আজকাল ওয়েবডেস্ক: সম্পর্কে ফাটল। যে দু’ জন একটা সময় ভেবেছিলেন তাঁরা একসঙ্গেই কাটিয়ে দেবেন গোটা জীবন, কিছুটা পথ পেরিয়ে তাঁদের মনে হয়েছে সিদ্ধান্ত ভুল। আর একসঙ্গে থাকতে পারছেন না তাঁরা। অনেক সময় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর সঙ্গী বুঝতে পারেন, অন্যের সঙ্গে মনের মিল হচ্ছে না সেভাবে, যাতে থাকা যায় এক ছাদের তলায়। আবার অনেকসময় সঙ্গীর অন্য সম্পর্ক, স্বাভাব বাধা হয়ে দাঁড়ায় সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। অনেকেই চেষ্টা করেন, পুনরায় একসঙ্গে থাকার। যখন একেবারেই তা আর সম্ভব হয় না, তিক্ততা-সহ নানা কারণে সম্পর্কে দাঁড়ায় একেবারে খাদের কিনারায়, তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বিবাহ বিচ্ছেদের। অনেকেই সঙ্গীর বিরুদ্ধে শারীরিক, মানসিক হেনস্থার অভিযোগ তোলেন।

আরও পড়ুন: ভারতে তাপপ্রবাহের সংকট: বাড়ছে তাপমাত্রা, বাড়ছে শ্রমিকের মৃত্যু, জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন কাঠামোগত ও নীতিগত সংস্কার...


মামলা গড়ায় আদালতে। কিছুক্ষেত্রে দু’ জনের সম্মতিতে বিচ্ছেদ হয়। কিছু ক্ষেত্রে একজন সঙ্গী অপর সঙ্গীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এই মামলা প্রসঙ্গেই সোমবার বড় সিদ্ধান্ত জানিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে তেমনটাই। কী বলা হয়েছে তাতে? সূত্রের খবর, একটি মামলা প্রসঙ্গে সোমবার দেশের শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, বৈবাহিক বিরোধের মামলায় স্বামী/স্ত্রীর গোপনে রেকর্ড করা টেলিফোন কথোপকথন গ্রহণযোগ্য প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হবে। এই প্রসঙ্গেই পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের একটি রায় বাতিল করে দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত।

সুপ্রিম কোর্টে মামলা আসার আগে, ওই দুই আদালত এই একই প্রসঙ্গে কী জানিয়েছিল? যা খারিজ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট? সূত্রের খবর, পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার আদালত জানিয়েছিল, গোপনে স্বামী/স্ত্রীর টেলিফোন কথোপকথন রেকর্ড করা গোপনীয়তার লঙ্ঘন এবং এতে বিপন্ন হতে পারে পারিবারিক জীবন। এগুলি পারিবারিক আদালতে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। যদিও ওই যুক্তি মানেনি দেশের শীর্ষ আদালত। সূত্রের খবর তেমনটাই। 

 

সূত্রের খবর, বিচারপতি বিভি নাগরত্ন এই মামলা প্রসঙ্গে বলেন, কিছু যুক্তিতে বলা হয়েছে যে, এই ধরনের কথোপকথনকে প্রমাণ হিসেবে অনুমোদন দিলে পারিবারিক সম্প্রীতি এবং বৈবাহিক সম্পর্ক বিপন্ন হবে এবং স্বামী/স্ত্রীর একে অন্যের উপর কারণে বা অকারণে নজরদারি করাকে উৎসাহিত করা হবে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, ‘আমরা মনে করি না যে এই ধরনের যুক্তির কোনও শক্ত ভিত রয়েছে। যদি বিবাহ এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যেখানে স্বামী/স্ত্রীকে একে অপরের উপর সক্রিয়ভাবে নজরদারি করে, তাহলে এই বিষয়গুলই যথেষ্ট এটি বোঝার জন্য যে, সেটি ততদিনে একটি ভাঙ্গা সম্পর্কে পরিণত হয়েছে। সম্পর্কের মাঝে আস্থার অভাব লক্ষণীয় স্পষ্টতই। 

যে মামলার শুনানিতে এই পর্যবেক্ষণ এবং রায়, তার সূচনা ভাতিন্ডার একটি পারিবারিক আদালত থেকে। ওই আদালতে প্রথম যে বিষয়টি উঠে আসে, তা হল ১৯৫৫ সালের হিন্দু বিবাহ আইনের ১৩ ধারার অধীনে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা। ওই মামলায় স্বামী তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে নিষ্ঠুরতার অভিযোগ এনেছিলেন এবং তার অভিযোগ প্রমাণের জন্য রেকর্ড করা ফোন কথোপকথনের উল্লেখ করেছিলেন। 

 

পারিবারিক আদালত প্রমাণ হিসেবে এই রেকর্ডিং সহ একটি সিডি অনুমোদন করে। স্ত্রী হাইকোর্টে এই মামলার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে যুক্তি দেন যে, তার সম্মতি ছাড়াই কলগুলি রেকর্ড করা হয়েছে এবং এগুলি প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা তার গোপনীয়তার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করেছে। হাইকোর্ট পারিবারিক আদালতের আদেশের সঙ্গে একমত হয়ে তা বাতিল করে দেয়। ওই আদালত যে রায় দেয়, স্বামী ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে যান। তার পরেই শীর্ষ আদালত ওই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।