আজকাল ওয়েবডেস্ক: শহর হোক বা গ্রাম, ক্রমশই হারিয়ে যাচ্ছে পাড়া সংস্কৃতি। এই আবহে পাড়ার যুবকদের অঞ্চলের উন্নয়নে একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা ক্রমশই বিরল হচ্ছে। কিন্তু, গতির উল্টো পথে হেঁটেছেন কটক জেলার গুণুপুর গ্রামের একদল যুবক। গ্রামের বাচ্চাদের খেলাধুলার জন্য নিজেদের গ্য়াঁটের কড়ি খরচা করে পার্ক তৈরি করে দিয়েছেন এইসব যুবক। ফলে গ্রামের কচিকাচাদের বিকেলগুলি আর ঘরে বসে মোবাইল দেকে কাটছে না। এখন বিকেলের আসল আনন্দ পাড়ার মাঠে গিয়েই উপভোগ করতে পারছে তারা।

এলাকায় মাঠ নেই। ফলে স্কুলের পরে বেশিরভাগ শিশুই এখন নিজেদের বাড়িতে থাকে। এ বাবেই বাড়ে মোবাইল ফোনে আসক্তি। কচি শরীরেই বাসা বাঁধে নানা রোগ। একই ছবি ছিল কটক জেলার গুণুপুর গ্রামেও। এ জন্য নিজেদের অঞ্চলে মাঠ তৈরির কথা প্রশাসনের কাছে তুলে ধরেছিলেন স্থানীয় যুবকরা।

কিন্তু, শত অনুরোধেও মেলেনি কোনও সরকারি সাহায্য। তাই বসুধা সমাজ সেবক সংঘের তত্ত্বাবধানে গ্রামের ৪০ জন যুবক তাঁদের নিজস্ব পকেট থেকে অর্থ দিয়ে একটি পার্ক তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন। বসুধা সমাজ সেবক সংঘের সম্পাদক সদাশিষ সাহু জানন, দুই বছর আগে, তাঁরা গ্রামের বারুণেই ঠাকুরাণী মন্দির প্রাঙ্গণে একটা জমি তৈরি শুরু করে। যুবকরা যে যেমন পারেন, তাঁদের সাধ্যমতো ব্য়য় করেন। পার্কের জন্য সংগ্রহ করা হয় ছ'লক্ষ টাকা। 

আরও পড়ুন- ১৫ মিনিট আগেও মিলবে টিকিট, বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের রিজার্ভেশনে নয়া নিয়ম...

নিজেদের অর্থেই যুবকরা পার্কের জন্য দোলনা, স্লাইডার, বেঞ্চ এবং অন্যান্য সরঞ্জাম কিনেছিলেন। পার্কের চারপাশে হাঁটার পথ এবং লনও তৈরি করা হয়েছিল এবং ফল ও ফুলের গাছ লাগানো হয়েছিল। যুবকরা গ্রামের প্রধান দেবতা - মা বারুনেই শিশু উদ্যান - এর নামে পার্কটির নামকরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সম্প্রতি গ্রামের একজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা খিরোদ জেনা এটি উদ্বোধন করেছিলেন।

সংগঠনের সভাপতি বিচিত্রানন্দ সাহু বলেন, "আমাদের শিশুরা টেলিভিশন এবং মোবাইল ফোনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, কারণ তাদের বাইরে খেলার জন্য জায়গা ছিল না। আমরা এখন গ্রামের মানুষের জন্য ব্যায়াম করার জন্য ওপেন জিমের সরঞ্জাম স্থাপনের পরিকল্পনা করছি।" 

যুবকদের প্রচেষ্টার প্রতি আশেপাশের গ্রামের বাসিন্দারা ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছেন। অঞ্চলবাসী এখন ওই পার্কটিকে দৃঢ় ইচ্ছা এবং সম্মিলিত ইচ্ছার প্রতীক হিসেবে দেখেন। 

স্থায়ীন যুবকদের প্রচেষ্টা এখানেই শেষ হয় না। সাত বছর আগে, সংঘের সদস্যরা গ্রামের শ্মশানটিও তৈরি করেছিলেন জবরদখল হয়ে যাচ্ছিল। ফলে শ্মশানের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে বসেছিল। শ্মশানকে দখলমুক্ত করার পর, যুবকরা এখন একটি কংক্রিটের শেড তৈরি করেছে, একটি নলকূপ বসানো হয়েছে, নিম ও আম গাছ লাগিয়েছে, শ্মশানে ব্যারিকেডিং এবং আলোকসজ্জা করেছে।