আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে সোমবার হোয়াইট হাউস থেকে নতুন ইঙ্গিত মিলেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লি একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করার পথে অগ্রসর হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্কও কমানো হতে পারে।
ওভাল অফিসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভারত-দূত সার্জিও গর–এর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, দু’দেশের আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে এবং দু’পক্ষই একটি "ভারসাম্যপূর্ণ চুক্তি"র দিকে এগোচ্ছে। ট্রাম্প বলেন, “আমরা ভারতের সঙ্গে একটি নতুন চুক্তি করছি। আগের চেয়ে অনেক ভিন্ন। এখন হয়তো তারা আমাকে খুব ভালোবাসে না, তবে আবার ভালোবাসবে। আমরা ন্যায্য চুক্তির দিকে যাচ্ছি। তারা খুব ভাল দরকষাকষি করে, তাই সার্জিও, তোমাকে এব্যাপারে নজর রাখতে হবে। আমি মনে করি আমরা খুব কাছেই পৌঁছে গেছি—সবার জন্য ভালো হবে এমন একটি চুক্তি।”
ভারতের জন্য শুল্ক কমানোর ইঙ্গিত
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প জানান, ভারতীয় আমদানির ওপর মার্কিন শুল্ক ভবিষ্যতে কমানো হতে পারে। তিনি বলেন, “এখন ভারতের ওপর শুল্ক অনেক বেশি, কারণ রাশিয়ান তেলের ইস্যুটি ছিল। তারা এখন রাশিয়ান তেল নেওয়া উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিয়েছে। আমরা শুল্ক কমাবো। কোনো একসময় তা কমানো হবে।”
ট্রাম্প আরও বলেন, “ভারত বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতাগুলোর একটি, বিশ্বের বৃহত্তম দেশ, এবং এর জনসংখ্যা ১.৫ বিলিয়নের বেশি। প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে, আর সার্জিও ইতিমধ্যেই সেই সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করেছে।”
মাসের পর মাসের আলোচনার পর গতি পাচ্ছে বাণিজ্য চুক্তি
ট্রাম্পের এই মন্তব্য এমন সময়ে এসেছে যখন ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। ৫ নভেম্বর ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গয়াল জানান, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা "খুব ভালোভাবেই চলছে", যদিও কিছু "সংবেদনশীল ও গুরুতর ইস্যু" এখনও বিবেচনাধীন রয়েছে। তিনি আরও বলেন, “আলোচনা খুব ভালো চলছে। অনেক সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে, তাই স্বাভাবিকভাবেই সময় লাগছে।”
এই চুক্তির লক্ষ্য হল বর্তমান ১৯১ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্যকে বাড়িয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ বিলিয়ন ডলার করা। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই চুক্তির প্রস্তাব আসে এবং মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচ দফা বৈঠক সম্পন্ন হয়েছে, যার মধ্যে ২৩ অক্টোবর একটি ভার্চুয়াল বৈঠকও রয়েছে। ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ প্রথম ধাপের চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উভয় পক্ষের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক
গত সেপ্টেম্বর মাসে গয়াল উচ্চপর্যায়ের ভারতীয় প্রতিনিধিদল নিয়ে ওয়াশিংটনে যান আলোচনা এগিয়ে নিতে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্পেশাল সেক্রেটারি ও চিফ নেগোশিয়েটর রাজেশ আগরওয়াল, যিনি মার্কিন বাণিজ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেন।
একই সময়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ ফর সাউথ অ্যান্ড সেন্ট্রাল এশিয়া ব্রেন্ডন লিঞ্চ নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রতিনিধি দল নয়াদিল্লিতে ভারতের বাণিজ্য দফতরের সঙ্গে বৈঠক করে। কর্মকর্তারা ওই আলোচনাকে "ইতিবাচক এবং ভবিষ্যতমুখী" বলে বর্ণনা করেন। উভয় পক্ষই একটি সমগ্র ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক চুক্তি দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে।
ভারত–মার্কিন এই বাণিজ্য আলোচনার গতি নতুনমাত্রা পেয়েছে বলে কূটনৈতিক মহলের ধারণা। ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য দুই দেশের বাণিজ্য অংশীদারিত্বকে আরও জোরদার করার সম্ভাবনা তৈরি করেছে, যা আগামী কয়েক মাসে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
