আজকাল ওয়েবডেস্ক: পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় পাঞ্জাব প্রদেশে প্রবল বর্ষণ ও নদীর পানি বৃদ্ধি জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (PDMA) জানিয়েছে, চলমান বন্যায় এ পর্যন্ত অন্তত ৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং প্রায় ৪৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাভি, শতদ্রু ও চেনাব নদীতে জলের উচ্চস্তর এই বন্যার প্রধান কারণ। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রদেশের ৪,৫০০-রও বেশি গ্রাম জলে ডুবে গেছে। বিপর্যস্ত মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে ব্যাপক তৎপরতা চলছে। এ পর্যন্ত প্রায় ২৪.৫ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
প্রভাবিত জেলাগুলিতে ৩৯৬টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। শুধু মানুষ নয়, প্রায় ১৯ লাখ গবাদি পশুকেও উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে। ত্রাণ শিবিরে খাদ্য, চিকিৎসা ও জরুরি সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার কাজ অব্যাহত রয়েছে। সারা পাকিস্তানজুড়ে মৌসুমি বর্ষণ ও বন্যার কারণে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২৬ জুন থেকে এখন পর্যন্ত দেশব্যাপী অন্তত ৯৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছে আরও ১,০৬০ জন। পাশাপাশি ৮,৪০০-রও বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৬,৫০০-রও বেশি গবাদি পশু মারা গেছে।
আরও পড়ুন: সংবিধান সংশোধন থেকে শুরু করে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ, আর কী দাবি নেপালের জেন জি প্রতিবাদীদের
জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (NDMA) গত সপ্তাহের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল, ২৬ জুন থেকে অন্তত ৮৮৪ জনের মৃত্যু, ১,১৮২ জন আহত, ৯,৩৬৩ ঘরবাড়ি ধ্বংস এবং ৬,১৮০ গবাদি পশু মারা গেছে। নতুন হিসাব থেকে বোঝা যাচ্ছে, প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন অব পাকিস্তান (ECP) পাঞ্জাবের নয়টি আসনে উপনির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়া এবং পরিকাঠামোর মারাত্মক ক্ষতির কারণে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয় বলে কমিশন জানিয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগ সতর্ক করে বলেছে, আগামী দিনগুলোতে আরও ভারী বর্ষণ হতে পারে। উদ্ধারকর্মী ও সেনা সদস্যরা উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে, যাতে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কমানো যায় এবং দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহায়তা পৌঁছে দেওয়া যায়। প্রবল বৃষ্টিপাত, নদীর জল বৃদ্ধি এবং দুর্বল পরিকাঠামোর কারণে পাকিস্তানে মৌসুমি বন্যা প্রায় প্রতিবছরই ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি ডেকে আনে। এবারও পরিস্থিতি ব্যতিক্রম নয়, বরং আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আর্থিক সহায়তা এবং পুনর্বাসন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হচ্ছে। তবে ব্যাপক পরিকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির কারণে পুনর্গঠন দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পাকিস্তানে বর্ষাকালে বন্যার তীব্রতা ক্রমশ বাড়ছে। কয়েক বছর আগে দেশটি যে ভয়াবহ বন্যার শিকার হয়েছিল, এবারের পরিস্থিতি তারই পুনরাবৃত্তি মনে করা হচ্ছে।
পাঞ্জাব ছাড়াও পাকিস্তানের অন্য কয়েকটি প্রদেশে ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কর্তৃপক্ষ মানুষকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী পরিবারগুলোকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। বর্তমান সংকট পাকিস্তানের জন্য শুধু মানবিক বিপর্যয় নয়, অর্থনৈতিক দিক থেকেও এক বড় আঘাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষি উৎপাদনে ধস নামলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। একই সঙ্গে ঘরহারা মানুষের পুনর্বাসন এবং পরিকাঠামো পুনর্গঠনের ব্যয় সরকারের জন্য এক কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
