আজকাল ওয়েবডেস্ক: সোমবার উপরাষ্ট্রপতির পদ থেকে জগদীপ ধনখড়ের পদত্যাগ তাঁর তিন বছরের মেয়াদকালের যবনিকা পতন করল। তিনি পদত্যাগে জানিয়েছিলেন, শারীরিক এবং ব্যক্তিগত কারণেই তাঁর এই ইস্তফা। কিন্তু কারণ কি কেবল সেটাই? একাধিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনের তথ্যও, প্রায় এক বছর ধরেই ধনখড়ের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল কেন্দ্রের। একাধিক বিষয়ে মনোমালিন্য দেখা দিয়েছিল দুই পক্ষের মধ্যে।
২০২২ সালে যখন জগদীপ ধনখড় উপরাষ্ট্রপতি হন, তখন তাকে মোদি সরকারের একজন দৃঢ় সমর্থক বলেই মনে করেছিল সব পক্ষ। বাংলার রাজ্যপাল পদে থাকার সময় থেকেই তিনি একপ্রকার নিজের সেই ছবি তৈরি করেই রেখেছিলেন। উপরাষ্ট্রপতি পদে তার পদোন্নতি সেই দৃঢ়তার প্রতিদান, রাজনীতির অলিন্দে সেই আলোচনাও হয়েছে বিস্তর। কিন্তু সময়ের বহু আগে, স্বাস্থ্যের দোহাই দিয়ে তিনি পদ থেকে সরে এলেও, বিষয়টিকে নেহাত সেটা বলেই মনে করছে না রাজনৈতিক মহল। তার একাধিক সম্ভাব্য কারণও উঠে আসছে।
তারমধ্যে সাম্প্রতিকতম কারণ হল, নগদকাণ্ডে দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি যশোবন্ত বর্মাকে ইমপিচ করার জন্য বিরোধীদের প্রস্তাব। রাজ্যসভার চেয়ারপার্সন ধনখড় সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন। শাসকদল বিজেপিরও প্রায় একই রকম প্রস্তাব পেশ করার কথা ছিল। কিন্তু বিরোধীদের প্রস্তাব গ্রহণ করে নেওয়ায় রাজ্যসভায় সুবিধাজনক স্থান হারিয়ে ফেলে বিজেপি।
সূত্রের খবর, বর্ষাকালীন অধিবেশনের মাত্র কয়েকদিন আগে, মন্ত্রীরা ধনখড়ের সঙ্গে একাধিকবার দেখা করে তাঁকে বর্মার বিরুদ্ধে বিরোধী-সমর্থিত প্রস্তাবটি এগিয়ে না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। স্পষ্টভাবে জানিয়েছিলেন যে লোকসভা এটি শুরু করবে এবং তার পরিবর্তে তাঁকে এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি শেখর যাদবের অভিশংসনের বিষয়টি শেষ করার দিকে মনোনিবেশ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সূত্র জানিয়েছে, ধনখড় হয়তো কোনও কংগ্রেস নেতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে বিরোধীদের কথা শুনেছিলেন, বিজেপি তথা এনডিএ সরকারের কথা না শুনে। ওই প্রতিবেদনেই দাবি করা হয়েছে, ধনখড় নাকি রাষ্ট্রপতির সমান সুযোগ-সুবিধা চেয়েছিলেন। অর্থাৎ যে ধরণের বিলাসবহুল গাড়ি এবং বিমান তিনি ব্যবহার করতেন, কর্মীদের নিয়োগ এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপর জোর দিয়েছিলেন।

তথ্যও, পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে সোমবার সকালেই। যখন, বিরোধীদলীয় নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে যখন পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে সরকারকে প্রশ্ন করতে উঠে দাঁড়ান, তখন ধনখড় তাকে দীর্ঘক্ষণ কথা বলার অনুমতি দেন - কেবল হাতের ইশারায় বিজেপি নেতা এবং মন্ত্রী জেপি নাড্ডার কথা কেটে দেন।
তথ্যও, অধিবেশন শুরুর আগে সপ্তাহে অন্তত তিনবার সিনিয়র মন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল, কিরেন রিজিজু এবং জেপি নাড্ডা ধনখড়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। প্রতিবারই তাঁরা উপরাষ্ট্রপতিকে অপেক্ষা করার জন্য, বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে প্রস্তাবে শাসক দলের সাংসদদের অংশ নিতে এবং ঐক্যমত্যের জন্য সময় দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু উপরাষ্ট্রপতি তাতে রাজি হননি। সোমবার, তিনি বিরোধী নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন, স্বাক্ষর গ্রহণ করেন এবং স্পষ্ট করে দেন যে তিনি সংসদে প্রস্তাবটি পড়ে শোনাবেন। সূত্রের খবর, এই ঘটনার পর থেকেই পরিস্থিতি ঘুরে যায় অন্যদিকে।
