আজকাল ওয়েবডেস্ক: লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর অভিযোগে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন ও কংগ্রেসের মধ্যে তীব্র বাকযুদ্ধ শুরু হয়েছে। কর্নাটকের মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রে এক লক্ষেরও বেশি ভোট “চুরি” হয়েছে বলে রাহুলের অভিযোগের পর ইসি শুক্রবার ফের কড়া ভাষায় পাল্টা জবাব দিয়েছে।

 

বৃহস্পতিবার বেঙ্গালুরুর “ভোট অধিকার” সমাবেশে রাহুল গান্ধী বলেন, “মহাদেবপুরা আসনে ১,০০,২৫০ ভোট পাঁচটি উপায়ে চুরি হয়েছে।” তাঁর দাবি—

 

১১,৯৬৫ জন ডুপ্লিকেট ভোটার

 

৪০,০০৯ জন ভুয়ো বা অবৈধ ঠিকানার ভোটার

 

১০,৪৫২ জন বাল্ক ভোটার বা একই ঠিকানায় নিবন্ধিত

 

৪,১৩২ জন অবৈধ ফটোর ভোটার

 

৩৩,৬৯২ জন ফর্ম-৬ এর অপব্যবহার করে ভোটার তালিকায় নাম তুলেছেন

 

 

রাহুলের কথায়, “এখানে এক আসন চুরি হয়েছে, এটা কর্নাটকের মানুষের বিরুদ্ধে অপরাধ। ইলেকট্রনিক ডেটা ও ভিডিও প্রমাণ পেলে আমরা দেখিয়ে দেব প্রধানমন্ত্রী চুরি করা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। ২৫টি আসনে জয়ের ব্যবধান ৩৫ হাজার ভোটের কম—আমরা প্রমাণ করব শুধু এক নয়, একাধিক আসন চুরি হয়েছে।”

 

ইসি প্রথমে রাহুলকে Registration of Electors Rules, 1960–এর নিয়ম অনুযায়ী শপথপত্র দিয়ে অভিযোগ জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। শুক্রবার কমিশন আরও এক ধাপ এগিয়ে জানায়—“শপথপত্র দিন বা জাতির কাছে ক্ষমা চান।” কমিশনের বক্তব্য, ২০১৯ সালে কামল নাথ বনাম ইসি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট মেশিন-রিডেবল ভোটার তালিকার দাবি খারিজ করেছিল।

 

কমিশন তথ্যপ্রমাণ হিসেবে জানিয়েছে—

 

অভিযোগকারী প্রার্থী চাইলে নির্বাচনের ফল চ্যালেঞ্জ করে ৪৫ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে ইলেকশন পিটিশন করতে পারেন।

 

সিসিটিভি ফুটেজ কেবল সেই ক্ষেত্রেই সংরক্ষিত হয়; অন্যথায় ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে তা নষ্ট করা হয়।

 

এক লক্ষ বুথের ফুটেজ খতিয়ে দেখতে লাগবে ২৭৩ বছর—যার কোনও আইনগত ফল হবে না।

 

 

ইসি অভিযোগ করেছে যে, ২০২৪ লোকসভা ভোটের পরে কংগ্রেস কার্যত কোনও আপিলই করেনি। এমনকি রাহুল ব্যক্তিগতভাবে কখনও স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠাননি, বরং আইনজীবীর মাধ্যমে লিখিত যোগাযোগ হয়েছে। কমিশন উদাহরণ দিয়ে বলেছে—২০২৪ সালের ডিসেম্বরে মহারাষ্ট্র ইস্যুতে রাহুল দাবি করেছিলেন ইসি জবাব দেয়নি, অথচ ২৪ ডিসেম্বর কমিশনের জবাব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

 

কমিশন আরও মনে করিয়ে দিয়েছে, ২০১৮ সালে মধ্যপ্রদেশে কামল নাথ একই ধরনের অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন, যেখানে বেসরকারি ওয়েবসাইটের তথ্য দিয়ে ৩৬ জন ভোটারের একই মুখের ছবি দেখিয়ে ভুল প্রমাণের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু চার মাস আগেই সংশোধিত ভোটার তালিকা কংগ্রেসকে দেওয়া হয়েছিল—ফলে সেই মামলা খারিজ হয়।

 

এদিকে, কর্নাটক, রাজস্থান ও বিহারের মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তারা রাহুলকে ভোটার তালিকায় কথিত ভুলভাবে অন্তর্ভুক্ত বা বাদ পড়া ভোটারদের নাম সহ স্বাক্ষরিত ঘোষণা জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

 

রাহুল পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন, “যখন মানুষ ডেটার ভিত্তিতে প্রশ্ন তুলছে, ইসি মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও বিহারের ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়েছে, কারণ সত্য প্রকাশ পেলে তাদের গোটা কাঠামো ভেঙে পড়বে।”

 

ফলে স্পষ্ট, ভোটার তালিকা নিয়ে এই সংঘাত শুধু কর্নাটকেই সীমাবদ্ধ নয়—রাহুলের অভিযোগে একাধিক রাজ্যের ইসি কার্যপ্রণালী এবং স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, আর কমিশনও কংগ্রেসকে কঠোর ভাষায় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।