আজকাল ওয়েবডেস্ক: জয়পুরে এসআইআর-সংক্রান্ত কাজের চাপের জেরে এক সিনিয়র শিক্ষক আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার ভোরে বিনদায়ক রেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে জীবন শেষ আত্মহত্যা করেন ৪৮ বছর বয়সী শিক্ষক মুকেশ জানগিড়।
তাঁর পকেট থেকে উদ্ধার হওয়া সুইসাইড নোটে তিনি লিখেছেন, এসআইআর কাজ নিয়ে এক সুপারভাইজারের চাপেই তিনি এই চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, সোমবার ভোর সাড়ে চারটের দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন জানগিড়। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল তিনি কাজে যাচ্ছেন। পরে তিনি বিনদায়ক রেল ক্রসিংয়ে পৌঁছে আত্মহত্যা করেন।
ঘটনাটি জানাজানি হতেই তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মুকেশ জানগিড় নাহরি কা বস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন এবং তার পাশাপাশি বুথ লেভেল অফিসার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন।
তাঁর ভাই গজানন্দ জানান, কয়েকদিন ধরেই তিনি প্রচণ্ড মানসিক চাপে ভুগছিলেন। ঘটনার আগের রাতে এক সহকর্মী এসে তাঁকে ফর্ম পূরণে সাহায্যও করেছিলেন। ভোরেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান তিনি, এরপর ঘটে যায় বিপর্যয়।
সুইসাইড নোটে জানা যায়, তাঁর সুপারভাইজার সীতারাম নাকি এসআইআর-সংক্রান্ত কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য নিয়মিত চাপ দিচ্ছিলেন এবং তাঁকে সাসপেন্ড করার হুমকিও দিয়েছিলেন।
সেই চাপই তাঁকে মানসিকভাবে ভেঙে দেয় বলে অভিযোগ পরিবারের। এদিকে পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, পুলিশ এখনও পর্যন্ত কোনও এফআইআর দায়ের করেনি। এমনকি তারা যে সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে তাও পরিবারের হাতে তুলে দেয়নি।
মৃতের এক আত্মীয় অভিযোগ করে বলেন, ‘এসআইআর কাজের চাপেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশ এখনও এফআইআরই করছে না।’ উল্লেখ্য, এসআইআর সংক্রান্ত কাজের চাপে বাংলাতে সম্প্রতি মৃত্যু হয়েছে এক বুথ লেভেল অফিসারের।
এসআইআরের (Special Intensive Revision) এনুমারেশন ফর্ম বিলি করার সময় আচমকাই ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় এক বিএলও-র।
জানা গিয়েছে, তিনি পেশায় এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ছিলেন। এসআইআরের সময়ে তাঁকে বিএলও-র দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতে। মৃতার নাম নমিতা হাঁসদা (৫০)।
তিনি মেমারি থানার অন্তর্গত বোহর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের চক বলরাম, বাঙালপুকুর এলাকার বাসিন্দা। জানা গিয়েছে, শনিবার এসআইআরের এনুমারেশন ফর্ম বিলির কাজে বেরিয়েছিলেন নমিতা হাঁসদা।
কাজ চলাকালীন সন্ধ্যা নাগাদ হঠাৎই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তড়িঘিড় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে জানা যায়, তিনি ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তড়িঘড়ি কালনা মহকুমা হাসপাতালে।
কিন্তু চিকিৎসকরা তাকে বাঁচাতে পারেননি। শনিবার রাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। রবিবার সকালে কালনা শ্মশানঘাটে মৃতার দেহ সৎকার করতে গিয়ে নমিতার স্বামী মাধব হাঁসদা প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন।
তাঁর কথায়, ‘বিডিও অফিস থেকে প্রচণ্ড চাপ দেওয়া হচ্ছিল আমার স্ত্রীকে ফর্ম বিলির জন্য। সারাদিন কাজের পরও তাঁকে রাতে বেরোতে হয়েছে ফর্ম বিলি করতে। কাজ চলাকালীনই অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষরক্ষা হয়নি।’
এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এই বিষয়ে পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক আয়েশা রানী এ বলেন, ‘ঘটনার খবর পেয়েছি। সাধারণত যাঁরা অসুস্থ, তাঁদের বিএলও-র ডিউটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কীভাবে এই ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
