আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের সুপ্রিম কোর্ট শুক্রবার স্বতঃপ্রণোদিতভাবে দেশের ক্রমবর্ধমান “ডিজিটাল অ্যারেস্ট” বা ডিজিটাল গ্রেপ্তার জালিয়াতি নিয়ে মামলা গ্রহণ করেছে। এই পদক্ষেপ আসে পাঞ্জাবের অম্বালা জেলার এক প্রবীণ দম্পতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে, যাঁরা সেপ্টেম্বর ৩ থেকে ২৬, ২০২৫-এর মধ্যে প্রতারণার মাধ্যমে ১ কোটি টাকারও বেশি অর্থ হারিয়েছেন।


দম্পতি আদালতে একটি চিঠি পাঠিয়ে জানান, প্রতারকরা নিজেদের পরিচয় দিয়েছিল সিবিআই, ইডি, আয়কর দফতর এবং বিচার বিভাগের কর্মকর্তা হিসেবে। ফোন, ইমেল এবং হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করে তারা দম্পতিকে বিশ্বাস করিয়েছিল যে তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে এবং তাঁদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হতে পারে। এমনকি প্রতারকরা সুপ্রিম কোর্টের নাম ও লোগো ব্যবহার করে জাল নথি পাঠিয়েছিল, যাতে বিষয়টি আরও বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়।


অভিযোগ অনুযায়ী, ওই দম্পতিকে বলা হয় তাঁদের নামে জাল আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ আছে। এই মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে প্রতারকরা তাঁদের কাছ থেকে একাধিক কিস্তিতে টাকা ট্রান্সফার করিয়ে নেয়। ইতিমধ্যে অম্বালা সাইবারক্রাইম সেলে দুটি এফআইআর দায়ের হয়েছে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এই ঘটনাটি কোনও একক প্রতারণা নয়—বরং এটি এক সংগঠিত অপরাধচক্রের অংশ, যারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের প্রবীণ নাগরিকদের টার্গেট করছে।

আরও পড়ুন:  সুদের হার স্থির থাকলেও হতে পারে পরিবর্তন, দেখে নিন ফিক্সড ডিপোজিটে কোথায় বিনিয়োগ করবেন


বিচারপতি সুর্য কান্ত ও জয়মাল্য বাগচি-র বেঞ্চ এই প্রতারণাকে অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ বলে উল্লেখ করেছেন। আদালত মন্তব্য করে, “সুপ্রিম কোর্ট বা হাই কোর্টের নাম, সিলমোহর এবং বিচারিক কর্তৃত্ব জালভাবে ব্যবহার করা নিতান্তই এক ভয়ঙ্কর ঘটনা। এটি আমাদের বিচারব্যবস্থার মর্যাদার উপর সরাসরি আঘাত।”


বেঞ্চ আরও জানায়, সাধারণত আদালত রাজ্য পুলিশের তদন্ত দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয়, কিন্তু এই ক্ষেত্রে বিষয়টি এতটাই গুরুতর যে, প্রতারকরা একাধিক ভুয়া আদেশ তৈরি করেছে, যার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের নাম ব্যবহার করা হয়েছে।


প্রতারণাগুলির মধ্যে ছিল
একটি ভুয়ো সম্পত্তি বাজেয়াপ্তি আদেশ (৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫)
মুম্বই ইডি অফিসের নামে জাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
ভুয়ো নজরদারি নির্দেশ, যাতে বিচারপতির জাল সই ব্যবহার করা হয়েছে।


আদালতের মতে, এগুলো কেবল “সাধারণ প্রতারণা বা সাইবার অপরাধ” নয়, বরং এটি বিচারব্যবস্থার ভিত্তিকে নাড়িয়ে দেওয়া এক গুরুতর অপরাধ।
সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করেছে যে, এই ধরনের সংগঠিত প্রতারণার মোকাবিলায় কেবল রাজ্য নয়, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকেও যৌথভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব, সিবিআই পরিচালক, হরিয়ানা স্বরাষ্ট্রসচিব এবং অম্বালা সাইবারক্রাইম সুপারিনটেনডেন্ট-কে নোটিশ পাঠাতে।


তাছাড়া আদালত অ্যাটর্নি জেনারেল-এর সহায়তা চেয়েছে ক্রমবর্ধমান সাইবার অপরাধের এই জাতীয় প্রবণতা মোকাবিলায়। অম্বালা সাইবারক্রাইম সেলকেও তদন্তের অগ্রগতির উপর একটি স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।


বিচারপতি কান্ত পর্যবেক্ষণ করেন, “যখন অপরাধীরা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ঠকাতে পারে, তখন তা কেবল ব্যক্তি নয়—পুরো বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।” এই ঘটনায় আদালত নাগরিকদেরও সতর্ক থাকতে আহ্বান জানিয়েছে। বেঞ্চ বলেছে, ডিজিটাল যুগে সরকারি সংস্থা বা আদালত কখনও ফোন বা হোয়াটসঅ্যাপে গ্রেপ্তারি বা সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ পাঠায় না। এমন কোনও বার্তা এলে তা অবিলম্বে সাইবার হেল্পলাইন নম্বর ১৯৩০ বা স্থানীয় থানায় জানানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।


এই মামলার পরবর্তী শুনানি দীপাবলি ছুটির পরপরই নির্ধারিত হয়েছে। আদালতের এই পদক্ষেপ সাইবার প্রতারণার বিরুদ্ধে এক নতুন নজির তৈরি করেছে এবং প্রবীণ নাগরিকদের সুরক্ষার বিষয়ে এক বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।