আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তরপ্রদেশে সম্প্রতি এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। ফিরোজাবাদ জেলার শিকোহাবাদ এলাকার মাখনপুর থানার অন্তর্গত জেবদা গ্রামে এই ভয়াবহ ঘটনাটি ঘটেছে। সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে গ্রামের দুই তরুণী, একসঙ্গে রেললাইনে ঝাঁপিয়ে নিহত হন। নেতাজি এক্সপ্রেস ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন তাঁরা। জানা গিয়েছে এই দুই তরুণী তুতো বোন ছিলেন। দুজনেই শিক্ষার্থী ছিলেন। রাশ্মি যাদব (১৮) দ্বাদশ শ্রেণিতে এবং মুস্কান যাদব (১৭) একাদশ শ্রেণিতে পড়তেন। এই ঘটনা ঘিরে তীব্র শোরগোল রাজ্যজুড়ে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে তাঁরা বাড়ি থেকে একসঙ্গে বেরোন। বেরোনোর সময় পরিবারের সদস্যদের জানান যে তাঁরা বাজারে যাচ্ছেন বই কিনতে। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই খবর আসে, তাঁরা ট্রেন লাইনের দিকে চলে গিয়েছেন। এরপর মাখনপুর রেল ইয়ার্ডের কাছাকাছি একটি স্থানে দুই বোন একসঙ্গে রেললাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন।
জানা গিয়েছে, ঠিক সেই সময় হাওড়াগামী নেতাজি এক্সপ্রেস ট্রেনটি কালকা থেকে আসছিল। এমনকি ট্রেন চালক বারবার হর্ন বাজিয়ে সতর্ক করার চেষ্টা করলেও, তাঁরা লাইন ছাড়েননি। দুই বোন একে অপরের হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই তাঁদের মৃত্যু হয়। ধাক্কার তীব্রতায় তাঁদের দেহ ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দুর্ঘটনার পর ট্রেনটি প্রায় ১০ মিনিট থেমে থাকে। পরে রেল পুলিশ (GRP) ও রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স (RPF) দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। তারা মৃতদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য স্থানীয় মেডিক্যাল কলেজে পাঠায়।
পরবর্তীতে রেল পুলিশের টিম রাশ্মির ভাই মোহিত যাদবের মাধ্যমে তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত করে। মোহিত জানান, তাঁরা শুধু বলেছিলেন বাজারে যাবেন, কিন্তু কীভাবে বা কেন তাঁরা রেললাইনের দিকে গেলেন, তা নিয়ে পরিবারের কেউ কিছু জানেন না। মোহিত দাবি করেন যে বাড়িতে কোনও ঝগড়া বা অশান্তির ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে রেল পুলিশ বাহিনী শিকোহাবাদ আউটপোস্টের ইনচার্জ হরিশ কুমার যাদব জানান, দুই বোন রাগ করে বাড়ি ছেড়েছিলেন। কী কারণে তাঁরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। পুলিশ বলছে, তরুণীদের পরিবারের সদস্যরা তদন্তে সহযোগিতা করছেন না এবং কোনওরকম তথ্য দিতে চাইছেন না।
সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছে, পরিবারে রাশ্মি, মুস্কান, মোহিত ছাড়াও আরও দুই বোন রয়েছেন। রাশ্মি ছিলেন ভাইবোনদের মধ্যে সবচেয়ে বড়। দুই তরুণীর এই আকস্মিক মৃত্যুতে শুধু তাঁদের পরিবার নয়, গোটা জেবদা গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। প্রতিবেশীরা মর্মাহত ও হতবাক।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এই দুই তরুণী অত্যন্ত শান্ত প্রকৃতির ছিলেন। তাঁদের ব্যবহার খুবই শান্ত ও ভদ্র। এহেন চরম সিদ্ধান্ত তাঁরা কেন নিলেন, তা কেউই বুঝে উঠতে পারছেন না। কেউ কেউ মনে করছেন, হয়তো পারিবারিক বা ব্যক্তিগত কোনও চাপ ছিল, যা নিয়ে তাঁরা কাউকে কিছু বলেনি।
বর্তমানে স্থানীয় প্রশাসন ঘটনার পূর্ণ তদন্ত করছে। এই ঘটনার পেছনে অন্য কোনও গভীর কারণ আছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে তাও৷ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷
এই মর্মান্তিক ঘটনায় আবারও প্রশ্ন উঠেছে তরুণ তরুণীদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে পরিবার ও সমাজের নজর দেওয়ার বিষয়ে। স্থানীয় প্রশাসন বলেছে, ঘটনার পেছনের আসল কারণ জানতে তল্লাশি চালাচ্ছে তারা। যত দ্রুত সম্ভব প্রকৃত তথ্য বের করার চেষ্টা করা হবে।
এদিকে পরিবারের সদস্যরা শোকে ভেঙে পড়েছেন। খবর অনুযায়ী কেউই সংবাদমাধ্যম কিংবা পুলিশকে বিস্তারিত কিছু জানাতে চাইছেন না। তাঁদের মানসিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র।
