আজকাল ওয়েবডেস্ক: দেহরাদুনে জাতিবিদ্বেষী হিংসার শিকার হয়ে প্রাণ হারালেন ত্রিপুরার ২৪ বছরের ছাত্র অ্যাঞ্জেল চাকমা। গ্রাফিক এরা হাসপাতালের মেডিক্যাল রিপোর্টে তাঁর ওপর চালানো নৃশংস হামলার ভয়াবহতা স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। ইন্ডিয়া টুডে টিভি-র হাতে আসা ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, অ্যাঞ্জেলের পিঠে ও মাথার পেছনের অংশে গভীর ক্ষত ছিল। পায়ে একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়, তাঁর দেহের ডান দিক সম্পূর্ণভাবে অবশ হয়ে গিয়েছিল, উপরের ও নীচের দুই অঙ্গেই শক্তি ছিল না এবং সংবেদনশীলতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। চিকিৎসকদের মতে, তাঁর স্পাইনাল কর্ডে গুরুতর আঘাত লেগেছিল এবং মস্তিষ্কে ফিশার বা ফাটল তৈরি হয়েছিল।

এই মর্মান্তিক ঘটনার সূত্রপাত হয় গত ৯ ডিসেম্বর, দেহরাদুনের সেলাকুই থানা এলাকার একটি রাস্তার ধারের ক্যান্টিনে। অভিযোগ, অ্যাঞ্জেল চাকমা ও তাঁর ভাই মাইকেল চাকমার উদ্দেশ্যে  একদল মদ্যপ যুবক জাতিবিদ্বেষী ও বর্ণবাদী মন্তব্য করতে শুরু করে। তার প্রতিবাদ করায় পরিস্থিতি দ্রুত হাতাহাতিতে পরিণত হয়। ওই সময় অ্যাঞ্জেলের ওপর ধারালো অস্ত্র ও লোহার কড়া দিয়ে আক্রমণ চালানো হয়। মাথা ও পিঠে প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলেই তিনি লুটিয়ে পড়েন।

গুরুতর অবস্থায় তাঁকে গ্রাফিক এরা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রায় ১৭ দিন ধরে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ২৬ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়। দেহরাদুনের এসএসপি অজয় সিং জানিয়েছেন, অভিযুক্তরা সকলেই মদ্যপ অবস্থায় ছিল এবং কয়েক মিনিটের মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। অ্যাঞ্জেলের মৃত্যুর পর পুলিশ মামলায় খুনের ধারা যুক্ত করেছে।

ঘটনার পর অ্যাঞ্জেলের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ এফআইআর দায়ের করে এবং একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়। এখনও পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হল অবনীশ নেগি, শৌর্য রাজপুত, সূরজ খ্বাস, সুমিত ও আয়ুষ বারোনি। এদের মধ্যে দু’জন নাবালক, যাদের পাঠানো হয়েছে জুভেনাইল হোমে। পুলিশ জানিয়েছে, আরও একজন অভিযুক্ত পলাতক রয়েছে, যিনি নেপালে পালিয়ে গিয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাঁর সন্ধানে ২৫ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে এবং একটি বিশেষ দল সীমান্ত এলাকায় পাঠানো হয়েছে।

ঘটনাটি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে উত্তরাখণ্ড সরকার। মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি এই হামলাকে “সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য” বলে উল্লেখ করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত এখনও চলছে এবং ঘটনার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।