আজকাল ওয়েবডেস্ক: হরিয়ানার ভোটার তালিকা নিয়ে শুরু হয়েছে প্রবল বিতর্ক। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর অভিযোগ, এক ব্রাজিলিয়ান তরুণীর ছবিকে ব্যবহার করে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় নাকি তৈরি হয়েছে অন্তত ২২টি ভুয়ো ভোটার কার্ড। তাঁর দাবি, “একই মহিলার ছবি দিয়ে সীমা, সুইটি, রশ্মি, বিমলা— এইরকম নানা নামে ২২টি এপিক কার্ড তৈরি হয়েছে।” কংগ্রেসের বক্তব্য, এটি শুধু প্রযুক্তিগত ত্রুটি নয়, বরং কেন্দ্রীয় পর্যায়ের একটি সুচিন্তিত জালিয়াতি, যাতে নির্বাচন কমিশন নীরব থেকে বিজেপিকে সুবিধা দিচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বিশ্বভারতীতে অনুষ্ঠিত বাণিজ্য শিক্ষা সম্মেলন ২০২৫-এর মঞ্চ থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার রাহুলের অভিযোগকে কটাক্ষ করে বলেন, “এর আগে পশ্চিমবঙ্গের ভোটার লিস্টে ওসামা বিন লাদেনের ছবিও পাওয়া গিয়েছিল! সরকারি কাজে এমন ভুল হতেই পারে। অনেক সময় ডেটা আপলোডের সময় কর্মীরা ভুল করে ফেলেন।” তাঁর আরও দাবি, “রাহুল গান্ধী বাস্তবের রাজনীতি বোঝেন না। এসি রুমে বসে থেকে মাঠের রাজনীতি করা যায় না।”
তবে এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার। তাঁর বক্তব্য, “ভোটার তালিকার ভুলকে হালকাভাবে নেওয়া যায় না। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বই হলো এমন ভুল ঠেকানো। কমিশনের এই অবহেলা গণতন্ত্রের ভিত্তিকে নড়বড়ে করছে।” তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, “২৭ ফেব্রুয়ারি নেতাজি ইন্ডোরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই কমিশনের কাজকর্ম নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। আজ তাঁর আশঙ্কাই সত্যি হচ্ছে।”
এদিকে নির্বাচন কমিশন সূত্রের বক্তব্য, “যদি একই ব্যক্তি বারবার ভোট দেন, তা ধরার দায়িত্ব প্রথমত বুথে উপস্থিত রাজনৈতিক দলের এজেন্টদেরই।” অর্থাৎ, কমিশনের তরফে দায়িত্ব এড়ানোর ইঙ্গিত মিলছে।
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু রাহুলের অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁর ভাষায়, “বিহারে ভোট হচ্ছে, অথচ উনি হরিয়ানার গল্প শুনিয়ে মনোযোগ সরাতে চাইছেন। ভোটের ফল ভালো না হলেই এইসব বানানো গল্প বের হয়।”
এই ঘটনার মধ্যেই সারা দেশে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে SIR নিয়ে। সরকারের এই কেন্দ্রীয় ডিজিটাল পরিচয় ব্যবস্থাকে অনেকে ‘ভোটার তালিকার আধুনিক সংস্করণ’ বলে দেখছেন। কিন্তু বিরোধীরা আশঙ্কা করছেন, যদি ভোটার তথ্যের এমন অপব্যবহার হরিয়ানায় হতে পারে, তাহলে জাতীয় স্তরের SIR প্রকল্পও গোপনীয়তা ও ভোটাধিকার সুরক্ষার প্রশ্নে নতুন বিপদের ইঙ্গিত বহন করছে।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কেন্দ্রে থাকা ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’ নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠছে— ভোটের অধিকার কি নিরাপদ, নাকি প্রযুক্তির ছায়ায় তার স্বচ্ছতা ক্রমে মুছে যাচ্ছে?
