আজকাল ওয়েবডেস্ক: স্টেশনে লোকাল ট্রেনটা পৌঁছাতে মাত্র কয়েক মিনিটের দেরি হয়েছিল। আর সেই সামান্য দেরিই মঙ্গলবার রাতে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে দিল সন্তোষ শেলারকে। মুম্বইয়ের ভান্ডুপ স্টেশনের বাইরে যখন বেস্ট বাসের ধাক্কায় চার জন যাত্রী প্রাণ হারাচ্ছেন, সন্তোষ তখন সবে ট্রেন থেকে নামছেন।
মঙ্গলবার রাত তখন প্রায় ১০টা ৫। ভান্ডুপ স্টেশনের ঠিক বাইরে ৬০৬ নম্বর বাসের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন নিত্যযাত্রীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাসটি ঘুরিয়ে ডিপোর ভেতরে ঢোকানোর চেষ্টা করছিলেন চালক সন্তোষ রমেশ সাওয়ান্ত (৫২)। ঠিক সেই সময়েই ব্রেকের বদলে ভুল করে এক্সিলারেটরে পা দিয়ে ফেলেন তিনি। মুহূর্তের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি পিছন দিকে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের ভিড়ে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় চার জনের, আহত হন কমপক্ষে ন’জন।
সন্তোষ শেলার প্রতিদিন ঠিক রাত ৯টা ৫০ মিনিটের মধ্যে ভান্ডুপ স্টেশনে পৌঁছে যান। কিন্তু মঙ্গলবার তাঁর ট্রেনটি কিছুটা দেরিতে চলায় তিনি স্টেশনে পৌঁছান রাত ১০টা ৫ নাগাদ। সন্তোষ বলেন, “বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে যা দেখলাম, তা ভাবলে এখনও গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। আমি ঠিক যে জায়গায় লাইনে দাঁড়াই, সেখানেই দুর্ঘটনাটা ঘটেছে। ট্রেন দেরি না করলে আজ হয়তো আমিও ওই বাসের তলায় থাকতাম।”
দুর্ঘটনার বিকট শব্দ শুনেই ছুটে আসেন আশপাশের দোকানদাররা। কেউ আহত যাত্রীদের জল খাওয়ান, কেউ আবার বাসের তলা থেকে রক্তাক্ত যাত্রীদের বের করার কাজে হাত লাগান। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ফুটপাথ জুড়ে হকারদের দাপটে যাত্রীদের রাস্তার ওপর লাইনে দাঁড়াতে হয়। সেই ভিড়ের কারণেই বাস ঘোরাতে সমস্যা হচ্ছিল চালকের।
বৃহন্মুম্বই ইলেকট্রিক সাপ্লাই অ্যান্ড ট্রান্সপোর্টের জনসংযোগ আধিকারিক সুচেতা উতালে জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার সময় বাসটির চালক ছিলেন ৫২ বছরের সন্তোষ রমেশ সাওয়ান্ত এবং কনডাক্টর ছিলেন ৪৭ বছরের ভগবান ভাউ ঘারে ৷ ভরা রাস্তায় বাসটি পিছনের দিকে ঘোরানোর সময়েই দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনার পরই বাসের চালককে আটক করা হয়৷ তাঁর বিরুদ্ধে একটি এফআইআরও রুজু করা হয়েছে। বাসটি কী কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল, চালকের ত্রুটি ছিল কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
দুর্ঘটনার পরেই এক্স হ্যান্ডেলে শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মৃতদের পরিবার পিছু পাঁচ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন তিনি। তিনি আরও লিখেছেন, 'মুম্বইয়ের ভান্ডুপে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় অত্যন্ত শোকাহত। যাঁরা তাঁদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন তাঁদের প্রতি সমবেদনা। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি৷'
অন্যদিকে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশ ঘটনাটিকে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বলে এক্স পোস্টে নিহতদের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, 'রাজ্য সরকার নিহতদের আইনি উত্তরাধিকারীদের পাঁচ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে।'
