আজকাল ওয়েবডেস্ক: গোপাল খেমকা, অজিত কুমার, রমাকান্ত যাদব, বিক্রম ঝা, জিতেন্দ্র কুমার মাহাতো, সুশীলা দেবী, সুরেন্দ্র কেওয়াত। নামগুলি জনসাধারণের কাছে অতটা পরিচিত না হলেও। গত ১০ দিনে বিহারে রাজনৈতিক তরজার কেন্দ্রে এই নামগুলি। গত দশ দিনে এই সাত জন নেতা খুন হয়েছেন বিহারে। এরপরেই বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার শাসনে বিহারের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে দিয়েছে। লালু যাদবের আমলের ‘জঙ্গলরাজের’ তুলনা টেনে আনা হচ্ছে।

লোকসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী। বিহারকে ‘ভারতের অপরাধের রাজধানী’ বলেও বর্ণনা করেছেন রাহুল। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন উল্লেখ করে রাহুল দাবি করেছেন গত ১১ দিনে ৩১টি খুন হয়েছে রাজ্যে। এক্স হ্যান্ডলে তিনি লিখেছেন, “বিহার 'ভারতের অপরাধ রাজধানী' হয়ে উঠেছে- প্রতিটি অলিগলিতে ভয়, প্রতিটি ঘরে অস্থিরতা! 'গুন্ডা রাজ' বেকার যুবকদের খুনিতে পরিণত করছে।“

বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী বিজয় কুমার সিনহা জানিয়েছেন, অপরাধ রুখতে সরকার কঠোর পদক্ষেপ করছে। সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে তিনি বলেন, “আমরা আগেই বলেছি যে সরকার প্রতিটি ঘটনার উপর ব্যবস্থা নিচ্ছে, এবং অপরাধমূলক কার্যকলাপ প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।“

আরও পড়ুন: দিল্লি থেকে কলকাতা মাত্র আড়াই ঘণ্টায়! ১২০০ কিমি মাত্র ১৫০ মিনিটে পৌঁছে দেবে এই ট্রেন

দ্বিতীয় উপ-মুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরী জানিয়েছেন, রাজ্যে সংগঠিত অপরাধের চেয়ে ব্যক্তিগত বিরোধের কারণে ঘটে যাওয়া খুন বন্ধ করা সরকারের পক্ষে ‘একটু কঠিন’। সম্রাট যেদিন এই কথা বলেছেন সেদিনই পাটনার সুলতানগঞ্জ এলাকায় একজন আইনজীবীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। রবিবার পাটনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (পিএমসিএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫৮ বছর বয়সী জিতেন্দ্র মাহাতো মারা যান।

7 Murders In 10 Days: Ahead Of Bihar Polls, Spotlight On Rising Crime

নীতিশের বিপদ বাড়িয়েছেন জোট সঙ্গী বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চিরাগ পাসওয়ান। তিনি খুনের ঘটনার নিন্দা করে বলেছেন, “বোধগম্যের বাইরে”। চিরাগ যেদিন এই কথা বলেছেন অর্থাৎ শনিবার সকালে নালন্দায় ৬০ বছর বয়সী হাসপাতাল কর্মী সুশীলা দেবীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। হাজিপুরের সাংসদ চিরাগ বলেন, “কতজন বিহারীকে হত্যা করা হবে? বিহার পুলিশের দায়িত্ব কী তা বোধগম্য নয়।“

আরও পড়ুন: দৈনিক জীবনে এই দু’টি ভুল এড়িয়ে চলুন, নইলে মৃত্যু অনিবার্য, সাবধান করছেন বিশেষজ্ঞরা

শনিবার পাটনায় ব্যবসায়ী বিক্রম ঝা-র খুনের ঘটনার নিন্দা করে আরজেডি নেতা তথা বিহার বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব মুখ্যমন্ত্রীর কেন নীরব তা নিয়ে আক্রমণ শানিয়েছেন। তিনি বলেন, “পাটনায় ব্যবসায়ী বিক্রম ঝাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ডি কে ট্যাক্স, ট্রান্সফার শিল্প এবং রাজ্যের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এর কারণ। মুখ্যমন্ত্রী কেন নীরব? বিহারে ঘটে যাওয়া শত শত খুনের ঘটনার জন্য দায়ী কে?” রবিবার আইনজীবী খুনের পর সেই আক্রমণের ঝাঁঝ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, “আর এখন, পাটনায় একজন বিজেপি নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হল! কী বলব, আর কাকে বলব? এনডিএ সরকারের কেউ কি সত্যি শুনতে বা তাদের ভুল স্বীকার করতে ইচ্ছুক?” 

গত ৪ জুলাই, রাত ১১.৩৭ মিনিটের দিকে পাটনায় তাঁর অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে বিশিষ্ট শিল্পপতি গোপাল খেমকাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। একদিন পর, পাটনার বালি ব্যবসায়ী রমাকান্ত যাদবকে গুলি করে হত্যা করা হয়। কয়েকদিনের মধ্যেই, পাটনার জাকারিয়াপুর এলাকায় গভীর রাতে তৃষ্ণা মার্টের মালিক বিক্রম ঝাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। 

এক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্তা জানিয়েছেন, অবৈধভাবে তৈরি বা সংগ্রহ করা আগ্নেয়াস্ত্রের বাড়বাড়ন্ত, গোলাবারুদের অনিয়ন্ত্রিত সরবরাহ বিহারে সাম্প্রতিক অপরাধের ঘটনা বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।

সর্বশেষ স্টেট ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (SCRB) তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে জানুয়ারি থেকে জুন মাসের মধ্যে প্রতি মাসে গড়ে ২২৯টি করে মোট ১,৩৭৬টি খুনের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। যেখানে ২০২৪ সালে মোট ২,৭৮৬টি এবং ২০২৩ সালে সংখ্যাটি ছিল ২,৮৬৩।

জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরোর (এনসিআরবি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগ্নেয়াস্ত্র-সহ সহিংস অপরাধের ক্ষেত্রে বিহার ধারাবাহিকভাবে শীর্ষ পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। এনসিআরবি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭, ২০১৮, ২০২০ এবং ২০২২ সালে সহিংস অপরাধের হারে রাজ্যটি দ্বিতীয় স্থানে ছিল।

SCRB তথ্য আরও দেখায় যে অস্ত্র আইনের মামলার ক্ষেত্রে পাটনা শীর্ষ স্থানে রয়েছে। যেখানে গড়ে বার্ষিক ৩২১.৭টি মামলা হয়। তারপরে রয়েছে বেগুসরাই (১৬৭.৭), মুজাফফরপুর (১৫৮.৩), নালন্দা (১১৭.৯) এবং বৈশালী (১১৭.৮)।

অস্ত্র আইনের মামলা এবং সহিংস অপরাধের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কে পাটনা আবারও তালিকার শীর্ষে রয়েছে। গড়ে বার্ষিক ৮২টি সহিংস ঘটনা ঘটে, তারপরে রয়েছে মোতিহারি (৪৯.৫৩), সরণ (৪৪.০৮), গয়া (৪৩.৫০), মুজাফফরপুর (৩৯.৯৩) এবং বৈশালী (৩৭.৯০)।