আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রকৃতির সৌন্দর্যের মাঝে এখন সেলফি তোলার নেশা শুধু মানুষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই—বন্য প্রাণীরাও যেন এই শখে সামিল হয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর বোল্ডার এলাকার ওপেন স্পেস অ্যান্ড মাউন্টেন পার্কস (ওএসএমপি) কর্তৃপক্ষ এমন একটি ঘটনার মুখোমুখি হয়েছে, যা তাদের যেমন অবাক করেছে, তেমনি হাসিয়েও দিয়েছে। বন্য প্রাণীদের পর্যবেক্ষণের জন্য কর্তৃপক্ষ কিছু জায়গায় মুভমেন্ট-অ্যাক্টিভেটেড ক্যামেরা বসিয়েছিল। এই ক্যামেরাগুলো আশপাশে প্রাণীর নড়াচড়া অনুভব করলেই ছবি তুলতে শুরু করে। তবে এই ক্যামেরার ফুটেজ দেখে কর্মকর্তারা জানতে পারেন, মোট ৫৮০টি ছবির মধ্যে প্রায় ৪০০টি ছবিই একটি কৌতূহলী ভালুকের সেলফি।
বন্য প্রাণীর স্বাভাবিক আচরণ জানতেই ওএসএমপি এই ক্যামেরাগুলো লাগানো হয়। কারণ বোল্ডার এলাকার পাহাড়ি ও বন্য পরিবেশে রয়েছে কায়োট, বিবার, মাউন্টেন লায়ন, ব্ল্যাক বিয়ার-সহ বহু প্রজাতির বন্য প্রাণী। সাধারণত অধিকাংশ প্রাণী এই ক্যামেরার অস্তিত্ব বুঝতেই পারে না, কিন্তু এই ভালুকটি যেন ক্যামেরার প্রতি ভীষণ আকৃষ্ট হয়েছিল। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে কখনও পুরো মুখ, কখনও শুধু থাবা, কখনও জিভ বের করে, আবার কখনও পিছন ফিরে হাঁটতে হাঁটতে—এমন নানান ভঙ্গিতে এই ভালুক নিজের উপস্থিতি ক্যামেরায় বন্দি করে রেখেছে।
ওএসএমপি-র মুখপাত্র ফিলিপ ইয়েটস এক বিবৃতিতে জানান, এই ভালুকটি যেন বুঝতে পেরেছিল ক্যামেরাটি তার জন্যই রাখা হয়েছে এবং সেটির সামনে দাঁড়িয়ে বারবার ছবি তুলিয়েছে। তিনি আরও বলেন, এসব ছবি দেখে তারাও হাসতে বাধ্য হয়েছেন এবং তারা ভেবেছেন, মানুষের সঙ্গে এই অদ্ভুত ও মজার অভিজ্ঞতা শেয়ার করলে অন্যরাও আনন্দ পাবে। পরে স্থানীয় গণমাধ্যম এনবিসি নিউজে এই তথ্য প্রকাশিত হলে তা দ্রুত সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ওএসএমপি জানায়, তাদের ৪৬ হাজার একর বিস্তৃত অঞ্চলে মোট নয়টি বিশেষ ক্যামেরা বসানো রয়েছে এবং এগুলো দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা সক্রিয় থাকে। রাতে ইনফ্রারেড প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্যামেরাগুলো এমনভাবে ছবি তোলে যাতে অন্ধকারে থাকা প্রাণীদের বিরক্ত করা না হয়। এই ক্যামেরাগুলো শুধু স্থিরচিত্রই নয়, প্রাণী সামনে থাকলে ১০ থেকে ৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত ভিডিওও রেকর্ড করতে সক্ষম।
সংস্থার সিনিয়র ওয়াইল্ডলাইফ ইকোলজিস্ট উইল কিলি জানান, এই ক্যামেরাগুলো তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর সাহায্যে তারা প্রাণীর চলাচল, জীবনধারা এবং বাসস্থানের ধরন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। এসব তথ্য ব্যবহার করে তারা ভবিষ্যতে সংরক্ষণ পরিকল্পনা, পরিবেশ সুরক্ষা এবং বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে পারবেন। সাধারণত তারা ক্যামেরাগুলো এমন জায়গায় বসান, যেসব পথ ধরে প্রাণীরা নিয়মিত চলাফেরা করে। তুষারে প্রাণীর পায়ের ছাপ, ব্যবহৃত পথ বা আন্ডারপাসের মতো স্থানে এমন ক্যামেরা স্থাপন করা হয়।
এই ঘটনা শুধু গবেষণাই নয়, মানুষের কাছে বন্যপ্রাণীর আচরণের এক ভিন্ন রসদ এনে দিয়েছে। সেলফি-পাগল মানুষদের যুগে একটি ভালুকের এমন আচরণ প্রমাণ করে, কখনও কখনও প্রযুক্তির সঙ্গে প্রাণীর কৌতূহল মিলেমিশে নজিরবিহীন মুহূর্ত সৃষ্টি করতে পারে।
