আজকাল ওয়েবডেস্ক: গাজা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তথাকথিত ‘শান্তি পরিকল্পনা’র প্রথম ধাপে ইজরায়েল  ও হামাসের মধ্যে সমঝোতার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সংস্থার মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড এক বিবৃতিতে বলেছেন, কোনো যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা তখনই অর্থবহ হবে যখন তা প্যালেস্তাইনের উপর চলমান গণহত্যার স্থায়ী সমাপ্তি ঘটাবে ইজরায়েলের।

ক্যালামার্ড বলেন, “দুই বছর ধরে আমরা এক লজ্জাজনক দ্বিচারিতা ও ভেটোর রাজনীতি দেখেছি, যা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে কার্যত অচল করে দিয়েছে—যখন পুরো পৃথিবী একটি সরাসরি সম্প্রচারিত গণহত্যা প্রত্যক্ষ করছে। এই বিভীষিকার অবসান এখন অত্যন্ত জরুরি।”

তিনি উল্লেখ করেন, “গাজা উপত্যকার দুই মিলিয়নেরও বেশি প্যালেস্তাইনে টানা দুই বছর ধরে বোমাবর্ষণ, অনাহার ও অবরোধের মধ্যে দিয়ে যে অমানবিক কষ্ট সহ্য করছে, তাদের জন্য এখন কোনো চুক্তি আসলেই অতি বিলম্বিত। কিন্তু এই অল্প বিশ্রামের মুহূর্তও তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা মুছে দিতে পারবে না। সবাই এখন তাকিয়ে আছে—এটি আদৌ স্থায়ী শান্তির সূচনা কিনা, না কি কেবল সাময়িক বিরতি।”

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রধান জোর দিয়ে বলেন, “কেবল অল্প সময়ের জন্য আক্রমণ কমানো বা সামান্য মানবিক সাহায্য প্রবেশ করানো যথেষ্ট নয়। অবিলম্বে পূর্ণ যুদ্ধবিরতি ও অবরোধ সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করতে হবে। ইজরায়েলকে খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি ও পুনর্গঠনের সামগ্রী অবাধে গাজার সব অঞ্চলে প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে। একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো পুনর্গঠনে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে অনাহারে ও বাস্তুচ্যুতিতে জর্জরিত মানুষগুলো টিকে থাকতে পারে।”

আরও পড়ুন: গাজায় গণহত্যায় নিহত ২০,১৭৯ শিশু, খাদ্য থেকে বঞ্চিত ১২ লক্ষাধিক

তিনি আরও বলেন, “যেসব প্যালেস্তাইনের মানুষ  বারবার নিজেদের ঘরছাড়া হতে বাধ্য হয়েছে, তাদের সবাইকে তাদের ভূমিতে ফিরে যাওয়ার অধিকার দিতে হবে—এবং সেই সিদ্ধান্ত ইজরায়েলের ইচ্ছাধীন হতে পারবে না।”

ক্যালামার্ড হামাসকেও আহ্বান জানান, “সব বন্দীকে মুক্তি দিতে হবে, যাতে দুই বছরের এই জিম্মি সংকটের অবসান ঘটে।” একই সঙ্গে তিনি বলেন, “ইজরায়েলকে অবিলম্বে সব নির্বিচারে আটক প্যালেস্তাইনের মানুষকে  মুক্তি দিতে হবে—বিশেষ করে যেসব স্বাস্থ্যকর্মী শুধুমাত্র তাদের রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য অন্যায়ভাবে বন্দী রয়েছেন।”

অ্যামনেস্টির মতে, কোনো স্থায়ী যুদ্ধবিরতি তখনই কার্যকর হবে যখন তা মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধার ভিত্তিতে গড়ে উঠবে। এর অন্তর্ভুক্ত হতে হবে—গাজায় ইজরায়েলের গণহত্যা বন্ধ, দখলদারিত্বের অবসান, এবং আপারথাইড বা জাতিগত বিভাজনের পুরো ব্যবস্থা ভেঙে ফেলার সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ।

অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেন, “বর্তমান পরিকল্পনা, অর্থাৎ তথাকথিত ‘ট্রাম্প শান্তি পরিকল্পনা’, এইসব মৌলিক শর্তের কোনোটিই পূরণ করে না। এটি ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার বা ক্ষতিপূরণের কোনো নিশ্চয়তা দেয় না, কিংবা অপরাধীদের জবাবদিহিও দাবি করে না। ইজরায়েল ও অধিকৃত প্যালেস্তাইনের  ভূখণ্ডে যে দীর্ঘমেয়াদি দণ্ডমুক্তির সংস্কৃতি রয়েছে, সেটিই নতুন করে হিংসার  জন্ম দিচ্ছে।”

তিনি সতর্ক করেন, “গাজার উর্বর ভূমিতে ‘নিরাপত্তা পরিধি’ বা বাফার জোন তৈরির ইজরায়েলি পরিকল্পনা বাস্তবে আপারথাইড ও দখলদারিত্ব আরও গভীর করবে। গাজাকে বাকিদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখলে প্যালেস্তাইনের মানুষের  স্বাধীন চলাচল ও রাজনৈতিক ঐক্য আরও দুর্বল হবে।”

তিনি যোগ করেন, “পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে যেসব ভূগোল ও জনসংখ্যার পরিবর্তন আনা হয়েছে, সেগুলোও অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় দখলদারিত্ব ও বৈষম্যের শিকড় আরও মজবুত হবে।”

অ্যামনেস্টির মতে, প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় প্যালেস্তাইনের মানুষের  সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা নেই। ক্যালামার্ড বলেন, “অতীতের ব্যর্থ উদ্যোগগুলোর মতো, যদি এই পরিকল্পনাও মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের মূল প্রশ্নকে উপেক্ষা করে, তবে এটি স্থায়ী শান্তি নয়—আরও অন্যায় ও অস্থিরতার সূচনা করবে।”

শেষে তিনি বলেন, “দুই বছর ধরে যে দ্বিচারিতা ও ভেটো রাজনীতি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে অচল করে রেখেছে, তা মানবতার ওপর এক কলঙ্ক। এখনই সময় এই বিভীষিকা থামানোর, যতটুকু বাকি আছে তা উদ্ধার করার এবং আমাদের যৌথ মানবতাকে রক্ষা করার।”