আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০২৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপে ভোট পড়ল ৬৪.৬৬ শতাংশ (বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত, এই হার আরও বাড়তে পারে)। ভোটকেন্দ্রকে ভোটারদের এই হাজিরা ২০২০ সালের নির্বাচনের প্রথম ধাপের তুলনায় প্রায় ৮ শতাংশ বেশি, সামগ্রিক ভোটদানেরের চেয়ে ইতিমধ্যেই এবার ৬ শতাংশ বেশি ভোট পড়ছে। করোনা আবহে বিবারে ২০২০ সালে বিধানসভা নির্বাচন হয়েছিল।
- প্রতিবেদন লেখার সময়ে বিহারে প্রথম পর্যায়ে ভোট দানের হার ৬০ শতাংশের সামান্য বেশি পড়েছিল।
বর্ধিত ভোটার উপস্থিতি তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ রাজ্যের ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন হয়েছে। বিরোধীরা কমিশনের এই পদক্ষেপকে বিতর্কিত একটি প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করেছে। বিরোধীদের দাবি, এসআইআর-এর ফলে দরিদ্র ও প্রান্তিক গোষ্ঠীর ভোটারদের ভোটাধিকার বঞ্চিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এসআইআর-এর ফলে বিহারে প্রায় ৬৫ লাখ ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। বিরোধীদের দাবি, বাতিলদের মধ্যে ৪৭ লক্ষ তাদের অনুগামী ভোটার।
এসআইআর-এর আগে বিহারে ভোটার ছিল৭.৮৯ কোটি, পরে যা কমে দাঁড়িয়েছে ৭.৪২ কোটিতে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে এসআইআর-এর ফলেই মোচ ভোটার কমেছে, এবং প্রকৃত ভোটারা ভোট দিচ্ছেন। ফলে শতাংশের বিচারে ভোারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, ধরে এসআইআর-এর আগে ১০০ জনের মধ্যে ৬০ জন ভোট দিয়েছিলেন, যেখানে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশ। এসআইআর-এর পরে, যোগ্য ভোটারের সংখ্যা ৮০-তে নেমে এসেছে। যদি একই ৬০ জন ভোট দেন, তাহলে ভোটারের উপস্থিতি হবে ৭৫ শতাংশ। তবে, যদি মাত্র ৪০ জন ভোট দেন, তাহলে সংখ্যাটি ৫০ শতাংশে নেমে আসবে।
এসআইআর-এর প্রভাব বাদ দিলেও, প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, উচ্চ ভোটদান ক্ষমতাবিরোধী মনোভাব নির্দেশ করে। এদিকে ইস্তেহারে বিরোধী জোটও প্রতিটি পরিবারের জন্য একটি সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের মনজয়ের কসুর করেনি।
বিগত তিনটি বিহার নির্বাচনেও তাই হয়েছে।
- ২০১০ সালে, নীতীশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেড ভারতীয় জনতা পার্টির সঙ্গে জোট বেঁধে জয়লাভ করেছিল। ভোটার উপস্থিতি ছিল ৫২.৭৩ শতাংশ এবং জেডিইউ একাই ১১৫টি আসন পেয়েছিল।
- ২০১৫ সালে ভোটের আগে দীর্ঘকালীন শত্রু লালু যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সঙ্গে যোগ বেঁধেছিলেন নীতীশ কুমার। ভোটার উপস্থিতি ২০১০ সালের তুলনায় ৪.১৮ শতাংশ বেশি ছিল। নীতীশ-লালু জোটই ভোটে জয়লাভ করে।
- পাঁচ বছর পর, নীতীশ কুমার আবারও বিজেপি দিকে ঝুঁকে পড়েন। নীতীশ-বিজেপি জোট আবারও জয়লাভ করে, যদিও জেডিইউ ২০১৫ সালের তুলনায় তাদের আসন থেকে ২৮টি আসন পেয়েছিল। তবে জুনিয়র পার্টনার' হলেও নীতীশকেই মুখ্যমন্ত্রী করা হয়।
২০২০ সালে ভোট পড়েছিল ৫৭.২৯ শতাংশ, যা ২০১৫ সালের নির্বাচনের তুলনায় .৩৮ শতাংশ বেশি।
২০২৫ সালের নির্বাচনের প্রথম ধাপেই ভোটের হার সব পরিসংখ্যান ছাপিয়ে গিয়েছে। ভোট পড়ল ৬০ শতাংশের বেশি।
ভোট বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এই প্রবণতা বজায় থাকলে,তেজস্বী-রাহুলদের জন্য সুসংবাদ অপেক্ষা করছে।
কিন্তু উচ্চ ভোটার উপস্থিতি সর্বদা ক্ষমতা বিরোধী মনোভাব বোঝায় না। উদাহরণস্বরূপ, ছত্তিশগড়ে, ২০০৮ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ভোটার উপস্থিতি প্রায় সাত শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল, তবে ভারতীয় জনতা পার্টি উভয়বারই জিতেছে। ২০০৩ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে মধ্যপ্রদেশেও একই ঘটনা ঘটেছিল; ভোটার উপস্থিতি ৬৭.২৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭২.০৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবুও বিজেপি তিনটি নির্বাচনেই জয়লাভ করেছে।
এছাড়াও, ভোটার তালিকা সংশোধন এবং ৪৭ লক্ষ নাম বাদ দেওয়ার প্রভাব বিবেচনা করা প্রয়োজন।
বিহারে ভোটগ্রহণের আরও একটি ধাপ বাকি আছে। রাজ্যের ২৪৩টি আসনের মধ্যে মাত্র ১২১টিতে আজ ভোট পড়েছে। বাকি ১২২টি আসন আগামী সপ্তাহে, ১১ নভেম্বর ভোট হবে। ১৪ নভেম্বর ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
