আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০১৭ সালে উন্নাওয়ে ধর্ষিতার মাকে নয়াদিল্লিতে প্রতিবাদে বাধা দিল আধাসামরিক বাহিনী। তাঁকে শারীরিকভাবে হেনস্থা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। ধর্ষণকাণ্ডে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বহিষ্কৃত বিজেপি নেতা কুলদীপ সিংহ সেঙ্গারের সাজা স্থগিত হওয়া এবং জামিন মঞ্জুরের প্রতিবাদে মঙ্গলবার ইন্ডিয়া গেটে প্রতিবাদে বসেছিলেন নির্যাতিতা, তাঁর মা এবং সমাজকর্মী যোগিতা ভায়ানা। পুলিশ তাঁদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।
মঙ্গলবার দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি সুব্রমনিয়ম প্রসাদ এবং বিচারপতি হরিশ বৈদ্যনাথন শঙ্করের বেঞ্চ ব্যক্তিগত ১৫ লক্ষ টাকার বণ্ডে ধর্ষণকাণ্ডে কুলদীপের জামিন মঞ্জুর করে। মঙ্গলবার পুলিশ তাঁদের ইন্ডিয়া গেটের সামনে থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর তাঁরা ঠিক করেছিলেন মান্ডি হাউসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, তাঁরা যে সিআরপিএফ-এর প্রহরাধীন বাসে ভ্রমণ করছিলেন, সেটি নির্ধারিত স্থানে থামেনি।
সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, আধিকারিকদের মতে, মান্ডি হাউস বা ইন্ডিয়া গেটে বিক্ষোভের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়নি এবং ওই দু’জনকে হয় যন্তরমন্তর অথবা তাঁদের বাসভবনে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। পরে, নির্যাতিতার মা চলন্ত বাস থেকে ঝাঁপ দেন বলে অভিযোগ। সিআরপিএফ কর্মীদের ওই বৃদ্ধা মহিলাকে ধাক্কা দিতে ও কনুই দিয়ে গুঁতোতে দেখা যায়, এরপর তিনি বাস থেকে নেমে যান এবং বাসটি নির্যাতিতাকে ভিতরে নিয়েই চলে যায় সেখান থেকে। উল্লেখযোগ্যভাবে, নির্যাতিতা ও তাঁর মাকে বহনকারী বাসটিতে কোনও মহিলা সিআরপিএফ কর্মী উপস্থিত ছিলেন না।
সংবাদ সংস্থা এএনআই নির্যাতিতার মায়ের বয়ান উদ্ধৃত করে তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নির্যাতিতার বৃদ্ধা মা বলেন, “আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। তারা আমার মেয়েকে বন্দির মতো করে নিয়ে যাচ্ছে। এই নিরাপত্তাকর্মীরা আমাদের সবাইকে মেরে ফেলতে চায়। কুলদীপ সেঙ্গারের জামিন বাতিল করা উচিত; না হলে আমরা জীবন দিয়ে দেব। আমরা নিরাপদ নই।”
যোগিতা এই ঘটনাকে ন্যায়বিচারের এক গুরুতর লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “এটা কি ন্যায়বিচার? ভুক্তভোগীর মাকে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। তিনি কাঁদছেন এবং আমাদের ফোন করছেন। এটা কি কোনও দেশ না কি অন্য কিছু? নির্যাতিতা মেয়েটি বাসের মধ্যে একা, তাঁকে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরানো হচ্ছে।”
২০১৭ সালের উন্নাও ধর্ষণ মামলায় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে নিম্ন আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন কুলদীপ। তিনি সেই রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করেছিলেন। মামলার শুনানি আগামী মাসে শুরু হওয়ার কথা। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাই কোর্ট কুলদীপের সাজা স্থগিত রেখেছে।
আদালত অবশ্য জানিয়েছে যে, আপিল সংক্রান্ত শুনানির সময়কাল পর্যন্তই সাজা স্থগিত থাকছে। তাঁর উপর বেশ কিছু শর্তারোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে নির্যাতিতার বাসস্থানের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে প্রবেশ করতে পারবেন না সেঙ্গার। নির্যাতিতার পরিবারকে কোনও ভাবে হুমকি দেওয়া, প্রভাবিত বা যোগাযোগ করতে পারবেন না। প্রতি সপ্তাহে থানায় হাজিরা দিতে হবে। শর্তগুলির একটিও লঙ্ঘিত হলে জামিন বাতিল করা হবে।
