আজকাল ওয়েবডেস্ক: বর্ণবিদ্বেষের প্রতিবাদ করায় উত্তরাখণ্ডে প্রাণ গেল ত্রিপুরার ছাত্র অ্যাঞ্জেল চাকমার। এমবিএ পড়ুয়া অ্যাঞ্জেলকে ‘চাইনিজ মোমো’ বলে কটাক্ষ করেছিল স্থানীয় কিছু মদ্যপ যুবক। তার প্রতিবাদ করতেই অ্যাঞ্জেলর ওপর ছুরি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা। অন্যদিকে এই নৃশংস ঘটনাকে উত্তরাখণ্ড পুলিশ ‘নিছক মজা’ বলে দায় এড়াতে চাওয়ায় নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।

মৃতের কাকা মোমেন চাকমা ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, ‘‘বাজারে কেনাকাটা করতে গেলে অ্যাঞ্জেল আর ওর ভাই মাইকেলকে ‘চাইনিজ’ বলে গালমন্দ করা হয়। প্রতিবাদ করায় ওরা মারধর শুরু করে। অ্যাঞ্জেল দাদাকে বাঁচাতে গেলে ওকে ছুরি দিয়ে কোপানো হয়। পুলিশ এখন একে বর্ণবিদ্বেষ বলতে চাইছে না, কিন্তু এটা স্পষ্টত জাতিবিদ্বেষের ঘটনা।’’

অভিযোগ উঠেছে, দেরাদুনের সেলাকুই থানার পুলিশ প্রথমে মামলা নিতেই চায়নি। অ্যাঞ্জেলর বাবা পেশায় বিএসএফ জওয়ান তরুণ চাকমার দাবি, অনেক টালবাহানার পর ছাত্র সংগঠনের চাপে পড়ে ৪৮ ঘণ্টা বাদে অবশেষে এফআইআর নেয় পুলিশ। পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তা অজয় সিং প্রথমে বিষয়টিকে 'রসিকতা' বলে উড়িয়ে দিতে চাইলেও, পরে চাপের মুখে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করতে বাধ্য হন। ঘটনায় এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে এখন রাজনীতিও সরগরম। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, বিজেপি শাসিত রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষের ওপর এই হামলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দলগুলি।

গত ৯ ডিসেম্বর এই সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটেছিল। ছুরির আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে লড়াই করার পর ২৬ ডিসেম্বর মৃত্যু হয় ২৪ বছরের অ্যাঞ্জেলের। মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত অ্যাঞ্জেল বারবার একটাই কথা বলে গিয়েছেন- তিনিও এ দেশেরই নাগরিক।

সম্প্রতি তাঁর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে পাহাড়ি রাজ্যে। বর্ণবিদ্বেষের প্রতিবাদ করায় ২৪ বছরের ওই তরুণকে নৃশংসভাবে মারধর করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। চিকিৎসারত অবস্থায় তাঁর মৃত্যুর পর থেকেই ত্রিপুরার নানা প্রান্তে মোমবাতি মিছিল ও প্রতিবাদ চলছে। এই পরিস্থিতিতে সোমবার মৃত ছাত্রের পরিবারের জন্য ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা।

এই ঘটনা নিয়ে দ্বিতীয়বার উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামির সঙ্গে কথা বলেন মানিকবাবু। অভিযুক্তদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি। পরে সমাজমাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, ‘‘উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অ্যাঞ্জেল চাকমার বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। তিনি আশ্বস্ত করেছেন যে, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলকে উপযুক্ত সাজা দেওয়া হবে। এই কঠিন সময়ে রাজ্য সরকার ওই পরিবারের পাশে রয়েছে।’’
ত্রিপুরার চাকমা ও মগ ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে কয়েকটি দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, অ্যাঞ্জেলের পরিবারের একজনকে সরকারি চাকরি দিতে হবে এবং উত্তরাখণ্ড সরকারের কাছ থেকেও ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে। 

তবে এই ঘটনায় উত্তরাখণ্ড পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন তুলেছে ‘অল ইন্ডিয়া চাকমা স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’। সংগঠনের সভাপতি দৃশ্যমণি চাকমার অভিযোগ, পুলিশ প্রথম থেকেই বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ৯ ডিসেম্বর ঘটনাটি ঘটলেও পুলিশ এফআইআর নিতে ১২ তারিখ পর্যন্ত সময় নষ্ট করেছে। অভিযোগ, পুলিশের এই গাফিলতির সুযোগ নিয়েই এক মূল অভিযুক্ত ফেরার হয়ে গিয়েছে, যার খোঁজ এখনও মেলেনি।

এদিকে আগরতলায় বিশাল এক মোমবাতি মিছিলে পা মেলান অসংখ্য মানুষ। সেখানে অ্যাঞ্জেলের বিচার চাওয়ার পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষের ওপর চলা বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধেও সরব হন প্রতিবাদীরা।