আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতীয় রেল সম্প্রতি যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। চলতি মাসে ঘোষণা করা হয়েছে, খুব শিগগিরই দেশের প্রতিটি যাত্রীবাহী কোচে চারটি করে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং প্রতিটি লোকোমোটিভে ছ'টি করে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে। এর ফলে ট্রেনে যাত্রীদের নিরাপত্তা আগের তুলনায় অনেকাংশে বাড়বে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। এতদিন শুধুমাত্র বন্দে ভারত,অমৃত ভারত ও বন্দে মেট্রো ট্রেনেই ক্যামেরা ছিল। এবার থেকে দেশের সব কোচ ও ইঞ্জিনই নজরদারির আওতায় আসছে বলে খবর।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর,রেল মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে পরীক্ষামূলকভাবে উত্তর রেলের কিছু ট্রেন ও ইঞ্জিনে সিসিটিভি বসানো হয়। যথেষ্ট ইতিবাচক ফলাফল এসছে বলে খবর। সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই রেলমন্ত্রী স্বয়ং ৭৪,০০০ কোচ এবং ১৫,০০০ লোকোমোটিভে ক্যামেরা বসানোর অনুমোদন দিয়েছেন।
রেল মন্ত্রক আরও জানিয়েছে, প্রতিটি যাত্রীবাহী কোচে চারটি ডোম টাইপ সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে। এর মধ্যে দুটি থাকবে প্রবেশপথে। অন্যদিকে, প্রতিটি লোকোমোটিভে ছ'টি ক্যামেরা থাকবে। খবর অনুযায়ী সামনে, পেছনে, দুই পাশে এবং প্রতিটি কামরার ভেতরে একটি করে ডোম ক্যামেরা ও দুটি ডেস্ক মাউন্টেড মাইক্রোফোন বসানো হবে। পাশাপাশি যাত্রীদের গোপনীয়তা বজায় রাখতে ক্যামেরা শুধুমাত্র সাধারণ চলাচলের জায়গা ও দরজার কাছে বসানো হবে। এইভাবে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে জানান হয়েছে।
রেল মন্ত্রকের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, রাতে যাত্রা করা মহিলারা বিশেষ করে একা যাত্রা করাকালীন অনেক সময় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এই ক্যামেরাগুলি সেই সমস্যা অনেকটাই দূর করবে। ক্যামেরার মাধ্যমে রিয়েল টাইমে নজরদারি চলবে। সমস্ত খবর সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে অনলাইনের মাধ্যমে পৌঁছে যাবে। ফলস্বরূপ কোনো ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে। আধিকারিক আরও জানিয়েছেন, বর্তমানে বিভিন্ন অসাধু গোষ্ঠী এবং প্রতারক, অন্যান্য যাত্রীদের জিনিসপত্র চুরি বা হয়রানি করে থাকে। নজরদারির আওতা বাড়লে এমন ধরণের অপরাধ অনেকটাই কমে আসবে।
রেলমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, ক্যামেরাগুলিকে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এবং STQC-প্রমাণিত হতে হবে। ক্যামেরাগুলি কম আলোতেও পরিষ্কার ভিডিও ধারণ করতে পারবে বলে খবর। ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বা তারও বেশি গতিতে চলা ট্রেনের ফুটেজও স্পষ্টভাবে ধারণ করতে সক্ষম হবে। শুধু ক্যামেরা বসানোই নয়, সেই ফুটেজ বিশ্লেষণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহারের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। IndiaAI মিশনের সঙ্গে যৌথভাবে সেই প্রযুক্তি কাজে লাগানোর সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
সর্বোপরি এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে রেলপথে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে যে দীর্ঘদিনের উদ্বেগ ছিল, তা অনেকটাই কেটে যাবে বলে মনে করছেন রেল কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে রেলের আধুনিকীকরণের পথে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে উঠবে। নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ ভারতীয় রেল ব্যবস্থাকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলবে সাধারণ মানুষের কাছে।
