আজকাল ওয়েবডেস্ক: ছত্তিশগড় সরকারের একটি সরকারি বিমানে করে হিন্দু ধর্মগুরু ধীরেন্দ্র কৃষ্ণ শাস্ত্রীকে রাজ্যের রাজধানী রায়পুরে আনা নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। চলতি সপ্তাহে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শাস্ত্রীকে সরকারি বিমানে পরিবহণ করা হয় বলে অভিযোগ ওঠার পরেই বিষয়টি রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে চলে আসে।

বিরোধী কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে কোন ক্ষমতা ও কোন প্রোটোকলের ভিত্তিতে একজন বেসরকারি ধর্মগুরুকে সরকারি বিমানের সুবিধা দেওয়া হল? অন্যদিকে, রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) ছত্তিশগড়ের উপমুখ্যমন্ত্রী বিজয় শর্মা কার্যত সরকারের সিদ্ধান্তকে প্রকাশ্যে সমর্থন করে বলেন, “ধীরেন্দ্র শাস্ত্রীজি যখনই রাজ্যে আসতে চান, আমরা তাঁকে কাঁধে করে, সম্পূর্ণ সম্মানের সঙ্গে নিয়ে আসব।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, সরকারি জেট থেকে নামার পর ধীরেন্দ্র কৃষ্ণ শাস্ত্রীকে স্যালুট করছেন এক পুলিশ আধিকারিক। শুধু তাই নয়, ওই পুলিশকর্মী নিজের বেরেট ও জুতো খুলে শাস্ত্রীর পা স্পর্শ করছেন বলেও ভিডিওতে দেখা যায়। এই দৃশ্য ঘিরেই প্রশাসনের ভূমিকা ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদার অপব্যবহার নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর দাবি অনুযায়ী, শাস্ত্রীর আগে যে ব্যক্তি বিমান থেকে নামেন, তিনি ছত্তিশগড়ের মন্ত্রী গুরু খুশবন্ত সাহেব।

কংগ্রেসের ছত্তিশগড় শাখার যোগাযোগ বিভাগের প্রধান সুশীল আনন্দ শুক্লা বলেন, “এই ঘটনা বড় প্রশ্ন তোলে কোন ক্ষমতা ও প্রোটোকলের ভিত্তিতে ধীরেন্দ্র শাস্ত্রীকে সরকারি বিমানের সুবিধা দেওয়া হল? এটি রাজকোষ থেকে সরাসরি চুরি এবং সরকারি সম্পদের অপব্যবহার। কংগ্রেস এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।”

কংগ্রেস আরও দাবি করেছে, বৃহস্পতিবার মন্ত্রী গুরু খুশবন্ত সাহেবের একটি সরকারি সফরসূচি অনুযায়ী, তিনি রাজ্যের বিমানে করে রায়পুর থেকে মধ্যপ্রদেশের সাতনা যাওয়ার কথা ছিল এবং সেখানে মাত্র আধ ঘণ্টা থাকার কথা উল্লেখ ছিল।

এই প্রসঙ্গে কংগ্রেস এক্স-এ প্রশ্ন তোলে, “সাতনা বিমানবন্দরে আধ ঘণ্টায় সম্মানীয় মন্ত্রী এমন কী গুরুত্বপূর্ণ জনকল্যাণমূলক কাজ করলেন?”

উল্লেখযোগ্যভাবে, সাতনা শহরটি মধ্যপ্রদেশের বাগেশ্বর ধাম ধীরেন্দ্র শাস্ত্রীর মূল আশ্রম থেকে গাড়িতে প্রায় তিন ঘণ্টার দূরত্বে।


তবে দ্য হিন্দু-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গুরু খুশবন্ত সাহেব এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দেন। তিনি দাবি করেন, শাস্ত্রীর সফরসংক্রান্ত প্রোটোকল এড়ানোর জন্য তিনি সাতনা গিয়েছিলেন এই অভিযোগের কোনও সত্যতা নেই।

রবিবার ভিলাইয়ে আয়োজিত একটি হনুমান কথা অনুষ্ঠানে, যেখানে ধীরেন্দ্র শাস্ত্রী উপস্থিত ছিলেন, উপমুখ্যমন্ত্রী বিজয় শর্মা কড়া ভাষায় সমালোচকদের আক্রমণ করেন।

তিনি বলেন, “যাঁরা আজেবাজে কথা বলছেন, তাঁদের বুঝতে হবে ধীরেন্দ্র শাস্ত্রীজি কোটি কোটি মানুষের বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু। তিনি যখনই ছত্তিশগড়ে আসতে চান, আমরা তাঁকে কাঁধে করে, সর্বোচ্চ সম্মানের সঙ্গে এখানে নিয়ে আসব।”

এই বক্তব্য ঘিরে প্রশাসন ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের মধ্যে সীমারেখা মুছে যাচ্ছে কি না, তা নিয়েও বিতর্ক তীব্র হয়েছে।এই বিতর্কের মধ্যেই ধীরেন্দ্র শাস্ত্রী ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলের মধ্যে বাকযুদ্ধ চলেছে। বাঘেল শাস্ত্রীকে ‘ট্রিক ও কুসংস্কারনির্ভর চিকিৎসা’র প্রচারক বলে আক্রমণ করেন। পাল্টা শাস্ত্রী বলেন, “যাঁরা হিন্দু ঐক্য, হনুমানজির বার্তা ও জাতীয়তাবাদকে কুসংস্কার মনে করেন, তাঁদের দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত।”

মধ্যপ্রদেশের বাগেশ্বর ধামের প্রধান ধীরেন্দ্র কৃষ্ণ শাস্ত্রী নিজেকে অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন ‘আরোগ্য’ ও ‘অলৌকিক নিরাময়’-এর দাবিদার হিসেবে উল্লেখ করেন। অতীতে তিনি ভারতকে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ ঘোষণার পক্ষে বক্তব্য রেখেছেন এবং ‘লাভ জিহাদ’-এর মতো দক্ষিণপন্থী ষড়যন্ত্রতত্ত্ব প্রচার করেছেন যেখানে দাবি করা হয়, কিছু মুসলিম পুরুষ পরিকল্পিতভাবে হিন্দু মহিলাদের  সম্পর্ক ও বিবাহের মাধ্যমে ধর্মান্তরের চেষ্টা করে।

সরকারি বিমানের ব্যবহার থেকে শুরু করে পুলিশের আচরণ, রাজনৈতিক আনুগত্য ও ধর্মীয় প্রভাব, সব মিলিয়ে এই ঘটনা ছত্তিশগড়ে রাষ্ট্র, ধর্ম ও ক্ষমতার সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।