আজকাল ওয়েবডেস্ক: দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবার অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ২৩টি এআইআইএমএস-সদৃশ প্রতিষ্ঠান গত কয়েক বছরে মারাত্মক জনবল সংকটে ভুগছে। গত ১৩ আগস্ট সংসদে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মোট ২০টি এআইআইএমএস-সদৃশ প্রতিষ্ঠানের ৪২৯ জন চিকিৎসক পদত্যাগ করেছেন। বাকি তিনটি প্রতিষ্ঠান এখনো চালু হয়নি।
এই সময়ের মধ্যে শুধুমাত্র এআইআইএমএস-দিল্লি থেকেই পদত্যাগ করেছেন ৫২ জন চিকিৎসক। এআইআইএমএস-ঋষিকেশে ৩৮ জন, এআইআইএমএস-রায়পুরে ৩৫ জন এবং এআইআইএমএস-বিলাসপুরে (হিমাচল প্রদেশ) ৩২ জন চিকিৎসক চাকরি ছেড়েছেন। উল্লেখ্য, বাজপেয়ী সরকারের সময় পরিকল্পিত ছ’টি প্রতিষ্ঠানের বাইরে বাকি সবই ২০১৪ সালের পর গড়ে ওঠে এবং বেশিরভাগ মাত্র গত দুই-তিন বছর আগে কার্যকর হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী প্রতাপরাও জাধব জানিয়েছেন, চিকিৎসকরা “ব্যক্তিগত ও পেশাগত কারণ” দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন। তবে সরকার এই উচ্চ হারে পদত্যাগ রোধে কোনো নির্দিষ্ট উদ্যোগ নিয়েছে কি না, সে বিষয়ে কিছু জানাননি।
শূন্যপদে বিপর্যস্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা
 
 স্বাস্থ্য মন্ত্রকের আরেকটি তথ্য অনুযায়ী (৫ আগস্টের জবাব), ২০২৪-২৫ সালে অনুমোদিত শিক্ষক পদগুলির এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি এখনো খালি। এআইআইএমএস-মাদুরাইয়ে ৭৩% শিক্ষক পদ খালি, রাজকোটে ৬০% এবং বিলাসপুরে ৫৩% পদ শূন্য। শূন্যপদ পূরণে মন্ত্রক জানিয়েছে, সরকারি প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অতিরিক্ত প্রফেসর ও সহযোগী প্রফেসরদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে, বয়সসীমা সর্বোচ্চ ৭০ বছর। এছাড়া সরকারি কলেজে কর্মরত অধ্যাপকদেরও অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি হিসাবে নিয়োগ দেওয়া যাবে। এই জন্য বিশেষ নির্বাচন কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবুও শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
 
 অশিক্ষক কর্মীর চরম ঘাটতি
 
 শুধু শিক্ষক নয়, অশিক্ষক কর্মীরও ভয়াবহ অভাব দেখা দিয়েছে। এআইআইএমএস-মাদুরাইয়ে ৯৬% অশিক্ষক কর্মীর পদ শূন্য, রাজকোটে ৫৬% এবং গৌহাটিতে ৪৮%। দেশের প্রাচীনতম এআইআইএমএস-দিল্লিই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, যেখানে শূন্যপদের পাশাপাশি অস্ত্রোপচারের জন্য রোগীদের দীর্ঘ প্রতীক্ষা তালিকা তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন: পাহালগাম হামলার প্রসঙ্গ টেনে জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা বিতর্কে সুপ্রিম কোর্ট
দুই বছরের অপেক্ষা অস্ত্রোপচারের জন্য
 
 ২৯ জুলাই সংসদে জানানো হয়, এআইআইএমএস-দিল্লিতে কার্ডিও-থোরাসিক ভাসকুলার সার্জারি (হৃদ্যন্ত্র, ফুসফুস ও রক্তনালীর অস্ত্রোপচার) এবং নিউরো সার্জারির জন্য রোগীদের প্রায় দুই বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে। গ্যাস্ট্রো-ইনটেস্টাইনাল সার্জারির ক্ষেত্রে অপেক্ষার সময় ৩ থেকে ৬ মাস। স্ত্রীরোগ বিভাগে ক্যানসারে আক্রান্ত জরুরি রোগীকেও অস্ত্রোপচারের জন্য তিন মাস অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সাধারণ সার্জারির জন্য অপেক্ষার সময় দুই মাস। সংখ্যায় দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে ৬৯০ জন রোগী সিটিভিএস অস্ত্রোপচারের জন্য, ১৩২৪ জন নিউরো সার্জারির জন্য, ৩০৫ জন সার্জিক্যাল অনকোলজির জন্য এবং ২৮ জন শ্রবণশক্তি হ্রাসজনিত কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট সার্জারির জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। তবে চক্ষু, ইএনটি, শিশু বিভাগ, বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি, ইউরোলজি ও দন্ত বিভাগে কোনো অপেক্ষা তালিকা নেই বলে মন্ত্রক জানিয়েছে।
 
 পরিকাঠামোগত ঘাটতিও দায়ী
 
 কেন্দ্রীয় মন্ত্রক জানিয়েছে, মানবসম্পদের পাশাপাশি পরিকাঠামোগত ঘাটতিও এই সঙ্কটের অন্যতম কারণ। ক্রমবর্ধমান রোগীর চাপ এবং সীমিত অপারেশন থিয়েটারের সংখ্যা মিলিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অবস্থা চলতে থাকলে দেশের শীর্ষ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলির মান ও আস্থায় বড় ধাক্কা লাগতে পারে।
