‌আবু হায়াত বিশ্বাস, দিল্লি: ‘ভোট চুরি’-র পর্দা ফাঁস করবেন, আগেই ঘোষণা করেছিলেন। সেই মতোই বিজেপির ভোট চুরির পর্দা ফাঁস করলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। কোথাও ভুয়ো ভোটার, কোথাও ঠিকানা জাল বা একই ঠিকানায় অনেক ভোটার। আবার এক ব্যক্তিই ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যের ভোটার! বৃহস্পতিবার একেবারে ‘তথ্য-‌প্রমাণ’  সামনে এনে বিজেপি ও নির্বাচন কমিশনকে নিশানা করলেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা। তিনি অভিযোগ করলেন, বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে লোকসভা ভোটে কারচুপি করেছে নির্বাচন কমিশন। এরপরেই কমিশনের তরফে দাবি করা হয় রাহুল ‘‌বিভ্রান্তি’ ছড়াচ্ছেন। ভুয়ো দাবি করেছেন। এমনকি কর্ণাটক ও মহারাষ্ট্রের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের তরফে রাহুলের বক্তব্য লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে। ‌রাহুল গান্ধী যেসব অভিযোগ করেছেন সেগুলি গুরুতর। তথ্যপ্রমাণ কমিশনের হাতে তুলে দিতে বলেছে। 

দিল্লিতে কেবল সাংবাদিক বৈঠকই নয়, কাল কর্ণাটকের বেঙ্গালুরুতে ভোট চুরি ইস্যুতে বড় সড় বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছে কংগ্রেস। রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়গে সহ হাত শিবিরের শীর্ষ নেতারা সেখানে থাকবেন। কমিশন ও বিজেপির ভোট চুরির ইস্যুতে সরব হবেন তাঁরা। বেঙ্গালুরুর ফ্রিডম পার্কে বিক্ষোভ সভার পর নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে বিক্ষোভ মিছিল করবেন রাহুলরা। আগামী দিনে এই ভোট চুরি ও এসআইআর ইস্যু যে বড় আকার নিতে চলেছে তা একপ্রকার নিশ্চিত। আগামী সোমবারই দিল্লিতে সংসদ থেকে নির্বাচন কমিশনের দপ্তর পর্যন্ত মিছিল করবে ইন্ডিয়া দলের সাংসদরা। এছাড়াও আজ বৃহস্পতিবার দিল্লিতে রাহুল গান্ধীর বাসভবনে ইন্ডিয়া দলগুলির নেতারা গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেছেন। নৈশ ভোজে ইন্ডিয়া দলগুলির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত রয়েছেন।  

আরও পড়ুন: মেঘালয় যাওয়া নিয়ে তীব্র অশান্তি! খাস কলকাতায় যুবতীর দেহ উদ্ধার হতেই জামাইয়ের বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ শ্বশুরের

এদিন ইন্দিরা ভবনে রাহুল সাংবাদিক বৈঠক করে ভোট চুরির গুরুতর অভিযোগ তোলেন। লোকসভা ভোটের ফল নিয়ে দলীয় অন্তর্তদন্তে যে তথ্য উঠে এসেছে, তাতে ভোট চুরি হয়েছে বলে মনে করেন কংগ্রেস নেতা। কীভাবে কারচুপি হয়েছে, তা নিখুঁতভাবে তুলে ধরেন রাহুল। তাঁর তথ্যে ভুল রয়েছে, প্রমাণ করুক কমিশন—কমিশনকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন লোকসভার বিরোধী দলেনাত। তাঁর আরও অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন ডিজিটাল ভোটার তালিকা দিতে অস্বীকার করেছে। বিধি বদলে ৪৫ দিনের মধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ মুছে দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন আসলে লুকোতে চাইছে কী? 
 
