আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাষ্ট্রপতির রেফারেন্স প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের প্রকাশিত মতামত নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা তুঙ্গে। শুক্রবার তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম. কে. স্টালিন জানালেন, এই পরামর্শমূলক মতামত ২০২৫ সালের ৮ এপ্রিলের ঐতিহাসিক State of Tamil Nadu vs. Governor of Tamil Nadu মামলার রায়ের ওপর কোনও প্রভাব ফেলবে না।

এক দিন আগে সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো প্রশ্নগুলির উত্তরে তাদের মতামত প্রকাশ করে। সেদিনই প্রধান বিচারপতি বি. আর. গাভাই আদালতে বলেন, আদালত কেবল রেফারেন্সে উত্থাপিত আইনগত প্রশ্নগুলির ওপর মত দেবে, তামিলনাড়ু মামলার রায় নিয়ে কোনও মন্তব্য করবে না।

সংবিধানের দুই অনুচ্ছেদ নিয়ে প্রশ্ন

সংবিধানের ১৪৩ নম্বর অনুচ্ছেদ রাষ্ট্রপতিকে সুপ্রিম কোর্ট থেকে মতামত চাইবার অধিকার দেয়। তবে এটি রায় নয়। অন্যদিকে ১৪১ অনুচ্ছেদ বলে যে সুপ্রিম কোর্ট ঘোষিত আইন দেশের সব আদালতের ওপর বাধ্যতামূলক।

আইনবিশেষজ্ঞদের মতে, যেহেতু রেফারেন্সে প্রদত্ত মতামত রায় নয়, তাই এটি ৮ এপ্রিলের রায়কে অকার্যকর করতে পারে না। তামিলনাড়ু, কেরালা ও পশ্চিমবঙ্গ যুক্তি দিয়েছিল যে কেন্দ্র সরকার অসন্তুষ্ট হলে রিভিউ পিটিশন দাখিল করা উচিত ছিল, রেফারেন্সের মাধ্যমে একটি ‘ছদ্ম-আপিল’ নয়।

কেন্দ্র কি রিভিউ চাইতে পারে?

আইনমহলে মত, কেন্দ্র সরকার চাইলে এই অ্যাডভাইসরি ওপিনিয়নকে ব্যবহার করে ৮ এপ্রিলের রায়ের পর্যালোচনা চাইতে পারে। সেই ক্ষেত্রে বিষয়টি আবার যাবে বিচারপতি পার্দিওয়ালা ও বিচারপতি মহাদেবনের বেঞ্চের কাছেই।

স্টালিনের প্রতিক্রিয়া: গভর্নর সংবিধানের ওপরে নন

মুখ্যমন্ত্রী স্টালিন সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ পোস্ট করে জানান, সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ কয়েকটি মৌলিক নীতি স্পষ্ট করেছে।

১) নির্বাচিত সরকারই প্রশাসনের প্রকৃত ক্ষমতার কেন্দ্র। রাজ্যে দ্বৈত ক্ষমকাঠামো চলতে পারে না।
২) সাংবিধানিক পদাধিকারীদের সংবিধানের সীমার মধ্যেই থাকতে হবে।
৩) গভর্নরের বিল ‘মেরে ফেলা’ বা পকেট ভেটো ব্যবহারের কোনও চতুর্থ বিকল্প নেই।
৪) গভর্নর অনির্দিষ্টকালের জন্য বিল ফেলে রাখতে পারেন না।
৫) গভর্নর দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকলে রাজ্য আদালতের শরণাপন্ন হতে পারে।

স্টালিন লিখেছেন, কোনও উচ্চ সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ যদি সংবিধান লঙ্ঘন করেন, তবে আদালতই শেষ আশ্রয়। আদালতের দ্বার বন্ধ হলে তা আইনশাসনের ভিত্তিকে দুর্বল করবে এবং গভর্নরদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সংবিধান লঙ্ঘনে উৎসাহিত করবে।

 সুপ্রিম কোর্ট বেঞ্চের মূল বক্তব্য

পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ—প্রধান বিচারপতি গাভাই, বিচারপতি সুর্যকান্ত, বিচারপতি বিক্রম নাথ, বিচারপতি পি. এস. নরসিমহা এবং বিচারপতি এ. এস. চন্দ্রচূড়কর—মত দেয় যে:

গভর্নর বা রাষ্ট্রপতির জন্য সংবিধানে কোনও সময়সীমা নেই

সংবিধানে সময়সীমা নির্ধারিত না থাকায় আগের পর্যবেক্ষণগুলির কিছু অংশকে বেঞ্চ ‘obiter’ বলে উল্লেখ করে, যা বাধ্যতামূলক নয়।

বিল যদি প্রত্যাখ্যান করা হয়, তবে তা অবশ্যই আইনসভায় ফেরাতে হবে

বেঞ্চ কেন্দ্র সরকারের যুক্তি খারিজ করে জানায়, গভর্নর কেবল ‘withhold assent’ বলে বিল আটকে রাখতে পারেন না। প্রত্যাখ্যান করলে লিখিতভাবে জানিয়ে বিল ফেরানো বাধ্যতামূলক।

অনুচ্ছেদ ২০০-তে গভর্নরের কিছু বিবেচনাধিকার আছে

“in his opinion” শব্দবন্ধের ভিত্তিতে বেঞ্চ জানায় যে গভর্নর বিল ফেরানো বা রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানোর বিষয়ে কিছু সীমিত স্বাধীনতা ভোগ করেন।

গভর্নরের সিদ্ধান্ত নেওয়া বিচারযোগ্য নয়, তবে নিষ্ক্রিয়তা হলে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে

দীর্ঘ, অজুহাতহীন ও অনির্দিষ্ট বিলম্ব হলে আদালত বাধ্যতামূলক নির্দেশ দিয়ে গভর্নরকে সংবিধান অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করতে বলতে পারে।

ব্যক্তিগত দায়মুক্তি থাকলেও গভর্নরের পদ আদালতের আওতায়

অনুচ্ছেদ ৩৬১ গভর্নরের ব্যক্তিগত দায়মুক্তি নিশ্চিত করলেও, তাঁর পদ বা ক্রিয়া—বিশেষত নিষ্ক্রিয়তা—আদালতের পর্যবেক্ষণের বাইরে নয়। বেঞ্চ আরও জানায়, সংবিধানে বিলের ক্ষেত্রে কোনও “deemed assent” নেই। বিল কার্যকর হতে হলে গভর্নরের আনুষ্ঠানিক সম্মতি আবশ্যক।

কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কে নতুন উত্তেজনার ইঙ্গিত

আইনমহলের মতে, সুপ্রিম কোর্টের এই মতামত কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের বিদ্যমান সংঘাতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। যদিও এটি সরাসরি ৮ এপ্রিলের রায়কে প্রভাবিত করছে না, তবুও কেন্দ্র সরকারের রিভিউ চাওয়ার পথ এখন আরও প্রশস্ত হয়েছে।

অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী স্টালিন মনে করেন, এই মতামতই প্রমাণ করছে যে তামিলনাড়ুর গভর্নর সংবিধানের সীমা লঙ্ঘন করেছিলেন এবং নির্বাচিত সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন।