আজকাল ওয়েবডেস্ক: মানব জিন গঠিত ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম দ্বারা। এটি আমাদের জীববৈজ্ঞানিক নকশা, অর্থাৎ আমাদের "মানুষ" করে তোলে। কিন্তু চমকপ্রদভাবে, আমাদের ডিএনএ-এর প্রায় ৮% আসলে প্রাচীন ভাইরাসের অবশিষ্টাংশ যারা মানুষের বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় নিজেদের জিনগত কোডে স্থায়ীভাবে স্থাপন করেছিল।


এই প্রাচীন ভাইরাসগুলি আমাদের ডিএনএ-এর যে অংশে থাকে, তাকে বলা হয় ট্রান্সপোজেবল এলিমেন্টস  বা “জাম্পিং জিন”। এগুলি জিনের একস্থান থেকে অন্যস্থানে কপি ও পেস্ট করতে পারে। আমাদের জিনগত উপাদানের প্রায় অর্ধেক জায়গা জুড়ে আছে এই TEs  যেগুলি একসময় “জাঙ্ক ডিএনএ” হিসেবে অবজ্ঞা করা হত। অর্থাৎ যেসব সিকোয়েন্সের কোনও জৈবিক কার্যকারিতা নেই বলে মনে করা হতো। কিন্তু এখন একটি নতুন গবেষণা এই ধারণাকে সমর্থন করছে যে  এই প্রাচীন ভাইরাসের অবশিষ্টাংশ মানব বিকাশের প্রাথমিক ধাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং সম্ভবত আমাদের বিবর্তনেও জড়িত ছিল।

আরও পড়ুন: সোনাতেও এবার ‘শুল্ক ভয়’! কী ভাবছে হোয়াইট হাউস


একটি আন্তর্জাতিক গবেষক দল TEs-এর জিন সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ করে এমন লুকানো প্যাটার্ন খুঁজে পেয়েছে যেগুলি জিন নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।  অর্থাৎ কোন জিন চালু বা বন্ধ হবে তা নির্ধারণের প্রক্রিয়া। এই গবেষণার ফলাফল ১৮ জুলাই, ২০২৫ তারিখে Science Advances জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।


আমাদের জিন বহু আগেই সিকোয়েন্স করা হয়েছিল কিন্তু এর অনেক অংশের কার্যকারিতা এখনও অজানা। এমনটাই বলেছেন এই গবেষণার সহলেখক ডঃ ফুমিতাকা ইনোউয়ে। তিনি জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাংশনাল জেনোমিক্সের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি বলেন, ট্রান্সপোজেবল এলিমেন্টস ধারণা করা হয় যে জিন বিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, এবং গবেষণা যত অগ্রসর হবে ততই এদের গুরুত্ব স্পষ্ট হবে।


TEs কীভাবে জিন প্রকাশ সক্রিয় করে তা জানলে অনেক উপকার হতে পারে। এটি বিজ্ঞানীদের বুঝতে সাহায্য করবে এই সিকোয়েন্সগুলো মানব বিবর্তনে কীভাবে ভূমিকা রেখেছে, TEs ও বিভিন্ন মানব রোগের মধ্যে কোনও যোগসূত্র আছে কিনা, কিংবা কার্যকরী TEs কীভাবে জিন থেরাপিতে ব্যবহার করা যায়। আরও গবেষণার মাধ্যমে তারা জানতে চান যে TEs, বিশেষ করে ERVs কীভাবে আমাদের মানুষ করে তুলেছে। 


আমাদের প্রাইমেট পূর্বপুরুষরা যখন ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হত তখন ভাইরাসের জিনগত তথ্য বারবার কপি হয়ে হোস্টের ক্রোমোজোমে বিভিন্ন জায়গায় প্রবেশ করে বসে যেত। প্রাচীন ভাইরাসরা অত্যন্ত দক্ষ ছিল আমাদের পূর্বপুরুষদের জিনে প্রবেশ করতে এবং তাদের অবশিষ্টাংশ এখন আমাদের জিনের একটি বড় অংশ। আমাদের জিন নানা কৌশলে এই ভাইরাসগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা অর্জন করেছে, যাতে তারা ক্ষতিকর না হয়। সাধারণভাবে এই প্রাচীন ভাইরাসগুলি বর্তমানে নিষ্ক্রিয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিকর নয়। তবে সাম্প্রতিক গবেষণাগুলি দেখিয়েছে, কিছু TEs মানব রোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। জুলাই ২০২৪-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা হয়েছে, নির্দিষ্ট TEs নীরব করে ক্যান্সার চিকিৎসাকে আরও কার্যকর করা যেতে পারে কিনা।


বিবর্তনের ধারায় কিছু ভাইরাস নষ্ট হয়ে গেছে বা বাদ পড়েছে, কিছু ভাইরাস সাধারণ শারীরবৃত্তিক অবস্থায় পুরোপুরি দমন হয়েছে। কিছু ভাইরাস ‘ঘরোয়া’ হয়ে মানুষের জিনোমে সেবা প্রদান করছে। যদিও প্রাচীন ভাইরাসকে ক্ষতিকর হিসেবে ভাবা হয়। এদের কেউ কেউ আমাদের জিনগত অংশ হয়ে উঠেছে এবং জিনোম উদ্ভাবনের কাঁচামাল হিসেবে কাজ করছে। তবে এই TEs-এর পুনরাবৃত্ত ধাঁচের কারণে সেগুলি অধ্যয়ন ও শ্রেণিবিন্যাস করা অত্যন্ত কঠিন। যদিও TEs কে ফাংশন ও সাদৃশ্য অনুযায়ী বিভিন্ন ফ্যামিলি ও সাবফ্যামিলিতে ভাগ করা হয়, তবুও অনেক সিকোয়েন্স এখনও যথাযথভাবে নথিভুক্ত ও শ্রেণিবিন্যস্ত হয়নি।