রাহুল যে তথ্য আজ জনসম্মুখে রেখেছেন, সেগুলি গুরুতর। তিনি জানিয়েছেন, গুরুপ্রীত সিং ডাং। কর্ণাটকের মহাদেবপুরার ভোটার। ভোটার তালিকায় ৪ জায়গায় নাম রয়েছে তাঁর। আদিত্য শ্রীবাস্তব। কর্ণাটকের ২ জায়গায়, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশের ভোটার। বিশাল সিং। উত্তরপ্রদেশ এবং কর্ণাটকের ভোটার। ভোটার তালিকায় ছবি সহ নাম আছে, কিন্তু বাড়ির ঠিকানা ‘০’‘#’। মহাদেব পুরা বিধানসভা কেন্দ্রে ৪০ হাজার এমন ভুয়ো ঠিকানার ভোটার!‌ অবাক করা তথ্য হল বাড়ি নং ৩৫-‌ ভোটার ৮০ জন। এক কামরার বাড়িতে এতজন ভোটার! বাড়ি নং—৭৯১, ভোটার সংখ্যা ৪৬। বাণিজ্যিক ঠিকানায় থাকেন ৬৮ ভোটার!‌ কংগ্রেসের তদন্তকারী দল‌‌‌ সংশ্লিষ্ঠ এলাকায় গিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে অস্তিত্ব খুঁজে পাননি ওই সব ভোটারদের। শকুন রানি। ৭০ বছরের বৃদ্ধা। ফর্ম ৬ পূরণ করেছেন দু’মাসে দু’বার। ভোটার তালিকায় দুটি জায়গায় নাম রয়েছে তাঁর। কংগ্রেসের প্রশ্ন, ফর্ম ৬ কেবল নতুন ভোটারদের জন্য। ৭০ বছরের শকুন রানিদের মতো এভাবেই হাজার হাজার ভুয়ো ভোটার রয়েছে।


কর্ণাটকের সেন্ট্রাল বেঙ্গালুরু লোকসভা আসনে কংগ্রেস হেরেছিল গত লোকসভা ভোটে। হারের ব্যবধান ছিল ৩২,৭০৭ ভোটে। ওই লোকসভা কেন্দ্রের একটি বিধানসভা কেন্দ্রে মহাদেবপুরা। যেখানে বিপুল সংখ্যক ভোট লিড পেয়েছিল বিজেপি। ওই বিধানসভা কেন্দ্রে তদন্তে নামে কংগ্রেস। তদন্তে উঠে এসেছে ১ লাখ ২৫০ ভোট চুরি হয়েছে কেবল ওই কেন্দ্রে। কীভাবে? পূর্ণাঙ্গ তথ্য পেশ করে রাহুল দাবি করেছেন, ৬ মাস ধরে বাড়ি বাড়ি তদন্ত করে ভুয়ো ভোটার ধরা পড়েছে ১১,৯৬৫, ভুয়ো পরিচয়পত্র ও জাল ঠিকানা রয়েছে এমন ভোটার সংখ্যা ৪০,০০৯। একই ঠিকানায় বহু ভোটারের সংখ্যা ১০,৪৫২। তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঠিকানাও রয়েছে। ভোটার পরিচয়পত্রে ছবি নেই, কোথাও অস্পষ্ট ছবি ৪,১৩২। এবং নতুন ভোটার হিসেবে নাম তোলার ফর্ম ৬-‌এর অপব্যবার করে ভোটার হয়েছেন ৩৩,৬৯২ জন। রাহুলের অভিযোগ, এক্ষেত্রে বেশির ভাগেরই বয়স ৬০‌-‌৭০ এর বেশি। অথচ ফর্ম ৬ কেবল নতুন ভোটাররাই পূরণ করেন। কেবল একটি বিধানসভা এলাকায় যদি এমন ‘ভোট চুরি’ হয়, তাহলে এই সংখ্যাটা গোটা দেশে কত হবে, প্রশ্ন রাহুলের। রাহুল মনে করিয়েছেন, বিজেপি ২৫ লোকসভা আসনে জিতেছে ৩৩ হাজারের কম ব্যবধানে।
সাংবাদিক বৈঠকে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে ভোট কারচুপির তথ্য তুলে ধরেন রাহুল।

তিনি বলেন, ‘‌মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রেই আমরা ১,০০,২৫০টা ভোট চুরির প্রমাণ পেয়েছি। পাঁচটা ভিন্ন উপায়ে চুরি করা হয়েছে। কোথাও ভুয়ো ভোটার, কোথাও ঠিকানা জাল বা একই ঠিকানায় অনেক ভোটার। আমরা যখন সেই সব ঠিকানায় গিয়েছি, সেখানে হয় কোনও লোক নেই, নয় সেই বাড়িতে একটি পরিবারই বাস করে।’ কংগ্রেস নেতার অভিযোগ, গোটা দেশে ভুয়ো ভোট হচ্ছে। এই ভোট চুরি ধরতে অনেক সময় লেগেছে তাঁদের। কংগ্রেস নিজের মতো করে ভোটার তালিকা নিয়ে তদন্ত করেছে পাঁচটি স্তরে। ছ’মাস ধরে এই তদন্ত চালিয়েছেন তাঁরা। এরপরেই বিস্ফোরক তথ্য প্রমাণ পেয়েছেন তারা। কমিশনকে নিশানা করে রাহুল বলেছেন,‘আপনার যে পদেই থাকুন কেন, সিনিয়র হোন বা জুনিয়র, আপনাদের রেয়াত করা হবে না।’