আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনকে হাতিয়ার করে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানাল কংগ্রেস। রবিবার এক বিবৃতিতে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক (যোগাযোগ) জয়রাম রমেশ বলেন, ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এখন স্থায়ীভাবে বৈষম্যকে আরও তীব্র করেছে। এই পরিস্থিতিতে তিনি জিএসটি সংস্কার, কর্পোরেট পৃষ্ঠপোষকতার অবসান এবং পরিবারগুলির জন্য আয় সহায়তার দাবি জানান।

বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত ‘পভার্টি অ্যান্ড ইকুইটি ব্রিফ’ অনুযায়ী, গত এক দশকে ভারত চরম দারিদ্র্য অনেকটাই কমাতে সক্ষম হয়েছে। ২০১১-১২ সালে যেখানে চরম দারিদ্র্যের হার ছিল ১৬.২ শতাংশ, তা ২০২২-২৩ সালে নেমে এসেছে ২.৩ শতাংশে। এই সময়কালে প্রায় ১৭১ মিলিয়ন মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে থেকে উঠে এসেছেন।

জয়রাম রমেশ বলেন, "ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতির সাফল্য ১৯৯১ সালের উদারনীতির সূচনা থেকেই শুরু, যা মনমোহন সিংহের নেতৃত্বাধীন ২০০৪-১৪ সময়কালের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলির মাধ্যমে আরও শক্তিশালী হয়েছে।" বিশেষ করে ২০০৫ সালে চালু হওয়া এমজিএনআরইগিএ (গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি প্রকল্প) এবং ২০১৩ সালের খাদ্য সুরক্ষা আইনকে তিনি দারিদ্র্য হ্রাসের মূখ্য অস্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেন।

তবে, রমেশ সতর্ক করে দেন যে, ২০২১ সালের ক্রয় ক্ষমতা সমন্বয় (PPP) ফ্যাক্টর অনুযায়ী যদি হিসাব করা হয়, তাহলে চরম দারিদ্র্যের হার কিছুটা বেশি হতে পারে। তিনি অভিযোগ করেন, ২০১৭-১৮ সালের উপভোক্তা ব্যয় সমীক্ষা প্রত্যাখ্যান করার পর বর্তমান সরকার নতুন সমীক্ষায় পরিবর্তন এনেছে, যা প্রকৃত অবস্থা জানতে বাধা সৃষ্টি করছে।

তিনি বলেন, নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশের জন্য ৩.৬৫ মার্কিন ডলার দৈনিক আয়ের সূচক ব্যবহার করা উচিত। এই নিরিখে ভারতের দারিদ্র্য হার ২০২২ সালে ২৮.১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। রমেশ আরও বলেন, "দেশে আয় বৈষম্য মারাত্মক রূপ নিয়েছে। ২০২৩-২৪ সালে শীর্ষ ১০ শতাংশের আয় ছিল নিম্ন ১০ শতাংশের তুলনায় ১৩ গুণ বেশি।"

তিনি আরও দাবি করেন, বড় অংশের মানুষ আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য সীমার ঠিক ওপরে অবস্থান করছে এবং সামান্য ধাক্কাতেই তারা দারিদ্র্যের নিচে নেমে যেতে পারে। তাই এমজিএনআরইগিএ এবং খাদ্য সুরক্ষা আইন আরও মজবুত করতে হবে।

জয়রাম রমেশ সরকারকে অবিলম্বে নতুন দারিদ্র্য সীমা নির্ধারণ এবং ২০২১ সালের জনগণনা সম্পন্ন করার দাবিও জানান। তিনি বলেন, "এই সরকারের গোপনীয়তা এবং নীতিনির্ধারণের অস্বচ্ছতা দেশের প্রকৃত অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বোঝার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।"

বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ২০১১-১২ থেকে ২০২২-২৩ সময়কালে গ্রামীণ চরম দারিদ্র্য ১৮.৪ শতাংশ থেকে ২.৮ শতাংশে নেমে এসেছে এবং শহরে তা ১০.৭ শতাংশ থেকে ১.১ শতাংশে কমেছে। ফলে গ্রাম ও শহরের দারিদ্র্য ব্যবধান উল্লেখযোগ্যভাবে সংকুচিত হয়েছে।

শেষমেশ কংগ্রেসের দাবি, দেশের অর্থনীতিতে বাড়তে থাকা বৈষম্য রুখতে জিএসটি সংস্কার, কর সংস্কারে স্বচ্ছতা, কর্পোরেট পৃষ্ঠপোষকতার অবসান এবং গরীব পরিবারগুলির জন্য আয় সহায়তার ব্যবস্থা জরুরি হয়ে পড়েছে।