আজকাল ওয়েবডেস্ক: গোয়ার এক প্রৌঢ়া মারিয়া গোমেজ। তাঁকে স্নেহভরে ‘মারিয়া আন্টি’ নামেও ডাকা হয়। সম্প্রতি তাঁর একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। তিনি নিঃশব্দে দেখিয়ে চলেছেন প্রকৃত সহানুভূতির আসল রূপ কী। এটি ঠিক এমন সময়ে ঘটে, যখন সারা দেশে অবহেলিত পথকুকুরদের নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। এমন সময়ে মারিয়া নিজের জীবনের প্রতিটি দিন উৎসর্গ করছেন এমনই কিছু পথকুকুরদের খেয়াল রাখার জন্য।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন ভোরবেলা যখন বেশিরভাগ মানুষ সাধারণত ঘুমিয়ে থাকেন, তখন মারিয়া তাঁর রান্নাঘরে কাজে লেগে পড়েন। বড় বড় হাঁড়িতে রান্না করেন ভাত, মাংস ও সবজি। কারণ কী জানেন?রান্না শেষ হলে খাবারগুলো সাইকেলে করে তিনি রওনা দেন একটি বিশেষ উদ্দেশে। তা আর কিছু নয়, পথের বেওয়ারিশ কুকুরদের খাবার খাইয়ে বেড়ান। এক গলি থেকে আরেক গলি, এক রাস্তা থেকে আরেক রাস্তায় ঘুরে ঘুরে তিনি এই কাজ সম্পন্ন করেন৷
জানা গিয়েছে, দূর থেকে যেই কুকুরগুলো মারিয়াকে দেখে, সঙ্গে সঙ্গে তারা মহানন্দে লেজ নাচাতে থাকে। কেউ কেউ আনন্দে তাঁর সাইকেলের পেছনে পেছনে দৌড়ায়, কেউ আবার শান্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকে নিজের পালা আসার অপেক্ষায়। আবার কিছু কুকুর তাঁর সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে কিছুটা পথ বাড়িও ফেরে।
সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, মারিয়ার জীবন কখনওই খুব একটা সহজ ছিল না। এমনকি ছোটবেলায় তাঁকে শ্রমিক হিসেবে দিনের পর দিন কাজ করতে হয়েছিল পরিবারের জীবিকা নির্বাহে সাহায্য করার জন্য। সেই কঠিন সময় তাঁকে ভেতর থেকে শক্ত হতে শেখালেও, তাঁর হৃদয় বরাবরই কোমল ও দয়ার্দ্র থেকে গিয়েছে। জীবনের সংগ্রাম তাঁকে আরও বেশি সহানুভূতিশীল করে তোলে।
এক সময় তিনি লক্ষ্য করেন, আশপাশে অনেক পথকুকুর আছে, যারা রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। অপুষ্ট, অনাহারে কাতর তারা। তখন থেকেই তাঁর ভেতর একরকম তাগিদ জন্মায় কিছু একটা করার। এই যাত্রা তাঁর কাছে খুব সহজ ছিলনা। প্রথমে অল্প সংখ্যক কুকুরকে খাওয়ানো দিয়ে শুরু করেন তিনি। ধীরে ধীরে সেই সংখ্যা বাড়তে বাড়তে এখন দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০-র বেশি। বর্তমানে সেই কুকুরগুলোর জন্য তিনি শুধু খাবারই দেন না, একইসঙ্গে দেন ভালোবাসা, আদর, এবং কিঞ্চিৎ নিরাপত্তা। এটি ওদের কাছে পরিবারের মতোই।
সাম্প্রতিককালে দেশের এহেন প্রেক্ষাপটে যেখানে পথকুকুর কেবল রাজনৈতিক আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে প্রৌঢ়া মারিয়ার এই নিঃশব্দ কর্ম একদম ভিন্ন একটি উদাহরণ। তিনি সরকারের কোনও স্কিম, চ্যারিটি বা সোশ্যাল মিডিয়ায় খ্যাতির অপেক্ষায় থাকেন না। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর একমাত্র লক্ষ্য তাঁর এলাকায় যেন কোনও কুকুর খিদে নিয়ে না থাকে। আর সেই কাজটি তিনি করেন প্রতিদিন, একটানা। এমনকি কোনওরকম কোনও বিরতি ছাড়া তিনি এই কাজ করে যান।
তাঁর এই নিত্যদিনের রুটিনের ভিডিও সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। মানুষ মারিয়ার অটলতা ও দয়ার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ঘটনার প্রেক্ষিতে অনেকেই বলছেন, একজন মানুষের একটানা নিষ্ঠা কীভাবে শত শত প্রাণের জীবন বদলে দিতে পারে, মারিয়া তাঁর জীবন্ত উদাহরণ।
এই ঘটনা সামনে এসেছে এমন এক সময়, যখন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ১১ আগস্ট দিল্লি-এনসিআর এলাকায় থাকা সব পথকুকুরকে আট সপ্তাহের মধ্যে তুলে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে এবং তাদের জন্য উপযুক্ত শেল্টার তৈরির নির্দেশও দিয়েছে কর্তৃপক্ষকে। এই আদেশকে অনেকেই জনসুরক্ষার স্বার্থে প্রয়োজনীয় বললেও, প্রাণী অধিকার কর্মীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। যথেষ্ট আশ্রয়কেন্দ্রের অভাব, দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং এর ফলে মানুষ ও কুকুরের মধ্যে বিরোধ আরও বাড়ার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
এহেন বিতর্কের মাঝেই মারিয়ার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা এবং নীরব সেবা মনে করিয়ে দেয়- প্রকৃত পরিবর্তন কখনও জোর করে নয়, বরং ভালোবাসা ও নিষ্ঠা দিয়েই সম্ভব।
