আজকাল ওয়েবডেস্ক: ওসমান হাদি হত্যায় সন্দেহভাজন দুই মূল অভিযুক্ত মেঘালয় সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে। রবিবার দুপুরে এই দাবি করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। সঙ্গে এও বলা হয় যে, হাদি হত্যায় সন্দেহভাজ ফয়সাল করিম মাসুদ এবং আলমগীর শেখকে বারতে স্বাগত জানিয়েছিলেন পুর্তি নামক এক ব্যক্তি। সানি নামের এক ট্যাক্সি চালক তাদের সীমান্ত থেকে তুরা শহরে নিয়ে যায়। এই পুর্তি ও সানিকে আটক করা হয়েছে। তবে ভারতী গোয়েন্দাদের এক শীর্ষ আধিকারিক সিএনএন-নিউজ১৮-কে জানিয়েছেন যে, ইনকিলাব মঞ্চের নেতা এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের দুই প্রধান সন্দেহভাজন ভারতীয় হেফাজতে আছে বা ভারতীয় ভূখণ্ডে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে, এমন কোনও আনুষ্ঠানিক নিশ্চয়তা নেই।

ভারতীয় গোয়েন্দা বলেছেন, ঢাকা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এখন পর্যন্ত যে তথ্য শেয়ার করা হয়েছে, তা সীমান্ত পারাপারের গতিবিধি এবং সহায়তাকারীদের আটকের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়েছে। সন্দেহভাজনদের শারীরিকভাবে গ্রেপ্তারের কোনও তথ্য এখনও ঢাকাকে দেওয়া হয়নি।

গোয়েন্দারা জোর দিয়ে বলেছেন যে, ঢাকা পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে, কিন্তু এই পর্যায়ে মেঘালয়ের হেফাজতে সন্দেহভাজনদের উপস্থিতির কোনও প্রমাণ নেই। গোয়েন্দা মূল্যায়ন থেকে জানা যায়, এই দু'জন হালুয়াঘাট-দক্ষিণ গারো পাহাড় সেক্টরের অনানুষ্ঠানিক সীমান্ত পথ ব্যবহার করে থাকতে পারে। এই পথ সাধারণত অর্থনৈতিক অভিবাসী এবং চোরাকারবারীরা ব্যবহার করে থাকে।

সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে যে, ঢাকা পুলিশ - মেঘালয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও, এখন পর্যন্ত ভারতের তরফে কোনও গতিবিধি শনাক্ত করা হয়নি এবং কাউকে গ্রেপ্তারও করা হয়নি।

ঢাকা পুলিশের দাবি, হাদির হত্যাকারীরা ভারতে পালিয়ে গিয়েছে
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) দাবি করছে যে, হাদি হত্যায় দুই প্রধান সন্দেহভাজন - অভিযুক্ত শুটার ফয়সাল করিম মাসুদ এবং আলমগীর শেখ ঘটনার পরপরই বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে।

২০২৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত কমিশনার এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, ফয়সাল করিম মাসুদ এবং আলমগীর শেখ ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত এলাকা দিয়ে পালিয়ে একটি "পূর্ব-পরিকল্পিত সহায়তাকারী চক্রের" মাধ্যমে ভারতের মেঘালয়ে প্রবেশ করে। তদন্তকারীদের মতে, বাংলাদেশের দিকে হত্যাকারীদের চেনা-পরিচিতরা তাদের সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। এছাড়া ভারতের দিকে পুর্তি নামে একজন ব্যক্তি এই জু'জনকে গ্রহণ করে। পরে সামি নামের এক ট্যাক্সি চালক তাদের মেঘালয়ের তুরার দিকে নিয়ে যায়।

নজরুল ইসলাম বলেন, মাসুদ ও শেখকে গ্রেপ্তার এবং প্রত্যর্পণের জন্য ডিএমপি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছে।   

ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ
শরিফ ওসমান হাদি ছিলেন একজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং ভারত ও আওয়ামী লীগের একজন সোচ্চার সমালোচক। তিনি ২০২৪ সালের জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান মুখ ছিলেন। এই অভ্যুত্থানের শক্তিই শেখ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। অভ্যুত্থানের পর হাদি ইনকিলাব মঞ্চ প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করেন এবং আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

১২ ডিসেম্বর, হেলমেট পরা বন্দুকধারীরা হাদিকে মাথায় গুলি করে। পরে তাঁকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তিনি মাথায় রক্থক্ষরণের কারণে মারা যান। তাঁর হত্যাকাণ্ড পুরো বাংলাদেশ জুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভের জন্ম দেয়। সমর্থকরা 'প্রথম আলো' ও 'দ্য ডেইলি স্টার'-এর মতো  সংবাদ মাধ্যমে ভাঙচুর চালায় এবং ভারতীয় কূটনৈতিক কার্যালয়গুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে।

এই অস্থিরতা ময়মনসিংহেও ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে একজন হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয় এবং তাঁর মৃতদেহ আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এই নক্কারজনক ঘটনায় বিতর্ক দানা বাঁধে, শোরগোল পড়ে যায়। হাদির হত্যাকারীরা ভারতে পালিয়ে গিয়েছে - এমন অভিযোগের পর ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়।