আজকাল ওয়েবডেস্ক: কুখ্যাত অপরাধী লরেন্স বিষ্ণইয়ের ছোট ভাই ও গ্যাংস্টার অমল বিষ্ণইকে প্রায় এক বছর পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বুধবার দিল্লিতে অবতরণের সঙ্গে সঙ্গেই জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) তাকে হেফাজতে নেয় এবং পরে পাটিয়ালা হাউস কোর্টে পেশ করে। সংস্থা তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক বড় অপরাধ মামলার তদন্তে হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করেছে।

অমল বিষ্ণইকে গত বছরের নভেম্বর মাসে মার্কিন কর্তৃপক্ষ আটক করে। সম্প্রতি কয়েকজন ভারতীয় নাগরিককে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ‘রিমুভ’ করার অংশ হিসেবে তাঁকেও ভারতে পাঠানো হয়। তাঁর প্রত্যাবর্তনকে ভারতীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি বড় অগ্রগতি বলে মনে করছে, কারণ দীর্ঘদিন ধরে তাঁকে বিশ্নোই অপরাধ চক্রের আন্তর্জাতিক শাখার গুরুত্বপূর্ণ পরিচালনাকারী হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছিল।

লরেন্স বিষ্ণই জেল থেকেই এই নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করে বলে অভিযোগ। দেশজুড়ে চাঁদাবাজি, টার্গেট কিলিং, অস্ত্র সরবরাহ—এমন নানা অপরাধচক্রের সঙ্গে এই নেটওয়ার্কের যোগ রয়েছে বলে তদন্তকারী সংস্থার দাবি।

অমল বিষ্ণইর  বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর মামলাটি হল ১২ অক্টোবর ২০২৪-এ মুম্বইয়ের বান্দ্রায় এনসিপি নেতা ও প্রাক্তন মন্ত্রী বাবা  সিদ্দিকির হত্যাকাণ্ড। সিদ্দিকির ছেলে জিশানের অফিসের সামনে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে তাঁকে হত্যা করে শ্যুটাররা। ঘটনাটি মুম্বইয়ের পুরনো গ্যাং-ওয়ারের স্মৃতি ফিরিয়ে আনে এবং শহরে ‘চুক্তিভিত্তিক রাজনৈতিক খুন’ এখনও সক্রিয় কিনা সেই প্রশ্ন তোলে।

মুম্বই পুলিশ ইতিমধ্যে বিষ্ণই নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত ২৬ জনকে গ্রেপ্তার  করেছে এবং মহারাষ্ট্রের সংগঠিত অপরাধ দমন আইন (MCOCA) প্রয়োগ করেছে। অমল, শুভম লোঙ্কার ও জিশান মহম্মদ আখতারকে অভিযুক্ত হিসেবে নাম করা হয়েছে।

২০২৪ সালের এপ্রিলে অভিনেতা সলমন খানের গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে গুলিবর্ষণের ঘটনাতেও অমলকে খোঁজা হচ্ছে। পুলিশ মনে করছে, এটি ছিল গ্যাংয়ের ক্ষমতা ও পরিধি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে করা একটি বার্তা।

২০২২ সালের মে মাসে পাঞ্জাবের মানসায় জনপ্রিয় গায়ক সিদ্ধু মুসেওয়ালাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল। তদন্তে উঠে আসে বিদেশে বসে থাকা গ্যাংস্টাররা ভারতের ভিতর থেকে শ্যুটার নিয়োগ করে অপারেশন চালাচ্ছে। অমোলের বিরুদ্ধে দিল্লি, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান ও মহারাষ্ট্রে এক ডজনের বেশি মামলা রয়েছে।

তদন্তকারী কর্মকর্তাদের দাবি, অমোল বিদেশে বসে এনক্রিপটেড অ্যাপ ব্যবহার করে চাঁদাবাজির হুমকি দিতেন, শ্যুটারদের নির্দেশ দিতেন এবং হামলার পরিকল্পনা করতেন। বিদেশে বসে তাঁর বারবার ‘দায় স্বীকার’-এর বার্তা গ্যাংয়ের ভিতরে তাঁর প্রতীকী অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছিল। তাঁকে দেশে ফেরানোয় সংস্থাগুলি মনে করছে, গ্যাংয়ের আন্তর্জাতিক পরিচালনা ভেঙে পড়বে এবং অর্থের উৎস ও অস্ত্র সরবরাহ চক্র সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে।

অমল বিষ্ণইয়ের দেশে প্রত্যাবর্তন শুধু এক ‘পলাতক’ গ্রেপ্তারের  ঘটনা নয়। এটি তদন্তকারীদের সামনে সেই বড় সুযোগ এনে দিয়েছে, যেখানে বোঝা যাবে একটি দেশীয় অপরাধচক্র কীভাবে ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কে পরিণত হয়েছিল।

আগামী দিনগুলিতে এনআইএ তাঁকে বাবা সিদ্দিকি হত্যা, সলমন খান গুলিবর্ষণ, সিদ্ধু মুসেওয়ালা হত্যা ও গোটা বিশ্নোই সিন্ডিকেটের কাঠামো নিয়ে বিস্তৃতভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। কর্মকর্তাদের আশা, তাঁর স্বীকারোক্তি ও জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে ভারতের অন্যতম কুখ্যাত অপরাধ নেটওয়ার্ককে ভেঙে ফেলার পথ খুলে যেতে পারে।