আজকাল ওয়েবডেস্ক: পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিতই ছিলেন না নাইটক্লাবের মালিক। সরু গলি পেরিয়ে নির্জন এলাকায় নাইটক্লাব। ছিল না যথাযথ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। আর এই গাফিলতিতেই বেঘোরে প্রাণ হারালেন ২৫ জন। রাতভর হুল্লোড়ের প্ল্যান ছিল সকলের। মালিক, ম্যানেজারের ত্রুটিতেই দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলেন পর্যটকরা। 

রবিবার ভোরেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী ড. প্রমোদ সাওয়ান্ত। তিনি এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বির্চ বাই রোমিও লেন নাইটক্লাবের মালিক ও ম্যানেজারের বিরুদ্ধে নিরাপত্তায় গাফিলতির অভিযোগে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। শীঘ্রই মালিক ও ম্যানেজারকে গ্রেপ্তার করা হবে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ চিহ্নিত করতে, পুরো ঘটনার ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, নর্থ গোয়ার পানাজি থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আরপোরা গ্রামে বির্চ বাই রোমিও লেন নাইটক্লাব। শতাধিক পর্যটক, কর্মীরা ছিলেন গতকাল রাতে। ডিজে পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল। ডান্স ফ্লোর মাতিয়ে রেখেছিলেন পর্যটকরা। খাবারের আয়োজনেও ব্যস্ত ছিলেন কর্মীরা। সেই সময়েই ঘটে বিপত্তি। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাত একটা নাগাদ দাউদাউ আগুন ছড়িয়ে পড়ে ডান্স ফ্লোরে। বেশিরভাগ পালিয়ে যান কোনও মতে। পালাতে গিয়েও হুড়োহুড়ি শুরু হয়। কারণ, নাইটক্লাবের এক্সিট গেটের পথ অত্যন্ত সরু। যেখান থেকে তাড়াহুড়োতে পালিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। অন্যদিকে কয়েকজন পর্যটক ও কর্মীরা পালাতে না পেরে নাইটক্লাবের বেসমেন্টে ঠাঁই নেন। সেখানেই দমবন্ধ হয়ে অধিকাংশের মৃত্যু হয়েছে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আরপোরা নদীর পিছনেই ছিল এই নাইটক্লাব। এন্ট্রি ও এক্সিটের পথ ছিল সরু। মূল সড়কের পাশে সরু রাস্তা দিয়ে পৌঁছনো যেত এই 'আইল্যান্ড ক্লাব'-এ। দমকলের ইঞ্জিন নাইটক্লাব পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি। ৪০০ মিটার দূরে দাঁড়িয়েই দমকলের একাধিক ইঞ্জিন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ওই বেসমেন্ট থেকে ২৫ জনের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ ও দমকল বাহিনী। 

আরপোরা-নাগোয়া পঞ্চায়েতের প্রধান রোশন রেডকার বলেন, 'ক্লাবটি সৌরভ লুথরা পরিচালনা করতেন৷ সঙ্গীর সঙ্গে তাঁর বিরোধ ছিল। তাঁরা একে অপরের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েতে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। আগেই ওই এলাকা পরিদর্শন করে দেখেছি, তাঁদের ক্লাবটি নির্মাণের অনুমতি ছিল না। পঞ্চায়েত এটি ভাঙার নোটিশ জারি করেছিল। এরপর পঞ্চায়েত অধিদপ্তরের আধিকারিকরা তা স্থগিত করেছিলেন। প্রাঙ্গণের মূল মালিক লুথরাকে জায়গাটি ভাড়া দিয়েছিলেন৷' 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, বির্চ বাই রোমিও লেন নামের জনপ্রিয় নাইটক্লাব কোনও এনওসি জমা দেয়নি। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও ছিল না। এমার্জেন্সি এক্সিটের ব্যবস্থাও ছিল না বেসমেন্টে। জানা গেছে, একতলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে। বাঁচার জন্য অনেকেই বেসমেন্টে ঠাঁই নিয়েছিলেন। বেসমেন্টে ছিল না ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা। ছিল না এক্সিট গেট। সেখানেই আটকে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। 

গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, মৃতদের মধ্যে তিনজন অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।‌ বাকিদের মৃত্যু হয়েছে দমবন্ধ হয়ে। মৃতদের মধ্যে তিনজন পর্যটক ছিলেন। ১৪ জন ওই নাইটক্লাবের কর্মী ছিলেন। বাকি পরিচয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। 

গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী ড. প্রমোদ সাওয়ান্ত এক্স হ্যান্ডেলে জানিয়েছেন, 'প্রাথমিক তদন্তের পর জানা গেছে, গোয়ার আরপোরায় নাইটক্লাবে যথাযথ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। নাইটক্লাবের ম্যানেজমেন্টের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও যে সকল আধিকারিকরা নাইটক্লাবের জন্য ছাড়পত্র দিয়েছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ করা হবে। ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা হবে। দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির পদক্ষেপ করা হবে।'