আজকাল ওয়েবডেস্ক: আর্থিক অনটন, প্রতারণা, স্বামীর নির্মম অত্যাচারের জেরে মর্মান্তিক পরিণতি হল জাতীয় স্তরের কবাডি খেলোয়াড়ের। প্রতারনার শিকার হয়ে আত্মঘাতী হলেন তিনি। এই চরম পদক্ষেপের জন্য স্বামীকেই দায়ী করেছেন তিনি। যার প্রমাণ রয়েছে ফোনে। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে মহারাষ্ট্রের নাগপুরে। পুলিশ জানিয়েছে, ২৯ বছর বয়সি কবাডি খেলোয়াড়ের নাম, কিরণ সুরজ দাধে। ২০২০ সালে স্বপ্নীল জাদেভকে বিয়ে করেছিলেন। কিরণের পরিবার আর্থিকভাবে দুর্বল ছিল। বিয়ের পর আগেই তাঁকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন স্বপ্নীল। কিন্তু বিয়ের পাঁচ বছর পরেও সেই চাকরি তিনি পাননি। অবশেষে হতাশায় বাড়িতেই আত্মঘাতী হন তিনি। 

পুলিশ আরও জানিয়েছে, বিয়ের আগে স্বপ্নীল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিরণ ও তাঁর ভাই দু'জনেই চাকরি পাবেন। ফলে পরিবারের উপর থেকে আর্থিক অনটনের দুশ্চিন্তা কেটে যাবে। কিরণ জাতীয় স্তরের কবাডি খেলোয়াড়। বিয়ের কয়েক বছর পরেই টের পান, তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। 

কিরণ এও জানিয়েছিলেন, বিয়ের পর থেকে স্বপ্নীল চরম হেনস্থা করতেন। যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। লাগাতার কটুক্তি সহ্য করতে না পেরে বাবার বাড়িতে ফিরে যান কিরণ। এরপর ফোনেই কটুক্তি করে হুমকি দিতেন তাঁকে। তাঁর পরিবারের তরফেও ডিভোর্সের আবেদনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। 

গত ৪ ডিসেম্বর বাড়িতে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন কিরণ। তিনদিন পর হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে স্বপ্নীল পলাতক। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। তাঁর খোঁজে তল্লাশি অভিযান চলছে। 

প্রসঙ্গত, গত মাসেই পাঞ্জাবের লুধিয়ানায় কবাডি খেলোয়াড় গুরবিন্দর সিংকে গুলি করে খুন করার অভিযোগ উঠেছিল লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে। খেলোয়াড়কে খুন করার পরেই লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের পক্ষ থেকে আনমোল বিষ্ণোই নামে একটি পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে তিনি ঘটনার দায় স্বীকার করেন। পোস্টটিতে দাবি করা হয়েছে যে করণ মাদপুর এবং তেজ চাক নামে পরিচিত গ্যাং সহযোগীরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। অন্যদিকে হরি বক্সার এবং আরজু বিষ্ণোইও জড়িত থাকার দাবি করেছেন। 

আরজু বিষ্ণোই এবং হরি বক্সার উভয়ই পলাতক, যারা বিদেশ থেকে লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং পরিচালনা করছেন। তবে পাঞ্জাব পুলিশ জানিয়েছে যে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডটি ব্যক্তিগত শত্রুতার ঘটনা হতে পারে। খুনের দায় লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং স্বীকার করার পর অনেকেই মধ্যেই আতঙ্ক কাজ করতে শুরু করেছে। বিশেষ করে যারা এই গ্যাংয়ের শত্রু বলে পরিচিত। বিষ্ণোই গ্যাংয়ের তরফে বলা হয়েছে, ‘‌আমাদের শত্রুদের জন্য এটি একটি বার্তা। হয় নিজেকে শুধরে নিন। নয়ত পরবর্তী বুলেট খাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকুন।’‌ 

আগে বচসার জেরে এক জাতীয় স্তরের কবাডি খেলোয়াড়কে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটেছিল। নিহত খেলোয়াড়ের নাম ছিল তেজপাল সিং। ভারতের জাতীয় স্তরের কবাডিতে তিনি সুপরিচিত নাম ছিলেন। ঘটনাটি ঘটেছিল এসএসপি অফিসের পাশেই। 

জানা গিয়েছিল, জাগরাওঁর গিডারউন্ডি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন তেজপাল সিং। হরি সিং হাসপাতাল রোডের উপর তাঁকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় একটি সুইফট গাড়ি এসে রাস্তা আটকায় তেজপাল সিংয়ের। গাড়িতে বসা ব্যক্তির সঙ্গে উচ্চস্বরে কথা বলতে শোনা যায় তাঁকে। উত্তেজনা তুঙ্গে উঠতেই আচমকা গাড়িতে বসা অন্য আরোহী হ্যান্ড গান বার করে তাঁকে শুট করে বলে অভিযোগ। সোজা বুকে গুলি লাগে তেজপালের। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন তিনি।

আহত, রক্তাক্ত কবাডি প্লেয়ারকে ঘটনাস্থলে ফেলেই পালিয়ে যান আততায়ীরা। পুলিশ আহত তেজপালকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। সেই ঘটনার রেশ মিটতে না মিটতেই ফের কবাডি খেলোয়াড় খুন হলেন লুধিয়ানায়।