আবু হায়াত বিশ্বাস,দিল্লি, ৫ ডিসেম্বর: ইন্ডিগোর পরিষেবায় চরম বিশৃঙ্খলা। ব্যাহত বিমান পরিষেবা। একের পর এক বিমান বাতিল। এদিকে চড়া দামে টিকিট কিনতে গিয়ে নাভিশ্বাস বিমান যাত্রীদের। শুক্রবারও দেশের প্রায় সমস্ত প্রান্তের সব অন্তর্দেশীয় বিমান বাতিল করেছে ইন্ডিগো। যার ফলে সমস্যায় পড়েছেন যাত্রীরা। একদিনে পাঁচশোর বেশি ফ্লাইট বাতিল হওয়ার নজিরবিহীন পরিস্থিতি ঘিরে কেন্দ্র সরকারকে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি। যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছনোকে তারা ‘ব্যবস্থাগত ব্যর্থতা’ বলে অভিহিত করেছে।
বিমান পরিষেবা বিপর্যয়ের জন্য কেন্দ্রের একচেটিয়া মডেলকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। শুক্রবার এক্স পোস্টে রাহুল লেখেন, ‘সরকারের একচেটিয়ে ব্যবস্থার জন্যই, ইন্ডিগোর পরিষেবা সমস্যার সৃষ্টি করেছে। বিমান বাতিল, উড়ান দেরিতে ছাড়ার জন্য দেশের মানুষকে মূল্য দিতে হচ্ছে।’ ২০২৪ সালের ৬ নভেম্বর এ নিয়ে সরকারকে সতর্ক করেছিলেন রাহুল। সংবাদমাধ্যমে তাঁর লেখা একটি অনুচ্ছেদও তিনি সোশাল মিডিয়ায় তুলে ধরেছেন। এদিন সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় কংগ্রেস সাংসদ প্রমোদ তিওয়ারি ইন্ডিগোর একচেটিয়া বাজারক্ষমতা (মনোপলি) নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং জানান, এই পরিস্থিতির প্রভাব পড়ছে সাধারণ যাত্রী থেকে শুরু করে সংসদ সদস্যদের উপরও। জিরো আওয়ারে বিষয়টি উত্থাপন করে তিওয়ারি বলেন, একটি এয়ারলাইন সংস্থা ইন্ডিগো ৫০০ ফ্লাইট বাতিল করেছে। অনেক সাংসদ সপ্তাহান্তে বাড়ি ফেরার বা আবার সোমবার আসার পরিকল্পনা করেছিলেন। এখন তাঁরা ব্যাপক সমস্যায় পড়েছেন। বিজেপি নেতা ও সাংসদ জগদম্বিকা পাল আবার কেন্দ্রকে সাংসদদের জন্য বিকল্প বিমানের বন্দোবস্ত করার দাবি তোলেন। যদিও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু আশ্বাস দেন যে সরকার বিষয়টি গভীরভাবে দেখছে। তিনি জানান, সভায় আসার আগে তিনি বেসামরিক বিমান মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন।
এদিন, সংসদ চত্বরে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেছেন,‘আমরা সকলেই জানি যে এই দেশের বেশিরভাগ জিনিসই গুটিকয়েক লোকের মালিকানাধীন এবং সরকারই এটা করছে, এবং এটা ঠিক নয়। এটা অর্থনীতির জন্য ঠিক নয়, এটা গণতন্ত্রের জন্য ঠিক নয়, এটা দেশের জন্য ঠিক নয়।’ দলের মুখপাত্র পবন খেরার আবার অভিযোগ, বর্তমানে দেশের বিমান পরিবহনে ৯২ শতাংশ বাজারভাগ ইন্ডিগো ও টাটা গোষ্ঠীর হাতে। তাঁর কটাক্ষ,‘দুই জন দল চালাবে, দুই জন সরকার চালাবে, দুই জন ব্যবসা চালাবে—তাহলে এমন পরিণতিই হবে।’ শিবসেনা সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী বলেছেন,‘যদি ডিজিসিএ ও বিমান মন্ত্রক যাত্রীদের অধিকার, সুরক্ষা, বিমান ভাড়া, বিমান পরিবহন ও ক্রু-দের সময়সূচী নিয়ম অনুসারে পালন করতে না পারে, তাহলে মন্ত্রক বন্ধ করে দেওয়া উচিত!’
বিমান পরিষেবার উপর ‘নেতিবাচক প্রভাব’ পড়ার জন্য প্রযুক্তিগত ত্রুটি, শীতকালীন সময়সূচি পরিবর্তন, প্রতিকূল আবহাওয়া, বিমান ব্যবস্থায় ক্রমবর্ধমান যানজট এবং বিমানকর্মীদের কাজের সংশোধিত সময়সূচিকে দায়ী করেছে ইন্ডিগো। গত মাসে বিমানকর্মীদের সংশোধিত কাজের সময়সূচি বা ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশন (এফডিটিএল) অনুযায়ী, একজন বিমানকর্মীর দিনে আট ঘণ্টা, সপ্তাহে ৩৫ ঘণ্টা, মাসে ১২৫ ঘণ্টা এবং বছরে সর্বোচ্চ ১,০০০ ঘণ্টা কাজ করার কথা। তবে ইন্ডিগো সূত্রে খবর, এই নিয়ম চালু হওয়ার পর থেকেই সংস্থার কর্মীসংখ্যায় টান পড়ছে। জানা গিয়েছে, পাইলট এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক কেবিন ক্রু না থাকায় অনেক উড়ান বাতিল করতে হচ্ছে। কখনও আবার বদলাতে হচ্ছে উড়ানের সময়সূচি। বিমান পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় চাপে পড়ে যায় কেন্দ্র। বিরোধীদের আক্রমণের মুখে পড়তে হয়। শুক্রবার জরুরি ভিত্তিতে এফডিটিএল—এর একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম তুলে নেওয়া হয় - যেখানে বলা হয়েছিল, ‘সাপ্তাহিক বিশ্রামের বদলে অন্য কোনও ধরনের ছুটি নেওয়া যাবে না।’
