আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০% ইথানল-মিশ্রিত পেট্রোল (E20) নিয়ে আতঙ্ক অমূলক। জানিয়ে দিল পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রণালয়। তারা একটি বিবৃতিতে বলেছে, ইথানল-মিশ্রিত পেট্রোল (বিশেষত ২০% ইথানল বা E20) ইঞ্জিনের ক্ষতি করে বা পারফরম্যান্স কমিয়ে দেয়—এই আশঙ্কাগুলো “প্রায় সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়”।


তাহলে সরকার কেন ইথানল মেশানোর দিকে এত জোর দিচ্ছে? এর কারণ হল ভারতের জ্বালানি নীতি এখন বড় ধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশের পেট্রোল পাম্পগুলোতে এখন আগের যেকোনও সময়ের তুলনায় বেশি পরিমাণে ইথানল মেশানো হচ্ছে। তবে এটি শুধুমাত্র পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ নয়, বরং এটি ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা, গ্রামীণ অর্থনীতি ও শহরের পরিবেশ ব্যবস্থাপনার একটি কৌশলগত পদক্ষেপ।
২০২৫ সালের মার্চেই সরকার তার নির্ধারিত E20 লক্ষ্য (পেট্রোলে ২০% ইথানল) পূরণ করেছে—যেটি মূলত ৫ বছর পরে পূরণের কথা ছিল। সরকারী তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ গড় ইথানল মিশ্রণের হার ছিল ১৭.৯৮%, যা আগের বছর ছিল ১৪.৬%। 

আরও পড়ুন: পার্সোনাল লোন হতে পারে সমস্যার কারণ, কখনই করবেন না এই ভুলগুলি


এর পেছনে রয়েছে একটি কৌশলগত দিক যে, দেশীয়ভাবে উৎপাদিত ইথানল মূল্যবান বিদেশি মুদ্রায় ক্রুড অয়েল আমদানি হ্রাস করবে। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাবে। কৃষকদের জন্য আয়ের একটি বিকল্প উৎস গড়ে তুলবে।


ইথানলের অর্থনীতি: ভারত এখনও তার মোট ক্রুড অয়েলের ৮৫%-এর বেশি আমদানি করে, ফলে বিশ্বের দামের ওঠানামা এবং ডলারের দামের পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ২০১৪ সাল থেকে ইথানল ব্লেন্ডিং প্রোগ্রামের (EBP) মাধ্যমে ভারত ১.৩৬ লাখ কোটি টাকা বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয় করেছে। প্রায় ১৯৩ লাখ টন ক্রুড অয়েল প্রতিস্থাপন করেছে।


OMC (Oil Marketing Companies) গুলি সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ইথানল কিনতে খরচ করেছে ১.১৮ লাখ কোটি টাকা। ডিস্টিলারিদের কাছ থেকে ১.৯৬ লাখ কোটি টাকা। এই ক্রয় কার্যক্রম একটি স্থিতিশীল বাজার তৈরি করেছে অতিরিক্ত ফসল। বিশেষ করে আখ ও খাদ্যশস্য। যার ফলে গড়ে উঠেছে একটি “গ্রামীণ বায়োইকোনমি”।


কোন রাজ্য সবচেয়ে লাভবান? মহারাষ্ট্র, উত্তর প্রদেশ ও কর্ণাটকের মতো রাজ্যে ইথানল সংক্রান্ত বিনিয়োগ সরাসরি গ্রামীণ এলাকায় পৌঁছেছে। যার ফলে অ্যাগ্রো-প্রসেসিং শিল্প গড়ে উঠছে। ডিস্টিলারি সম্পর্কিত চাকরি সৃষ্টি হয়েছে।


এই প্রকল্পের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক পরিবেশ সুরক্ষা।
পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয়ের একটি টুইটে বলা হয়েছে, ইথানল—যা তৈরি হয় আখ, অতিরিক্ত চাল, ভুট্টা বা কৃষি-আবর্জনা থেকে—ফসিল ফুয়েলভিত্তিক পেট্রোলের পরিবর্তে ব্যবহার করা হলে কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমন অনেক কম হয়। NITI Aayog-এর একটি লাইফ-সাইকেল বিশ্লেষণে দেখা গেছে: আখভিত্তিক ইথানল → ৬৫% কম গ্রিনহাউস গ্যাস। ভুট্টাভিত্তিক ইথানল → ৫০% কম নির্গমন।


এখন শহরগুলিতে (যেমন: দিল্লি, মুম্বই, কানপুর) ইথানল-মিশ্রিত পেট্রোল ব্যবহার হচ্ছে ব্যাপকভাবে, যার ফলে CO ও আনবার্নড হাইড্রোকার্বন নির্গমন হ্রাস পেয়েছে, এবং বায়ু মান উন্নত হয়েছে।


তবে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে এখানে। সেগুলি হল আখ একটি জল-নির্ভর ফসল → বেশি জল লাগে। খাদ্যশস্য জ্বালানিতে ব্যবহার করলে খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্ন ওঠে। ২০৩০ সালের জন্য নির্ধারিত ১,৭০০ কোটি লিটার ইথানল উৎপাদনের লক্ষ্য → বড় ধরনের পরিবেশগত ও সরবরাহ চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। 


সরকার কী করছে? বিকল্প উৎস যুক্ত করছে: যেমন নষ্ট খাদ্যশস্য, উদ্বৃত্ত মজুত ও ২য় প্রজন্মের (2G) বায়োফুয়েল। লক্ষ্য: টেকসই উৎপাদন + কৃষকদের ন্যায্য দাম। 
গাড়ির ইঞ্জিনের ক্ষতি নিয়ে কী বলছে সরকার? E20 পেট্রোল চালু হওয়ার পর অনেক চালক ও গাড়ি বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করেছেন যে পুরনো গাড়ি এই জ্বালানির সঙ্গে ঠিকঠাক কাজ নাও করতে পারে। ইঞ্জিনে মরিচা ধরতে পারে। রাবার সিল নষ্ট হতে পারে। স্টার্টিং সমস্যাও হতে পারে। কিছু চালক জানিয়েছেন E20 ব্যবহারে মাইলেজ কমে গেছে।


সরকার বলছে নতুন এবং পুরনো—দুই ধরনের গাড়িতেই গুরুত্বপূর্ণ কোনও পারফরম্যান্স বা ইফিসিয়েন্সি হ্রাস পাওয়া যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছে, বাস্তব পরিস্থিতি—যেমন গাড়ির বয়স, রক্ষণাবেক্ষণ—এসবের উপরেও অনেক কিছু নির্ভর করে। ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা, কৃষি অর্থনীতি ও পরিবেশ রক্ষা—এই তিন ক্ষেত্রেই ইথানল-মিশ্রণ একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। তবে এটি সফল করতে হলে প্রয়োজন জল ব্যবহারে দক্ষতা। খাদ্য মজুতের সঠিক ব্যবস্থাপনা। কৃষক ও ডিস্টিলারিদের জন্য লাভজনক মূল্য কাঠামো।