকাকালীন তিনিও একটি রহস্যময় গাড়ি দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যান। মধ্যপন্থী এই নেতা প্রায়শই প্রকাশ করেছেন যে এই অভিজ্ঞতাগুলি তাঁর রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল। কর্মজীবনে রদ্রিগো তাঁর বাবার বিপ্লবী বাম আন্দোলন থেকে শুরু করে ডানপন্থী জোট, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ধীরে ধীরে তিনি সিটি কাউন্সিলর থেকে সেনেটর পদে উন্নীত হন।

বলিভিয়ার রাজনীতিতে ঐতিহাসিক পরিবর্তনের হাওয়া রদ্রিগো। বেসরকারি খাতে বৃদ্ধির প্রচারের পাশাপাশি সামাজিক কর্মসূচি বজায় রাখার অঙ্গীকারের মাধ্যমে জয়লাভ করেন তিনি। এই প্রতিশ্রুতি বামপন্থী ভোটারদের মনে ধরে যায়। তাঁর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ইভো মোরালেস নেতৃত্বে হতাশ ছিলেন।

দেশটির সুপ্রিম ইলেক্টোরাল ট্রাইব্যুনাল (টিএসই) অনুসারে, রবিবারের রান-অফে ৫৮ বছর বয়সী এই সেনেটর ৫৪.৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। ডানপন্থী প্রাক্তন অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি জর্জ ‘টুটো’ কুইরোগার ৪৫.৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।

উভয় প্রার্থীই বলিভিয়ার তীব্র অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলা এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক মেরামতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শ্রমিক নেতা এবং আদিবাসী বংশোদ্ভূত প্রথম বলিভিয়ার রাষ্ট্রপতি ইভো মোরালেস এবং তাঁর উত্তরসূরী এবং দেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি লুইস আর্সের প্রশাসনের সময় আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কে অবনতি ঘটে।

২০০৬ সালে মোরালেস ক্ষমতায় আসার পর থেকে বলিভিয়ার রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে ক্ষমতাসীন মুভমেন্ট টুওয়ার্ডস সোশ্যালিজম (এমএএস) দল আগস্টে প্রথম রাউন্ডের ভোটগ্রহণে সমর্থন ভেঙে যাওয়ার পর কোনও প্রার্থীকে রানঅফের দিকে এগিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়েছে। এমএএসের অভ্যন্তরীণ ভাঙণ একটি রাজনৈতিক যুগের সমাপ্তির ইঙ্গিত। 

বেশ কয়েক বছর ধরেই আর্থিক সঙ্কটে ভুগছে। মুদ্রাস্ফীতির হার ২৫ শতাংশ, বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি, জ্বালানি সঙ্কট ইত্যাদির কারণে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয় জনমানসে। এর ফলেই ১৭ আগস্ট নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যায় বলিভিয়া।  ফলাফল ঘোষণার পর পাজের উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী এডম্যান্ড লারা ঐক্য ও পুনর্মিলনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আমাদের অবশ্যই ডিজেল এবং পেট্রলের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। মানুষ কষ্ট পাচ্ছেন। আমাদের মৌলিক খাদ্যের দাম স্থিতিশীল করতে হবে এবং আমাদের অবশ্যই দুর্নীতির অবসান ঘটাতে হবে।”