আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিয়ের পরেই শুরু অশান্তি। কারণ একটাই। নববধূর থেকে আরও পণের দাবি শ্বশুরবাড়ির। যা ঘিরে অশান্তি শুধু নয়, লাগাতার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের তিনি। যৌন হেনস্থার শিকার তিনি। অবশেষে চরম পদক্ষেপ করলেন ৩৩ বছরের এক যুবতী।
দিনের পর দিন মারধর চলত। যৌন নির্যাতন করতেন স্বামী। বহুদিন খেতেও দিতেন না শাশুড়ি। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তাঁকে বাড়ি থেকেও তাড়িয়ে দিয়েছিলেন শ্বশুর। স্বামীর অবর্তমানে অশালীন আচরণের অভিযোগ তুলেছেন শ্বশুরের বিরুদ্ধেও।
ডিভোর্সের মামলা চলাকালীন আত্মঘাতী হলেন যুবতী। তার আগে তাঁর একমাত্র কন্যাসন্তানকে খুন করেন। খুন ও আত্মহত্যার আগে একটি সুইসাইড নোট লেখেন তিনি। যেখানে পণের দাবিতে স্বামী, শাশুড়ি, শ্বশুর ও ননদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন তিনি। সুইসাইড নোটটি উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ৩৩ বছরের যুবতী আদতে কেরলের কোল্লামের বাসিন্দা ছিলেন। কর্মসূত্রে থাকতেন দুবাইয়ে। তাঁর শ্বশুরবাড়ির সদস্যরাও দুবাইয়ের বাসিন্দা। আত্মহত্যার আগে যুবতী তাঁর দেড় বছরের কন্যাসন্তানকে গলা টিপে খুন করেছেন। এরপর সুইসাইড নোটে শ্বশুরবাড়ির নির্যাতনের কাহিনি লেখেন।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, যুবতীর বিয়ে হয়েছিল সাড়ে বছর আগে। দেড় বছর আগে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। তিনি দুবাইয়ের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। তাঁর স্বামীও দুবাইয়ে কর্মরত ছিল। বিয়ের পর প্রথম সবকিছু ঠিকঠাক চললেও, কয়েক সপ্তাহ পর থেকেই অশান্তি শুরু হয়েছিল।

যুবতী লিখেছেন, বিয়ের পর আরও পণের জন্য জোরাজুরি করতেন। দামি গাড়ি না দেওয়ার জন্য দিনরাত কথা শোনাতেন। যথেষ্ট টাকা ও গয়না না দেওয়ার জন্য তাঁর হতদরিদ্র বললেও পিছপা হননি। কখনও কখনও 'অনাথ শিশু' বলেও খোঁটা দিতেন তাঁরা।
অন্যদিকে তাঁর স্বামী অস্বাভাবিক যৌনতার জন্য জোর করতেন। পর্ন ছবির মতো সঙ্গমে লিপ্ত হতে বাধ্য করতেন। আপত্তি জানালেও চড়, থাপ্পড়, ঘুষি মারতেন। এমনকী তাঁর শ্বশুর বহুবার অশালীন আচরণ করেছেন। যার প্রতিবাদ করেছিলেন স্বামীর কাছে। অভিযোগ শুনে পাল্টা স্বামী বলেছিলেন, 'শুধু খুশি করতেই বিয়ে করোনি, এই বাড়িতে থাকতে হলে, বাবাকেও সন্তুষ্ট করতে হবে।'
যুবতী জানিয়েছেন, তিনি যখন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা, সেই সময় দিনের পর দিন তাঁকে খেতে দেননি শাশুড়ি। বাড়ি থেকেও তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ধনী পরিবারের এত লোভ, বিয়ের আগে টের পাননি তিনি। অবশেষে কয়েক মাস আগে বিচ্ছেদের মামলা করেন। শ্বশুরবাড়ির পাশবিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অন্যত্র মেয়েকে নিয়ে থাকতে শুরু করেন। ডিভোর্সের মামলা চলাকালীন তাঁকে একযোগে সকলে মিলে হেনস্থা করেন।
শ্বশুরবাড়িতে চরম নির্যাতনের জেরে দিন কয়েক আগে যুবতী চরম পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেন। খুদে কন্যাসন্তানকে খুন করে, আত্মঘাতী হন ভাড়া বাড়িতে। যুবতীর পরিবারের তরফে অভিযোগ দায়ের হতেই তদন্ত শুরু করেছে কেরল ও দুবাই পুলিশ। ইতিমধ্যেই যুবতীর স্বামী, ননদ, শ্বশুরকে আটক করেছে কোল্লাম পুলিশ। ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছে দুবাই পুলিশও। যুবতীর পরিবারের অভিযোগ, স্বামী, শ্বশুর সহ শ্বশুরবাড়ির আরও একাধিক সদস্য যুবতীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনাও দিয়েছেন।
