আজকাল ওয়েবডেস্ক: দেশে কমেছে মিড-ডে মিল দেয় এমন স্কুলের সংখ্যা। গত বুধবার কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী রাজ্যসভায় এই তথ্য জানিয়েছেন। সেই তথ্য অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী পোষণ শক্তি নির্মাণ বা পিএম পোষণ (আগের মিড-ডে মিল) প্রকল্পের আওতায় থাকা স্কুলের সংখ্যা ২০২০-২১ সালে ছিল ১১.১৯ লক্ষ। ২০২৪-২৫ সালে সেই সংখ্যা ১০.৩৫ লক্ষে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ পাঁচ বছরে মোট ৮৪,৪৫৩টি স্কুল বা প্রায় ৭.৫ শতাংশ স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি কমেছে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে।

আম আদমি পার্টির সাংসদ সঞ্জয় সিংয়ের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জয়ন্ত চৌধুরীর দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায় যে, সবচেয়ে বেশি স্কুল বন্ধ হয়েছে ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ সালের মধ্যে। ওই সময় প্রকল্পের আওতাভুক্ত স্কুলের সংখ্যা ১১.১৯ লক্ষ থেকে কমে ১০.৮৪ লক্ষ হয়েছে। অর্থাৎ, এক বছরে ৩৫,৫৭৪টি স্কুল বন্ধ হয়েছে। শতাংশের হিসাবে ৩.১৮ শতাংশ। এর পরে স্কুল বন্ধের গতি ধীর হয়ে আসে। ২০২২-২৩ সালে বন্ধ হওয়া স্কুলের সংখ্যা সামান্য কমে ১০.৭৬ লক্ষে দাঁড়ায়, অর্থাৎ ৭,৬০৪টি স্কুল বা ০.৭ শতাংশের কম। ২০২৩-২৪ সালে আরও কমে ১০.৬৭ লক্ষে নেমে আসে, অর্থাৎ ৯,৫০৯টি স্কুল বা ০.৮৮ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ সালে স্কুলের সংখ্যা কমে ১০.৩৫ লক্ষে দাঁড়ায়। অর্থাৎ  এক বছরে ৩১,৭৬৬টি স্কুল বা ২.৯৮ শতাংশ স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

উত্তরপ্রদেশে এই প্রকল্পের আওতায় থাকা সবচেয়ে বেশি স্কুল বন্ধ হয়েছে। ২০২০-২১ সালে এই প্রকল্পের অধীনে থাকা স্কুলের সংখ্যা ছিল ১.৬৭ লক্ষ। ২০২৪-২৫ সালে যা ১.৪১ লক্ষে নেমে এসেছে। অর্থাৎ ২৫,৩৬১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে। এর পরেই ছিল মধ্যপ্রদেশ। যেখানে প্রকল্পের আওতায় থাকা স্কুলের সংখ্যা ১.১২ লক্ষ থেকে কমে ৮৮,২০৪-এ দাঁড়িয়েছে, অর্থাৎ ২৪,৭০৪টি স্কুলের বন্ধ হয়েছে। আসামেও সংখ্যাটি ৫৩,৪২৭টি থেকে কমে ৪৪,১০৬টি স্কুলে দাঁড়িয়েছে। ৯,৩২১টি কম। এই তিনটি রাজ্য মিলেই গত পাঁচ বছরে পিএম পোষণ প্রকল্পের আওতা থেকে বাদ পড়া ৮৪,৪৫৩টি স্কুলের মধ্যে প্রায় ৫৯,৪০০টির জন্য দায়ী।

ইউনিফায়েড ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন প্লাস (UDISE+) এর তথ্য অনুযায়ী, সরকারি স্কুলের সংখ্যা ২০২০-২১ সালের ১০.৩২ লক্ষ থেকে কমে ২০২৪-২৫ সালে ১০.১৩ লক্ষে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ ১৮,৭২৭টি স্কুল বন্ধ হয়েছএ বা প্রায় ১.৮ শতাংশ কমেছে। সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের সংখ্যা আরও তীব্রভাবে কমেছে, একই সময়ে ৮৪,২৯৫ থেকে কমে ৭৯,৩৪৯ হয়েছে। অর্থাৎ ৪,৯৪৬টি স্কুল বন্ধ হয়েছে। শতাংশের হিসাবে প্রায় ৫.৯ শতাংশ।

শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী স্কুল বন্ধ হওয়ার নির্দিষ্ট কারণ কিছুই জানাননি। তবে তিনি বলেছেন যে, “যোগ্য শিশুদের গরম রান্না করা ও পুষ্টিকর খাবার সরবরাহের সার্বিক দায়িত্ব রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসনগুলোর ওপর বর্তায়।” তিনি আরও বলেন, “এই প্রকল্পের অধীনে, শিশুদের বছরে গড়ে ২২০ দিন খাবার পরিবেশন করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায়, ১১ কোটি শিক্ষার্থীর নাম নথিভুক্ত রয়েছে। সব রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১০.৩৫ লক্ষেরও বেশি স্কুলে প্রতিদিন গড়ে ৮.৫ কোটি শিক্ষার্থী গরম রান্না করা খাবার পাচ্ছে।”

এপ্রিল মাসে কেন্দ্রীয় সরকার প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শ্রেণির (প্রথম থেকে পঞ্চম) শিক্ষার্থীদের জন্য মিড-ডে মিলের উপকরণের খরচ মাথাপিছু প্রতিদিন ৬.১৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬.৭৮ টাকা করেছে। উচ্চ প্রাথমিক শ্রেণির (ষষ্ঠ থেকে অষ্টম) শিক্ষার্থীদের জন্য তা ৯.২৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০.১৭ টাকা করেছে।

কেন্দ্র ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে পিএম পোষণ প্রকল্পের জন্য ১২,৪৬৭.৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল, যা পরে সংশোধন করে ১০,০০০ কোটি টাকা করা হয়। তবে, ২৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ৫,৪২১.৯৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের কেন্দ্রীয় বাজেটে এই প্রকল্পের জন্য ১২,৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এবং রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির সহযোগিতায় বাস্তবায়িত প্রধানমন্ত্রী পোষণ শক্তি নির্মাণ (পিএম পোষণ) প্রকল্পটির অধীনে সারা দেশের সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে বাল বাটিকা (প্রথম শ্রেণির পূর্বে) এবং প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একবেলা গরম রান্না করা খাবার দেওয়া হয়।