আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহার বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল ফলাফলের পর ভোটার তালিকা বৃদ্ধি নিয়ে নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্ক তীব্র হয়েছে। কংগ্রেস অভিযোগ তুলেছিল যে বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা SIR শেষ হওয়ার পর বিহারের ভোটার সংখ্যা ছিল ৭.৪২ কোটি, কিন্তু নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার সময় সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ৭.৪৫ কোটিতে। দলটি এই তিন লাখ বৃদ্ধিকে “ভোট চুরি” বলে দাবি করে। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, পুরো বৃদ্ধি নতুন ভোটার তালিকাভুক্তির নিয়ম মেনেই হয়েছে এবং অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই।

কমিশনের কর্মকর্তারা ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে প্রতিনিধিত্ব আইনের নিয়ম অনুযায়ী মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখের দশ দিন আগে পর্যন্ত নতুন ভোটার নাম অন্তর্ভুক্ত করা যায়। বিহারে মনোনয়ন দাখিলের শেষ তারিখ ছিল ২০ অক্টোবর। সেই হিসাবে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত পাওয়া বৈধ ফর্মের উপর ভিত্তি করেই তিন লাখ নতুন ভোটারকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। প্রথম দফার জন্য মনোনয়ন বন্ধ হয়েছিল ১৭ অক্টোবর এবং দ্বিতীয় দফার ক্ষেত্রে ২০ অক্টোবর; তাই এই সময়সীমার মধ্যে আসা আবেদনেই ভোটার সংখ্যা বেড়েছে বলে কমিশনের দাবি।

অন্যদিকে কংগ্রেস তাদের অভিযোগ থেকে সরে আসেনি। শনিবার দিল্লিতে দলের পর্যালোচনা বৈঠকের পর কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক কে.সি. ভেনুগোপাল ফলাফলকে “অবিশ্বাস্য” বলে আখ্যা দেন। তাঁর কথায়, ৯০ শতাংশ জয়ের হার ভারতের নির্বাচনী ইতিহাসে নজিরবিহীন এবং এই পুরো প্রক্রিয়া “প্রশ্নবিদ্ধ।” তিনি জানান, দল তথ্য সংগ্রহ করছে এবং এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে তারা কমিশনের বিরুদ্ধে “স্পষ্ট প্রমাণ” প্রকাশ করবে। এর আগের দিন লোকসভার বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধীও একই অভিযোগ তুলে বলেন যে শুরু থেকেই এই নির্বাচন অন্যায্য ছিল এবং সেই কারণেই ফলাফল “ধাক্কা দেওয়ার মতো।”

এদিকে নির্বাচনের ফলাফলে এনডিএ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। মোট ২৪৩ আসনের মধ্যে তারা জিতেছে ২০২টি আসন। বিপরীত শিবির মহাগঠবন্ধনের ঝুলিতে এসেছে মাত্র ৩৫টি আসন। কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ছয়টি আসন এবং ২০২০ সালে একক বৃহত্তম দল হওয়া সত্ত্বেও আরজেডি দশকের সবচেয়ে কম—২৫টি আসনে—সীমাবদ্ধ হয়েছে। ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই বিরোধীদের অভিযোগ, ভোটার তালিকা সংশোধনকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করা হয়েছে।

এখন কমিশনের ব্যাখ্যার পরও রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক থামার কোনো লক্ষণ নেই। বিরোধীরা যেখানে কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, সেখানে কমিশন আইনসম্মত প্রক্রিয়ার কথা তুলে ধরে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে চাইছে। বিহারের নির্বাচনের ফলাফলের মতোই এই বিতর্কও যে সহজে মিটবে না, তা রাজনৈতিক মহলেই পরিষ্কার।