আজকাল ওয়েবডেস্ক: আন্তর্জাতিক মঞ্চে বড়সড় অস্বস্তির মুখে পড়লেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার দাবি করেছেন, রাশিয়ার থেকে তেল কেনা বন্ধ করার আশ্বাস দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এর পরেই তিনি এমন এক মন্তব্য করেন, যা নয়াদিল্লির জন্য চরম অবমাননাকর বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
সাংবাদিকদের সামনে ট্রাম্প বলেন, “মোদি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন যে রাশিয়ার থেকে আর তেল কেনা হবে না।” এরপরই কার্যত ব্যাঙ্গের সুরে তিনি যোগ করেন, “আমি ওঁর (মোদির) রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ধ্বংস করতে চাই না।” ট্রাম্পের এই মন্তব্যে স্পষ্ট, তিনি নিজেকে এমন এক উচ্চাসনে বসাচ্ছেন যেখান থেকে তিনি চাইলেই ভারতের মতো একটি সার্বভৌম দেশের প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। বিরোধীদের একাংশের অভিযোগ, মোদিকে ‘দারুণ ব্যক্তি’ এবং ‘ভালবাসার পাত্র’ বলে উল্লেখ করলেও, ট্রাম্পের এই মন্তব্য বুঝিয়ে দেয় যে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে এই সম্পর্ক সমান-সমান নয়।
উপরন্তু এই ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটল, যখন মাত্র কয়েক মাস আগেই ট্রাম্প প্রশাসন ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক চাপিয়েছে। সেই সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিযোগ ছিল, ভারত রাশিয়ার থেকে তেল কিনে ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোকে আর্থিক মদত দিচ্ছে। অর্থাৎ, একদিকে শুল্কের চাপ এবং অন্যদিকে প্রকাশ্যে এই ধরনের অবমাননাকর মন্তব্য- দুই মিলিয়ে মোদি সরকারের আমেরিকা নীতি যে বিশেষ ফলপ্রসূ হচ্ছে না, তা স্পষ্ট।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রধানমন্ত্রী মোদি বরাবরই বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে ব্যক্তিগত রসায়ন গড়ে তোলার উপর জোর দিয়েছেন। ট্রাম্পের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। আমদাবাদে ট্রাম্পকে নিয়ে বিশাল সভা করা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘আব কি বার ট্রাম্প সরকার’ বলে ভাষণ দেওয়া, বারবার ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির ব্যক্তিগত সম্পর্ক শিরোনামে উঠে এসেছে। কিন্তু ট্রাম্পের এদিনের মন্তব্য প্রমাণ করে দিল যে, সেই ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভারতের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে ব্যর্থ। বরং তা ভারতকে এমন এক পরিস্থিতিতে ফেলেছে যেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নয়াদিল্লির অভ্যন্তরীণ বিষয়েও পরোক্ষে হস্তক্ষেপ করার ইঙ্গিত দিচ্ছেন।
শুল্ক যুদ্ধের মধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ‘মেরামত’ করার চেষ্টা করছিল নয়া দিল্লি। অন্তত কূটনৈতিক স্তরে ইঙ্গিত ছিল তেমনই। কিন্তু তার মধ্যেই ঘটল এই ঘটনা। ফলে ফের শৈত্যের দিকে চলে যেতে পারে ভারত মার্কিন সম্পর্ক, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
আরও পড়ুন: ক্লাস ফাঁকি কেন? প্রশ্ন করতেই সাংবাদিককে চপ্পলপেটা শিক্ষিকার, ঘটনা ঘিরে তুমুল শোরগোল
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই মোদি ট্রাম্পের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত সের্জিও গোর-কে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। কিছু দিন আগে দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে ফোনালাপও হয় বলে খবর। কিন্তু এই সমস্ত কূটনৈতিক সৌজন্যের পরেও ট্রাম্পের মন্তব্যে কোনও বদল আসেনি। বরং তিনি পরোক্ষে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁর শর্ত না মানলে, ফল ভাল হবে না।
তবে ট্রাম্পের কারও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ধ্বংস করার হুমকি এই প্রথম নয়। ২০১৮ সালে তিনি বলেছিলেন, যে সমস্ত রিপাবলিকান তাঁর বিরোধিতা করেন, তিনি তাঁদের রাজনৈতিক জীবন শেষ করে দেন। আজ সেই একই সুর শোনা গেল ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রেও। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, মোদির ব্যক্তিগত বন্ধুত্বের কূটনীতি কি তবে ভারতের জন্য লাভের বদলে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে? সবমিলিয়ে, ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পর মোদি সরকার এখন রাশিয়া এবং আমেরিকা, দুই শক্তির মাঝে এক নতুন দোলাচলে পড়ল বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।
