আজকাল ওয়েবডেস্ক: স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্যকলহ। যার জেরে প্রায় দেড় বছর আগে স্বামীর ঘর ছেড়েছেন স্ত্রী। দু’জনের দাম্পত্যকলহের মীমাংসার বিষয়টি একাধিকবার থানা-পুলিশ এবং আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত কোনও ভাবেই স্ত্রীকে ‘শিক্ষা’ দিতে না পেরে এবার তাকে ‘মৃত’ দেখিয়ে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দিয়ে দেওয়ার  অভিযোগ উঠল বিএলও হিসেবে কর্মরত এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি থানার বালিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের পিল্কি গ্রামে। ভোটার তালিকায় ‘মৃত’ বলে ঘোষিত ওই মহিলার নাম টুম্পা দাস মণ্ডল। তিনি গোটা বিষয়টি লিখিত আকারে সাগরদিঘির বিডিও, জঙ্গিপুরের মহকুমাশাসক এবং মুর্শিদাবাদ জেলাশাসকে জানিয়েছেন। 

সাগরদিঘির বিডিও শতাংশু নাথ চক্রবর্তী বলেন, “ওই মহিলার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি, ‘মৃত’ দেখিয়ে তাঁর নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “ওই মহিলার স্বামী এসআইআর শুরুর আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট বুথের বিএলও হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। সে কারণে আমরা ধরেই নিচ্ছি এসআইআর শুরু হওয়ার আগেই ওই মহিলাকে ‘মৃত’ দেখিয়ে তাঁর নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।”
 
বিডিও আরও জানান, “ইআরও-র তরফ থেকে ওই বিএলও-কে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হচ্ছে। বিএলও-র উত্তর পাওয়ার পরেই তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে। মহিলাকে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কীভাবে ফের তিনি নিজের নাম ভোটার তালিকায় তুলতে পারবেন।”

প্রায় ১২ বছর আগে মুর্শিদাবাদের সুতি থানার অন্তর্গত ঔরাঙ্গবাদ-কদমতলা এলাকার বাসিন্দা টুম্পা দাস নামে ওই মহিলার সঙ্গে সাগরদিঘি বালিয়া এলাকার বাসিন্দা প্রভাকর মণ্ডলের বিয়ে হয়। প্রভাকর বর্তমানে পিল্কি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্যারাটিচার হিসেবে কর্মরত। এর পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে তিনি সংশ্লিষ্ট এলাকার একটি বুথের বিএলও হিসেবেও নির্বাচন কমিশনের অধীনে বিভিন্ন সময়ে কাজ করেছেন। এসআইআর-এর অঙ্গ হিসেবে নতুন করে ভোটার তালিকা তৈরির কাজ শুরু হওয়ার পর নিজের নাম সেখানে রয়েছে কি না তা দেখতে গিয়ে দিন চারেক আগে টুম্পা জানতে পারেন নির্বাচন কমিশনের খাতায় তিনি আদতে একজন ‘মৃত’ ভোটার। এরপরেই তাঁর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। কীভাবে নিজের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ গেল তা খোঁজ করতে গিয়ে টুম্পা জানতে পারেন বিএলও হিসেবে কর্মরত স্বামী নিজের ‘প্রভাব’ খাটিয়ে ভোটার তালিকা থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর নাম বাদ দিয়েছেন। 

টুম্পা বলেন, “দেখাশোনা করে প্রায় ১২ বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন কারণে আমার স্বামী আমাকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে নিগ্রহ করা শুরু করেন। স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে দেড় বছর আগে আমি তাঁর বাড়ি ছেড়ে সুতি থানা এলাকায় বাবার বাড়ি চলে আসি। আমার সঙ্গে আমার ৫ বছরের সন্তানও চলে আসে।”
 
তিনি বলেন, “সন্তান কার কাছে থাকবে এবং আরও কিছু বিষয় নিয়ে আমার সঙ্গে স্বামী প্রভাকরের গন্ডগোল চলছে। গত কয়েক বছরে আমাদের সমস্যা নিয়ে আমরা একাধিকবার পুলিশ এবং আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি তবুও আমাদের সমস্যা এখনও মেটেনি।”
 
টুম্পা জানান, “আমার স্বামীর সঙ্গে এখনও বিবাহবিচ্ছেদের মামলা না হওয়ায় আমি সাগরদিঘির শ্বশুরবাড়ির গ্রামের বুথের ভোটার তালিকা থেকে থেকে নিজের নাম বাপের বাড়ির বুথের ভোটার তালিকায় সরিয়ে নিয়ে যাইনি। ২০০২ সালে আমার ভোট দেওয়ার বয়স না হওয়ায় সেই সময় আমার ভোটার তালিকায় নাম ছিল না। বর্তমান ভোটার তালিকায় আমার নাম রয়েছে কি না তা খোঁজ করতে গিয়ে আমি জানতে পারি ভোটার তালিকায় আমার নামের পাশে ‘ই’ (Expired) অর্থাৎ ‘মৃত’ বলে লেখা রয়েছে।”

টুম্পা অভিযোগ করেন, “গত প্রায় ৪-৫ বছর ধরে আমার স্বামী প্রভাকর মণ্ডল সাগরদিঘির ১৪৯ নম্বর বুথে বিএলও হিসেবে কাজ করছেন। আর ওই বুথ এলাকায় আমার শ্বশুরবাড়ি। কেবলমাত্র আমাকে হেনস্থা করার জন্য আমার স্বামী ইচ্ছাকৃতভাবে ভোটার তালিকায় আমাকে মৃত বলে ঘোষণা করে দিয়েছেন।”
 
তিনি দাবি করেন, “কোনও তথ্যের ভিত্তিতে আমার স্বামী বা নির্বাচন কমিশন আমাকে ‘মৃত’ বলে ঘোষণা করল আমি তা জানতে চাই। আমার সন্দেহ স্বামী আমাকে খুন করে ফেলতে পারেন। আমি বহুদিন আগেই মারা গিয়েছি তা প্রমাণ করার জন্য তিনি ভোটার তালিকাও লোকজনকে দেখাতে পারেন। এর আগে প্রভাকর আমার আধার কার্ড ‘ব্লক’ করে দিয়েছিলেন। আমার সঙ্গে হওয়া এই অন্যায়ের প্রতিকার চেয়ে আমি ইতিমধ্যেই প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছি। তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার দাবি করছি আমি।”

অভিযুক্ত বিএলও-র সঙ্গে এই ঘটনা নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়ার জন্য যোগাযোগ করা হলেও এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তা পাওয়া যায়নি। তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেলে পরে এই প্রতিবেদনে যোগ করা হবে।