আজকাল ওয়েবডেস্ক: সিলিন্ডার বিস্ফোরণের জেরে গোয়ার নাইটক্লাবে আগুন লাগেনি। রবিবারেই ঘোষণা করেছিলেন গোয়ার ডিজিপি। কারণ নাইটক্লাব থেকে সিলিন্ডারগুলি অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। সোমবার পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা জানালেন, বৈদ্যুতিক আতশবাজি থেকে নাইটক্লাবে আগুন ছড়াতে পারে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে অগ্নিকাণ্ড থেকে কোনও মতে বেঁচে যাওয়া দিল্লির পর্যটক রিয়া দাবি জানান, ডান্স ফ্লোরে নৃত্যশিল্পীরা যখন নাচ করছিলেন, তখন চারদিকে আতশবাজি ফাটছিল ৷ যা থেকে আগুন লাগতে পারে। ডান্স ফ্লোরের উপরেই আগুনের ফুলকি দেখা গিয়েছিল তখন। তারপরেই হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল ৷
এদিকে গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী ড. প্রমোদ সাওয়ান্ত সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তের পর জানা গিয়েছে, নাইটক্লাবের ড্রান্স ফ্লোরের ভিতরেই বৈদ্যুতিক আতশবাজি পোড়ানো হয়েছিল৷ তার জেরেই ক্লাবটিতে আগুন লেগে যায়। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত নাইটক্লাবের প্রধান পরিচালক রাজীব মোদক, পরিচালক বিবেক সিং, বার ম্যানেজার রাজীব সিংহানিয়া এবং গেট ম্যানেজার রিয়াংশু ঠাকুরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷
আরও জানা গেছে, নাইটক্লাবে মৃতদের মধ্যে ২০ জন কর্মী ছিলেন এবং পাঁচজন পর্যটক ছিলেন। মৃত কর্মীরা মূলত উত্তরাখণ্ড, ঝাড়খণ্ড, অসম, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। মৃতদের মধ্যে চারজন নেপালি নাগরিক ছিলেন। নিহতদের মৃতদেহ তাঁদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী।
নর্থ গোয়ার আরপোরায় বির্চ বাই রোমিও লেন নাইটক্লাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরেই অবৈধ কর্মকাণ্ড, সরকারি আধিকারিকদের নিয়মকানুন প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিস্তর গাফিলতি প্রকাশ্যে এসেছে। খোদ মুখ্যমন্ত্রীই জানিয়েছেন, গোয়ার পর্যটনের ইতিহাসে এ ঘটনা প্রথমবার ঘটেছে। নাইটক্লাবের কাছে অগ্নিনির্বাপণ বিভাগের কোনও এনওসি ছিল না। তা সত্ত্বেও ঘিঞ্জি এলাকায় আতশবাজি পোড়ানো হচ্ছিল। শনিবার রাত পৌনে ১২টা নাগাদ নাইটক্লাবের ভিতরে বৈদ্যুতিক আতশবাজি বিস্ফোরণের ফলেই অগ্নিকাণ্ডটি ঘটে।
বর্ষশেষের উদযাপনে মেতে উঠেছে গোয়া। বির্চ বাই রোমিও লেন নাইটক্লাবেও চোখধাঁধানো সজ্জা ছিল। স্ট্র, প্লাস্টিকের পাতা, ফুল, বৈদ্যুতিক বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছিল ফ্লোরগুলি। ডান্স ফ্লোরের উপরে সেই বৈদ্যুতিক আতশবাজি থেকে আগুন লাগে। যা প্রথমে কারও নজরে পড়েনি। ক্রমেই সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। নিমেষের মধ্যে গোটা নাইটক্লাবে দাউদাউ আগুন ছড়িয়ে পড়ে। যে জিনিসগুলি দিয়ে নাইটক্লাব সাজানো হয়েছিল, তার জেরেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডটি ঘটেছে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, নর্থ গোয়ার পানাজি থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আরপোরা গ্রামে বির্চ বাই রোমিও লেন নাইটক্লাব। শতাধিক পর্যটক, কর্মীরা ছিলেন শনিবার রাতে। ডিজে পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল। ডান্স ফ্লোর মাতিয়ে রেখেছিলেন পর্যটকরা। খাবারের আয়োজনেও ব্যস্ত ছিলেন কর্মীরা। সেই সময়েই ঘটে বিপত্তি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাত একটা নাগাদ দাউদাউ আগুন ছড়িয়ে পড়ে ডান্স ফ্লোরে। বেশিরভাগ পালিয়ে যান কোনও মতে। পালাতে গিয়েও হুড়োহুড়ি শুরু হয়। কারণ, নাইটক্লাবের এক্সিট গেটের পথ অত্যন্ত সরু। যেখান থেকে তাড়াহুড়োতে পালিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। অন্যদিকে কয়েকজন পর্যটক ও কর্মীরা পালাতে না পেরে নাইটক্লাবের বেসমেন্টে ঠাঁই নেন। সেখানেই দমবন্ধ হয়ে অধিকাংশের মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আরপোরা নদীর পিছনেই ছিল এই নাইটক্লাব। এন্ট্রি ও এক্সিটের পথ ছিল সরু। মূল সড়কের পাশে সরু রাস্তা দিয়ে পৌঁছনো যেত এই 'আইল্যান্ড ক্লাব'-এ। দমকলের ইঞ্জিন নাইটক্লাব পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি। ৪০০ মিটার দূরে দাঁড়িয়েই দমকলের একাধিক ইঞ্জিন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ওই বেসমেন্ট থেকে ২৫ জনের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ ও দমকল বাহিনী।
