আজকাল ওয়েবডেস্ক: গুজরাটের বডোদরার নাভাপুরা থানার এলাকায় এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। অভিযোগ, বিয়ের মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই এক ৪০ বছর বয়সি গৃহবধূকে তাঁর শ্বশুর এবং ননদের স্বামী বারবার ধর্ষণ করেছে। আরও চাঞ্চল্যকর অভিযোগ—গৃহবধূর স্বামী নিজেই এই ঘটনার বিষয়ে জানতেন, কিন্তু মুখ খোলার বদলে স্ত্রীর নগ্ন ছবি ফাঁস করার ভয় দেখিয়ে চুপ থাকতে বলেন।
জানা গেছে, সন্তান জন্মদানের অজুহাতে ধর্ষণ। পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্তার বিয়ে হয়েছিল ফেব্রুয়ারি ২০২৪-এ। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই শ্বশুরবাড়ির লোকেরা জানায়, বয়স বেশি হওয়ার কারণে হয়তো গৃহবধূর সন্তানধারণে অসুবিধা হবে। চিকিৎসা পরীক্ষার পর জানা যায়, আসলে স্বামীর শুক্রাণুর সংখ্যা অত্যন্ত কম। চিকিৎসকের পরামর্শে গৃহবধূ ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) করান, তবে ফল মেলেনি। গৃহবধূ সন্তান দত্তক নেওয়ার প্রস্তাব দিলেও পরিবারের লোকজন তা মানতে চাননি। এর পর থেকেই শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন। অভিযোগ, জুলাই ২০২৪-এ গভীর রাতে গৃহবধূর ঘরে ঢুকে তাঁকে প্রথমবার ধর্ষণ করে শ্বশুর। চিৎকার করলে মারধরও করা হয় তাঁকে। ঘটনা স্বামীকে জানালে উল্টে স্বামীই হুমকি দেন যে, কারও কাছে মুখ খুললে তাঁর ব্যক্তিগত ছবি ছড়িয়ে দেবেন।
পরবর্তীতে একাধিকবার ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করে শ্বশুর। তেল দিয়ে উভয়ের যৌনাঙ্গ মালিশ করিয়েও ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। সন্তান না হওয়ায় ডিসেম্বর ২০২৪-এ ননদের স্বামীও তাঁকে ধর্ষণ করা শুরু করে বলে অভিযোগ। কয়েক মাস পর গৃহবধূ গর্ভবতী হন, কিন্তু জুনে গর্ভপাত হয়ে যায়। অবশেষে গত জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে তিনি সাহস সঞ্চয় করে পুলিশের দ্বারস্থ হন। প্রাথমিক তদন্তের পর রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে এফআইআর নথিভুক্ত করে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, নির্যাতিতার পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না, কারণ যৌন হেনস্থার মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই ভুক্তভোগীর গোপনীয়তা রক্ষা করতে হয়।
অনুরূপ একটি ঘটনা কলকাতায়
এর আগে পূর্ব কলকাতার নারকেলডাঙা থানা এলাকায় প্রায় একরকম ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল। সেখানে এক নববধূ অভিযোগ করেছিলেন, বিয়ের তিন মাসের মধ্যেই তাঁকে বারবার ধর্ষণ করেছে তাঁরই শ্বশুর। অভিযোগ, ‘তেল মালিশ’ করার অজুহাতে শ্বশুর তাঁকে ঘরে ডেকে নিয়ে অকথ্য যৌন নির্যাতন চালাত। স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির অন্য সদস্যদের বিষয়টি জানালেও কোনও সাহায্য পাননি তিনি। উল্টে তাঁকে মুখ বন্ধ রাখার হুমকি দেওয়া হয়।
শেষ পর্যন্ত নির্যাতিতা এক আত্মীয়কে ফোন করে সব জানান। তাঁর দাদা ১০০ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁকে উদ্ধার করে এবং মেডিক্যাল পরীক্ষার ব্যবস্থা করে। অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত শ্বশুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতে গোপন জবানবন্দি দেওয়ারও সুযোগ দেওয়া হয় গৃহবধূকে। উভয় ক্ষেত্রেই পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। পাশাপাশি নির্যাতিতার শারীরিক ও মানসিক সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এই ধরনের ঘটনা সমাজে নারীর নিরাপত্তা ও পারিবারিক নির্যাতনের প্রশ্নে নতুন করে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভয়, সামাজিক লজ্জা এবং পরিবারের চাপে গৃহবধূরা মুখ খুলতে পারেন না। তাই আইনজীবী এবং মহিলা সংগঠনগুলির দাবি—পুলিশ ও আদালতকে আরও সংবেদনশীল হতে হবে এবং ভুক্তভোগীদের দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
