আজকাল ওয়েবডেস্ক: সম্প্রতি দিল্লির এক যুবতী তাঁর পেশাগত জীবনের এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেছেন। জানা গিয়েছে,একজন অভিজ্ঞ মার্কেটিং পেশাজীবী প্রজ্ঞা দিল্লির একটি পরিচিত কনজ্যুমার ব্র্যান্ডে চিফ মার্কেটিং অফিসার (CMO) পদে আবেদন করেছিলেন। এরপর সাক্ষাতে তাঁর অভিজ্ঞতা এতটাই হতাশাজনক ছিল যে, সেটি তিনি লিঙ্কডইনে শেয়ার করে পুরোটা বিস্তারিত জানিয়েছেন। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রজ্ঞা জানিয়েছেন, কোম্পানির ম্যানেজারের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎকারটি মাত্র ১৪ মিনিট মত হয়। তিনি তাঁর নিজের প্রায় ১১ বছরের কর্মজীবনের সাফল্য, দক্ষতা, নেতৃত্বগুণ এবং অভিজ্ঞতা নিয়ে সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করেছিলেন। খবর অনুযায়ী সাক্ষাৎকার যিনি নিচ্ছিলেন তিনি তাঁর পেশাগত বিষয় নিয়েই কোনও প্রশ্ন করেননি। বরং তাঁকে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। যেমন তাঁর পরিবারের সদস্য কারা, তাঁর সন্তানের বয়স কত, তারা কোন স্কুলে পড়ে, তাঁর অনুপস্থিতিতে কে তাদের দেখাশোনা করবে এবং প্রতিদিন গুরগাঁও অফিসে যাতায়াত কীভাবে করবেন ইত্যাদি৷ 

এই ধরণের প্রশ্ন থেকে প্রজ্ঞার ধারণা হয়, তাঁকে তাঁর পেশাগত যোগ্যতা দিয়ে নয়, বরং তাঁর পারিবারিক দায়িত্ব দিয়ে বিচার করা হচ্ছে। সাক্ষাৎকার শেষ হতেই তিনি বুঝে যান যে, তাঁর আবেদন সম্ভবত গ্রহণযোগ্য হবে না উক্ত অফিসে। পরদিন তিনি কোম্পানির এইচ আর-এর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁকে জানানো হয়, তাঁর আবেদন বাতিল করা হয়েছে। কারণ জানতে চাইলে এইচ আর স্পষ্ট জানায়, তাঁর 'খুব ছোট বাচ্চা আছে' – এটাও একটি বড় কারণ।

আরও পড়ুনঃ জনপ্রিয় 'ইউটিউবার' এবার কাজ থেকে বিরতি নিতে চাইছেন! কী বললেন তিনি? জানুন......

ঘটনার জেরে প্রজ্ঞা বলেন, প্রত্যাখ্যান তাঁকে কষ্ট দেয়নি, বরং যে পদ্ধতিতে এবং যেসব ব্যক্তিগত প্রশ্নের ভিত্তিতে তাঁর মূল্যায়ন করা হয়েছে, সেটিই তাঁকে মর্মাহত করেছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের এই চিত্র কেবল তাঁর একার নয়। তাঁর অনেক বন্ধুও একই ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন। কেউ প্রমোশন পাননি, কেউ নামমাত্র বেতন বৃদ্ধি পেয়েছেন। আবার কাউকে ‘সহজ’ প্রকল্পে বসিয়ে রাখা হয়েছে, যাতে চ্যালেঞ্জিং কাজ বা নেতৃত্বে আসার সুযোগ না থাকে।

সর্ব ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে প্রজ্ঞা তাঁ দীর্ঘ কর্মজীবনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ডাইভারসিটি অ্যান্ড ইনক্ল্যুশন (Diversity & Inclusion (D&I)এবং পিওএসএইচ (Prevention of Sexual Harassment) কমিটিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাই কর্পোরেট সংস্কৃতির ভেতরকার বৈষম্য তিনি ভালোভাবেই বুঝতে পারেন। তিনি বলেন, বহু প্রতিষ্ঠানেই এখনও নেতৃত্বে পুরুষদের আধিপত্য দেখা যায়। এর পাশাপাশি মা হওয়াকে একটি নেতিবাচক বিষয় হিসেবে দেখা হয়। যা পেশাগত মূল্যায়নে কোনোভাবেই প্রাসঙ্গিক নয়।

এই পোস্টটি ভাইরাল হওয়ার পর বহু মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কর্পোরেট জগতে মহিলাদের প্রতি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করেন। অনেকে বলেন, একজন মহিলা মা হওয়ার পাশাপাশি একজন দক্ষ, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং উচ্চপদে কাজ করার যোগ্য পেশাজীবীও হতে পারেন। শুধুমাত্র তাঁর পারিবারিক দায়িত্বের কারণে তাঁর পেশাগত সম্ভাবনাকে খাটো করে দেখা একেবারেই অন্যায়। আবার কেও মন্তব্য করে বলেন, 'এই ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করে, কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য এখনও অনেক অদৃশ্য বাধা বিরাজ করছে, যা পেশাগত সমতার পথে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।'