আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাতভর একটানা প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত জম্মু ও কাশ্মীরের বিস্তীর্ণ এলাকা। বিভিন্ন জেলায় জলমগ্ন নিচু এলাকাগুলি, ভেঙেছে ঘরবাড়ি ও দেওয়াল, ভেসে গিয়েছে একাধিক গাড়ি। কাঠুয়া জেলার জম্মু–পাঠানকোট জাতীয় সড়কে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু ভেঙে পড়ায় বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। অধিকর্তারা জানান, লগাতে মোড়ের কাছে সাহার খাঁদ নদীর জোয়ার হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় জাতীয় সড়কের মাঝ বরাবর ভেঙে পড়ে একটি সেতু। তীব্র স্রোতের কারণে সাহার খাঁদের উপর থাকা দুটি সেতুতেই যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিকল্প রাস্তায় গাড়ি ঘোরানো হয়েছে। কাঠুয়ার জেলা শাসক রাজেশ শর্মা জানান, পুরনো সেতুটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নতুন সেতুতেও দুর্বলতার লক্ষণ দেখা গেছে।
তিনি বলেন, ‘পুরনো সেতুতে গুরুতর ক্ষতি হয়েছে। নতুনটির অবস্থাও সন্দেহজনক মনে হওয়ায় আমরা তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দিই। হাইওয়ে কর্তৃপক্ষ ও তাঁদের ইঞ্জিনিয়াররা পরিদর্শনে আসছেন, তার পরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ বৃষ্টির জেরে জম্মু শহরের একাধিক এলাকা পুরোপুরি জলমগ্ন। জানিপুর, রূপ নগর, তালাব টিল্লু, জুয়েল চৌক, নিউ প্লট ও সঞ্জয় নগরে ঘরে ঘরে জল ঢুকে পড়েছে। বেশ কিছু বাড়ির পাঁচিল ভেঙে পড়েছে, প্রায় এক ডজন গাড়ি ভেসে গেছে বন্যার জলে। আবহাওয়া দপ্তর ২৭ আগস্ট পর্যন্ত মাঝারি থেকে প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। সেই সঙ্গে জারি হয়েছে মেঘভাঙা, আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের সতর্কবার্তা। প্রশাসন মানুষকে নদী, খাল ও ভূমিধস–প্রবণ এলাকা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
আরও পড়ুন: ছুরি দিয়ে খুন করে তাতেই কেট কাটলেন! বোন কে হেনস্থার হাড়হিম বদলা ভাইয়ের, জানলে শিউরে উঠবেন
তবে প্রবল বর্ষণ সত্ত্বেও ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ জম্মু–শ্রীনগর জাতীয় সড়ক ও ৪৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ শ্রীনগর–লেহ সড়ক চালু রয়েছে। কিন্তু ভূমিধসের কারণে পুঞ্চ ও রাজৌরিকে শোপিয়ানের সঙ্গে যুক্ত করা মুঘল রোড এবং কিশ্তোয়ার ও ডোডাকে আনন্তনাগের সঙ্গে যুক্ত করা সিন্থান রোড বন্ধ রাখতে হয়েছে বলেন জানা গিয়েছে। কাঠুয়ায় উঝ ও রাভি নদীর জল বিপজ্জনক মাত্রায় ফুলে উঠেছে। পাশাপাশি সাম্বায় বসন্তর নদী, ডোডা, কিশ্তোয়ার, রামবান ও জম্মুর চেনাব নদী এবং উদমপুর ও জম্মুর তাওয়ি নদীর জলস্তর হঠাৎই বেড়ে গেছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর ও পুলিশকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় শুক্রবার গভীর রাতে মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। থারালি বাজার, কোটদীপ ও থারালি তহসিল কমপ্লেক্সে জল ও কাদামাটির স্রোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে খবর স্থানীয় সূত্রে। বহু বাড়িঘর, এসডিএমের বাসভবন এবং অন্যান্য সরকারি ভবনও ক্ষতির মুখে পড়েছে। অন্যান্য জায়গার ধ্বংসাবশেষ ঢুকে গিয়েছে সরকারি ভবনগুলিতে। তহসিল কমপ্লেক্সে পার্ক করা একাধিক গাড়ি কাদামাটির নিচে চাপা পড়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
শহরের রাস্তাগুলি মুহূর্তের মধ্যেই পরিণত হয়েছে ব্যাপক বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গেই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, স্থানীয় বাসিন্দারা বাড়িঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। তড়িঘড়ি উদ্ধার ও ত্রাণকাজ শুরু করেছে পুলিশ ও প্রশাসন। চেপডাউন বাজারের বেশ কিছু দোকানও ধ্বংসস্তূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী। তিনি এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘চামোলির থারালি এলাকায় মেঘভাঙা বৃষ্টির দুঃখজনক খবর পাওয়া গিয়েছে। জেলা প্রশাসন, এসডিআরএফ ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজে নেমেছে’।
