আজকাল ওয়েবডেস্ক: অস্ট্রেলিয়ার প্রাণঘাতী ইস্টার্ন ব্রাউন সাপের বিষে এক গোপন বিভাজন খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নতুন গবেষণা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ইস্টার্ন ব্রাউন সাপের কামড়ের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিভেনম সবসময় পূর্ণ সুরক্ষা দিতে নাও পারে। এই কারণেই গবেষকরা হাসপাতালের রেকর্ডগুলো পুনরায় পর্যালোচনা করছেন।
এই প্রকল্পের নেতৃত্ব দেন ইউকিউ-র স্কুল অব দ্য এনভায়রনমেন্টের অধ্যাপক ব্রায়ান ফ্রাই, যিনি তাঁর দল নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিটি ব্রাউন সাপ প্রজাতির বিষে থাকা রক্ত জমাট বাঁধার টক্সিন বিশ্লেষণ করেন। অধ্যাপক ফ্রাই বলেন, “আমরা দেখেছি সব ব্রাউন সাপের বিষ একরকম নয়—মানে, জীবনরক্ষাকারী অ্যান্টিভেনমের এখনই নতুন সংস্করণ প্রয়োজন হতে পারে। কিছু বিষ রক্তে শক্ত, টেকসই জমাট বাঁধে, আবার কিছু বিষ দ্রুত কিন্তু ভঙ্গুর জাল তৈরি করে, যা মুহূর্তেই ভেঙে যায়।
আরও পড়ুন: আসছে জিএসটি ২.০, কোথায় সুবিধা পাবেন ভারতীয়রা
গবেষকরা এজন্য থ্রম্বোইলাস্টোগ্রাফি নামে এক বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন, যা রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া মাপে। তাঁদের ফলাফলে দেখা যায়, দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার ইস্টার্ন ব্রাউন সাপ এমন বিষ উৎপন্ন করে যা টাইপান সাপের মতো দৃঢ় ও স্থায়ী রক্তজমাট তৈরি করে। এর বিপরীতে, উত্তর অস্ট্রেলিয়ার ইস্টার্ন ব্রাউন সাপ এবং অন্যান্য ব্রাউন সাপের বিষ দ্রুত জমাট বাঁধলেও তা দুর্বল ও সহজেই ভেঙে যায়।
অধ্যাপক ফ্রাই বলেন, “আমাদের তথ্য প্রমাণ করছে যে উত্তর অস্ট্রেলিয়ার ইস্টার্ন ব্রাউন সাপের কামড় ও দক্ষিণের কামড়ের প্রভাব একেবারে আকাশ-পাতাল পার্থক্যের মতো।” বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার ব্রাউন সাপের অ্যান্টিভেনম তৈরি করা হয় একত্রিত বিষ ব্যবহার করে। যার ভৌগোলিক উৎস স্পষ্ট নয়।

এখন পর্যন্ত চিকিৎসা রিপোর্টে সব ব্রাউন সাপের কামড় একসাথে ধরা হয়, প্রজাতি বা অবস্থান আলাদা করা হয় না। ফলে দক্ষিণের সাপ আর বাকি ব্রাউন সাপের মধ্যে পার্থক্য চাপা পড়ে যেতে পারে।এবার পরবর্তী কাজ হল শত শত হাসপাতালের নথি ঘেঁটে দেখা। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার ব্রাউন সাপের কামড়ের ক্ষেত্রে কোনও বিশেষ পার্থক্য আছে কি না। আমরা তা করতে পারি, কারণ দক্ষিণের ‘শক্ত জমাট’ লাইনেজ এমন অঞ্চলে থাকে যেখানে আর কোনো ব্রাউন সাপ নেই। একই সঙ্গে আমরা মানব ও প্রাণীর জন্য বিদ্যমান অ্যান্টিভেনমগুলোও জরুরি ভিত্তিতে পরীক্ষা করা হবে। দেখতে হবে পার্থক্যগুলো আসলেই অ্যান্টিভেনমের কার্যকারিতায় প্রতিফলিত হচ্ছে কি না।
অধ্যাপক ফ্রাই-এর দল এখন সাপের বিষের জিন সিকোয়েন্সিং করছেন, উত্তর ও দক্ষিণ ইস্টার্ন ব্রাউন সাপের পার্থক্যের জন্য দায়ী মিউটেশন খুঁজে বের করতে। তিনি বলেন, “আমরা দেখিয়েছি যে বিষের প্রভাবের ভৌগোলিক পার্থক্য ইস্টার্ন ব্রাউন সাপের ভেতরের এক জেনেটিক বিভাজনের সঙ্গে মিলে যায়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে খাদ্যাভ্যাসই বিষের বিবর্তনকে চালিত করে—কারণ দক্ষিণের সাপরা বেশি সরীসৃপ খায়, আর উত্তরাঞ্চলের সাপরা বেশি স্তন্যপায়ী প্রাণী খায়। এই বিষগুলোর বিবর্তনীয় সূক্ষ্মতা ও চিকিৎসাগত প্রভাব দুটোই বোঝার মাধ্যমে আমরা চিকিৎসা প্রতিক্রিয়াকে আরও কার্যকরভাবে সাজাতে পারব।

