আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রজাতন্ত্র দিবস ২০২৬-এ এক বিরল ও আবেগঘন দৃশ্যের সাক্ষী হতে চলেছে দেশ। কর্তব্যপথে আয়োজিত কুচকাওয়াজে প্রথমবারের মতো ভারতীয় সেনাবাহিনী তুলে ধরতে চলেছে একটি বিশেষভাবে পরিকল্পিত অ্যানিম্যাল কন্টিনজেন্ট। এই অভিনব উদ্যোগের মাধ্যমে সেনার সহনশীলতা, আত্মত্যাগ এবং কার্যপদ্ধতির বৈচিত্র্যের প্রতীক হিসেবে বিভিন্ন প্রশিক্ষিত প্রাণীদের অপরিহার্য ভূমিকা তুলে ধরা হবে।

এই অভিনব কন্টিনজেন্টটি গঠিত হয়েছে ভারতীয় সেনার রিমাউন্ট অ্যান্ড ভেটেরিনারি কর্পস (RVC)-এর অধীনে থাকা প্রাণীদের নিয়ে। বরফে ঢাকা হিমবাহ থেকে শুরু করে শীতল মরুভূমি- দেশের সবচেয়ে কঠিন ও সংবেদনশীল সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা রক্ষায় এই প্রাণীরা আজও যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটাই হবে এই প্রদর্শনের মূল বার্তা।

কী থাকছে এই অ্যানিম্যাল কন্টিনজেন্টে?

এই বিশেষ বাহিনীতে থাকছে ২টি ব্যাক্ট্রিয়ান উট, ৪টি ঘোড়া প্রজাতির জান্সকার পোনি, ৪টি র‍্যাপ্টর (শিকারি পাখি), ১০টি ভারতীয় প্রজাতির সেনা কুকুর, এবং ৬টি সাধারণ  সামরিক কুকুর, যারা বর্তমানে সক্রিয় পরিষেবা দিচ্ছে। এই সমগ্র দলটি ভারতীয় সেনার ঐতিহ্য, আধুনিকতা এবং আত্মনির্ভরতার সমন্বিত প্রতিচ্ছবি।

কন্টিনজেন্টের অগ্রভাগে থাকবে সদ্য অন্তর্ভুক্ত ব্যাক্ট্রিয়ান উট, যেগুলি মূলত লাদাখের শীতল মরুভূমিতে মোতায়েনের জন্য সেনায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই উটগুলি অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার জন্য বিশেষভাবে তৈরি, তীব্র বাতাস, প্রচণ্ড ঠান্ডা এবং ১৫ হাজার ফুটেরও বেশি উচ্চতায় নির্বিঘ্নে চলাচল করতে সক্ষম। এক একটি উট প্রায় ২৫০ কেজি পর্যন্ত বোঝা বহন করতে পারে এবং অল্প জল ও খাদ্যে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে পারে। এর ফলে লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (LAC)-এ বিশেষ করে বালুময় ও খাড়া এলাকায় সেনার লজিস্টিক সম্পর্কিত  সাহায্য  ও টহল আরও শক্তিশালী হচ্ছে।

ব্যাক্ট্রিয়ান উটের পাশেই কুচকাওয়াজে থাকবে লাদাখের নিজস্ব পাহাড়ি প্রজাতি জান্সকার পোনি। আকারে ছোট হলেও এই পোনিগুলি অসাধারণ সহ্যক্ষমতার জন্য পরিচিত। মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রায় এবং চরম উচ্চতায় তারা নিয়মিত ৪০ থেকে ৬০ কেজি বোঝা বহন করে দুর্গম পথে চলাচল করতে পারে। ২০২০ সালে সেনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর থেকে জান্সকার পোনিগুলি সিয়াচেন হিমবাহ-সহ একাধিক কঠিন এলাকায় লজিস্টিক সাপোর্ট ও মাউন্টেড প্যাট্রোলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা এক দিনে ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত পথ অতিক্রম করেছে।

এই কন্টিনজেন্টে থাকছে ৪টি র‍্যাপ্টর, যাদের ব্যবহার করা হয় মূলত বার্ড-স্ট্রাইক কন্ট্রোল এবং নজরদারির কাজে। এটি সেনাবাহিনীর উদ্ভাবনী চিন্তার প্রতিফলন, যেখানে প্রাকৃতিক দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে অপারেশনাল নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা বাড়ানো হচ্ছে।

এই কন্টিনজেন্টের অন্যতম আকর্ষণ হবে সেনা কুকুররা, যাদের বলা হয় ভারতীয় সেনার “Silent Warriors”। মীরাটে অবস্থিত RVC সেন্টার ও কলেজে প্রশিক্ষিত এই কুকুররা সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান, বিস্ফোরক ও মাইন শনাক্তকরণ, ট্র্যাকিং, পাহারা, দুর্যোগ মোকাবিলা এবং সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ অপারেশনে সেনাকে সহায়তা করে। বহু ক্ষেত্রে এই কুকুর ও তাদের হ্যান্ডলাররা সাহসিকতার জন্য গ্যালান্ট্রি অ্যাওয়ার্ড ও প্রশংসাপত্র পেয়েছেন।

আত্মনির্ভর ভারত নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সেনাবাহিনী সাম্প্রতিক বছরগুলিতে মুধোল হাউন্ড, রামপুর হাউন্ড, চিপ্পিপারাই, কোম্বাই ও রাজাপালায়াম-এর মতো দেশীয় কুকুর প্রজাতি অন্তর্ভুক্ত করছে। এর মাধ্যমে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বিদেশি নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি দেশীয় সম্পদের ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে।

এদিকে প্রজাতন্ত্র দিবস ও নববর্ষকে সামনে রেখে রাজধানী দিল্লিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সংবেদনশীল এলাকায় চলছে বৃহৎ যাচাই অভিযান। দিল্লি পুলিশ ও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলির মধ্যে একাধিক সমন্বয় বৈঠক হয়েছে। সিসিটিভি নজরদারি, ড্রোনের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ এবং সন্দেহভাজন চলাচলের উপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে। প্রায় ২০ হাজার পুলিশকর্মী, ট্রাফিক পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মিলিয়ে শহরজুড়ে মোতায়েন থাকবেন। বাজার, পার্টি জোন, নাইট লাইফ এলাকা এবং শহরের প্রবেশপথে বাড়ানো হয়েছে ব্যারিকেড ও গাড়ি তল্লাশি।

কনট প্লেস, হজ খাস ভিলেজ-সহ জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশ সংলগ্ন দিল্লির সীমান্তেও নিরাপত্তা আরও কড়া করা হয়েছে। প্রজাতন্ত্র দিবস ২০২৬-এ এই অ্যানিম্যাল কন্টিনজেন্ট কেবল এক ব্যতিক্রমী প্রদর্শনীই নয়, বরং ভারতীয় সেনার অদম্য মনোবল, প্রযুক্তির পাশাপাশি প্রকৃতির শক্তিকে কাজে লাগানোর এক শক্তিশালী বার্তা বহন করবে।