আজকাল ওয়েবডেস্ক:  বিহারে ভোটার তালিকা থেকে ৬৫ লক্ষ নাম বাদ যাওয়ার ঘটনায় নির্বাচন কমিশনকে কড়া নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। বিহারের SIR করার পর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে এই তালিকা থেকে যাদের নাম মুছে দেওয়া হয়েছে, সেই সমস্ত নাম এবং নাম বাদ দেওয়ার কারণ জনসমক্ষে প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। রায় এই তথ্য জানা গেছে,বৃহস্পতিবার বিচারপতি সুর্যকান্ত ও জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিল—এই বিপুল সংখ্যক ভোটারের নাম জেলা-স্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে, সঙ্গে দিতে হবে নাম বাদ দেওয়ার সুনির্দিষ্ট কারণ। শুধু অনলাইনে নয়, পঞ্চায়েত ভবন, ব্লক উন্নয়ন কার্যালয় এবং পঞ্চায়েত অফিসের নোটিস বোর্ডেও বুথভিত্তিক তালিকা টাঙিয়ে দিতে হবে যাতে মানুষ সরাসরি গিয়ে নিজের নাম যাচাই করতে পারেন।

আদালতের নির্দেশে স্পষ্ট পরিকল্পনা
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী—

৬৫ লক্ষ ভোটারের পূর্ণ তালিকা জেলা-স্তরের সরকারি ওয়েবসাইটে দিতে হবে।

বাদ দেওয়ার কারণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

তালিকাটি সার্চযোগ্য হতে হবে এবং EPIC নম্বর দিয়ে নাম খুঁজে পাওয়া যাবে।

সর্বাধিক প্রচারিত আঞ্চলিক ভাষার সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে।

দূরদর্শন ও অন্যান্য টিভি চ্যানেলে সম্প্রচার করতে হবে।

জেলা নির্বাচন আধিকারিকদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টেও বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে।

বিচারপতি সুর্যকান্ত বলেন, “আমরা চাই না নাগরিকদের অধিকার রাজনৈতিক দলের উপর নির্ভরশীল হোক। মানুষ নিজেরাই অনলাইনে গিয়ে যাচাই করতে পারুক।” বিচারপতি বাগচি যোগ করেন, “স্বচ্ছতার জন্য পুরো ডেটাসেট অনলাইনে দিন।”

আরও পড়ুন: পথকুকুরদের মামলায় বড় মোড়, রায়দান স্থগিত রাখল সুপ্রিম কোর্ট

২২ লক্ষ মৃত, তবুও গোপন কেন?
আদালতে শুনানিতে জানা যায়, বাদ পড়া ৬৫ লক্ষ নামের মধ্যে প্রায় ২২ লক্ষ মানুষ মৃত। বিচারপতি সুর্যকান্ত প্রশ্ন তোলেন, “যদি ২২ লক্ষ মানুষ মারা গিয়ে থাকেন, তবে বুথ-স্তরে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়নি কেন?”

কমিশনের অবস্থান ও বিরোধীদের ক্ষোভ
এর আগে কমিশন সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিল, বাদ পড়া ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করার কোনও আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই। খসড়া ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না হওয়া মানেই স্থায়ীভাবে ভোটাধিকার হারানো নয়। দাবী-আপত্তির সময়ে আবেদন করলেই নাম ফের যুক্ত হতে পারে। কমিশনের দাবি, এত বড় প্রক্রিয়ায় মানবিক ত্রুটির সম্ভাবনা থাকায় অনিচ্ছাকৃতভাবে নাম বাদ পড়া বা যুক্ত হওয়া ঘটতে পারে।

কিন্তু ডিজিটাল, মেশিন-রিডেবল ফরম্যাটে ভোটার তালিকা দেওয়ার আগেই অস্বীকৃতি জানানো কমিশন এবার বাদ পড়া নামের তালিকা প্রকাশেও আপত্তি জানানোয় বিরোধী শিবিরের ক্ষোভ আরও বেড়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, কমিশনের এই অবস্থান ভোটার তালিকা প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা বাড়াবে এবং নাগরিকদের নিজস্ব অধিকার ক্ষুণ্ণ করবে।

আগামী শুনানি ২২ আগস্ট
আদালত জানিয়েছে, ক্ষুব্ধ ব্যক্তি আধার কার্ডের কপি সহ দাবী জমা দিতে পারবেন। এই অন্তর্বর্তী নির্দেশ মানতে হবে ১৯ আগস্টের মধ্যে। এরপর মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ২২ আগস্ট। আদালতের পর্যবেক্ষণ, “অনিতা দেবী যেন জানেন—আমি এই ওয়েবসাইটে গেলে কীভাবে আমার নাম খুঁজে পাব।” এই নির্দেশে ভোটার তালিকা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে কিনা তা নিয়ে এখন সারা দেশজুড়ে নজর বিহারের দিকে।