আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভালবাসতেন একজনকে। অথচ পরিবার তাঁকে মেনে নেয়নি। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জেরে ভয়ঙ্কর পরিণতি। ছারখার দুই পরিবার। মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে রাজা রঘুবংশী হত্যাকাণ্ড মনে করিয়ে দিল ২০০৩ সালের 'রিং রোড মার্ডার' কেস। সেবারেও পরিবারের চাপে বিয়ে করার জেরে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী ছিল গোটা দেশ। 

 

২০০৩ সালের ৩০ নভেম্বর ২১ বছরের শুভা শঙ্করানায়ণ ২৭ বছরের বিভি গিরিশের সঙ্গে বাগদান সারে। শুভা তখন আইনের ছাত্রী। আর গিরিশ পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। দেখাশোনা করে তাঁদের বিয়ের ঠিক হয়েছিল। গিরিশ অত্যন্ত নম্র, ভদ্র স্বভাবের ছেলে ছিলেন। বাগদানের পরের বছর শুভার সঙ্গে তাঁর বিয়ের দিনক্ষণ স্থির হয়। 

 

বাগদানের ঠিক তিনদিন পর গিরিশকে পিটিয়ে খুন করা হয়। এই হত্যার পরিকল্পনা করেছিল খোদ শুভা। সেদিন গিরিশের সঙ্গে এক রেস্তোরাঁয় দেখা করার পরিকল্পনা করেছিল সে। রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়া করে ফেরার পথে গিরিশের কাছে শুভা আবদার করেছিল, রিং রোডের জাম্বো পয়েন্টে হ্যাল বিমানবন্দরে গিয়ে বিমান ওঠানামা দেখতে চায়। হবু স্ত্রীর আবদার মেটাতে রাজিও হয়ে গিয়েছিলেন গিরিশ। 

 

সেই জায়গায় পৌঁছে হাতে হাত ধরে বিমান ওঠানামাই দেখছিলেন তাঁরা। আচমকাই গিরিশের উপর হামলা করে কয়েকজন। ভারী পাথর দিয়ে থেঁতলে দেওয়া হয় তাঁর মাথা। সঙ্গে সঙ্গে পালিয়ে যায় তারা। নির্দোষ দেখাতে, চিৎকার করে অভিনয় করে শুভা। গিরিশকে হাসপাতালেও নিয়ে যায় সে। 

 

গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হলেও শেষরক্ষা হয়নি। পরেরদিন মারা যান গিরিশ। এরপর তদন্ত শুরু করে পুলিশ। শুভা জানিয়েছিল, অজ্ঞাত পরিচয়ের কয়েকজন যুবক হামলা করে। প্রথম কয়েকদিন খুনের কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। সকলেই ধোঁয়াশায় ছিলেন। এরপর শুভার কথায় অসংগতি ধরা পড়ে। তখন বাগদানের ভিডিওটি দেখে পুলিশ। নিজের বাগদানে শুভাকে মনমরা দেখাচ্ছিল। তখনই পুলিশের সন্দেহ গাঢ় হয়। 

 

শুভার ফোন ঘেঁটে একাধিক তথ্য ফাঁস হয়। গিরিশের উপর হামলার দিন অরুন বর্মা নামের এক তরুণকে ৭৩ বার ফোন করেছিল শুভা। সেই কথোপকথনের রেকর্ড বের করা হয়। অরুণকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানিয়েছিল, ঘটনার দিন সে শহরেই ছিল না। অথচ ফোনের লোকেশন দেখে পুলিশ জানতে পারে, গিরিশের উপর হামলার সময় সেই জায়গাতেই ছিল সে। 

 

দীর্ঘ জেরার পর অবশেষে শুভা ও অরুন স্বীকার করে নেয়, তারাই গিরিশকে খুনের পরিকল্পনা করেছিল। দুই ভাড়াটে খুনি দিয়ে গিরিশকে হত্যা করে। শুভা জানিয়েছিল, অরুণকে ভালবাসত সে। কলেজে জুনিয়র ছিল অরুণ। কিন্তু পরিবার মেনে নেয়নি তাদের সম্পর্ক। জোর করে গিরিশের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করে। এরপরই দু'জনে মিলে গিরিশকে হত্যার পরিকল্পনা করে। চারজনকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। ২০১৪ সালে শুভা জামিন পায়।