আজকাল ওয়েবডেস্ক: রূপের প্রতি চরম ঈর্ষা এবং বিদ্বেষ। সেই ভয়ঙ্কর মানসিকতার শিকার হতে হলো চার-চারটি শিশুকে। তাদের মধ্যে রয়েছে অভিযুক্তের নিজের ছেলেও। হরিয়ানায় এই মর্মান্তিক খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত পুনম নামের এক মহিলাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ অনুমান করছে, অভিযুক্ত মহিলাদের সৌন্দর্যের প্রতি এতটাই হিংসা করত যে সে একের পর এক শিশুকন্যাকে টার্গেট করেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত পুনম প্রথম খুনের চেষ্টা করেছিল ২০২১ সালে। সে বার তার শিকার হওয়ার কথা ছিল ভাইঝি বিদ্ধি। তখন বিদ্ধির বয়স ছিল মাত্র দু’বছর। জানা গিয়েছে, পুনম শিশুটির মুখে এক কেটলি গরম চা ঢেলে দিয়েছিল। সে যাত্রায় শিশুটি প্রাণে বাঁচলেও, তার বাবা ওই ঘটনাকে নিছকই দুর্ঘটনা বলে মেনে নেন।

কিন্তু, গত সোমবারের আক্রমণ থেকে আর বাঁচানো যায়নি বিদ্ধিকে। একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে সেজেগুজে ছিল মাত্র  ছ’বছরের বিদ্ধি। তাকে জলভর্তি বালতিতে ডুবিয়ে হত্যা করে পুনম। জানা গিয়েছে, মৃতদেহটি এমন ভাবে ফেলে রাখা হয় যাতে পরিবারের সবচেয়ে প্রবীণ সদস্য, অর্থাৎ ঠাকুমা এসে তা দেখতে পান।

খবর অনুযায়ী, গত চার বছরে পুনম মোট চারটি শিশুকে খুন করেছে বলে অভিযোগ। পুলিশ মনে করছে, খুন হওয়া তিন শিশুকন্যা, বিদ্ধি, জিয়া এবং ইশিকা- তার চেয়ে ‘বেশি সুন্দর’ ছিল। তাই ‘বিউটি কমপ্লেক্স’ থেকেই সে তাদের খুন করেছে। যদিও তার নিজের ছেলে, চার বছরের শুভমকে কেন খুন করা হলো, তা নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে। পাশাপাশি পুলিশ অনুমান করছে, অভিযুক্তের ২০২৩ সালে নিজের সন্তান শুভমের খুন অত্যন্ত চালাকি পদক্ষেপ। প্রথম খুনের পর পুনমের ওপর যে সন্দেহ তৈরি হচ্ছিল, সেই সন্দেহ থেকে নজর ঘোরাতে সে এই কাজ করে।

 একের পর এক শিশুহত্যা করে গিয়েছে অভিযুক্ত৷  ২০২৩ সালে প্রথম খুন ন'বছরের ইশিকা, ননদের মেয়েকে। ওই একই সালে দ্বিতীয় অভিযুক্তের নিজের চার বছরের ছেলে  শুভমকে। এরপর তৃতীয় খুন আট বছরের জিয়াকে। জানা গিয়েছে জিয়া অত্যন্ত সুন্দরী ছিল। থামেনি অভিযুক্ত। চতুর্থ খুন ভাইঝি ছ বছরের বিদ্ধিকে।

এই সপ্তাহেই পুনমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, জিজ্ঞাসাবাদের মুখে সে তার সব অপরাধ স্বীকার করেছে। বিদ্ধি খুনের বর্ণনা দিতে গিয়ে পুনম জানিয়েছে, বিয়ের অনুষ্ঠানে সবাই ব্যস্ত ছিলেন। সেই সুযোগে সে শিশুটিকে ভাঁড়ার ঘরে নিয়ে যায়। তার আস্থা অর্জন করে একটি জলের বালতিতে দাঁড় করায়। এর পর জোর করে তার মাথা ধরে ডুবিয়ে রাখে, যতক্ষণ না শিশুটি নিস্তেজ হয়ে যায়। বিদ্ধির বাবা সন্দীপ জানিয়েছেন, তিনি প্রথম থেকেই পুনমকে সন্দেহ করতেন, কিন্তু পরিবারের বাকিরা তাঁর কথা শোনেননি। তিনি অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ডের দাবি করে বলেন, “ওর রূপের প্রতি হিংসা ছিল, সেই বিদ্বেষেই আমার মেয়েকে মারল। ও যদি ধরা না পড়ত, তা হলে হয়তো আমার ছেলেকেও খুন করত।”

হাড়হিম এই  ঘটনায় রীতিমত স্তম্ভিত গোটা হরিয়ানা। আর কত শিশুর জীবন বিপন্ন হতে পারত, সেই ভাবনায় আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারাও।