আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রবল বৃষ্টির জেরে ভোগান্তির শেষ নেই রাজধানীতে। তবুও আর্দ্রতাজনিত ভ্যাপসা গরম থেকে বেজায় স্বস্তি পেলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তুমুল বৃষ্টির জেরেই হু হু করে নামল তাপমাত্রার পারদ। একধাক্কায় সর্বোচ্চ পারদ নামল কয়েক ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গত এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে প্রথমবারের ঘটল। 

 

মৌসম ভবন সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দিল্লির সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের তুলনায় ৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। গত ১৪ বছরের মধ্যে প্রথমবার আগস্ট মাসে দিল্লিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে নেমেছে। বৃষ্টির পাশাপাশি তাপমাত্রাতেও নতুন রেকর্ডের সাক্ষী থাকল দিল্লি। দিল্লির সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

 

মৌসম ভবনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১২ সালে আগস্ট মাসে দিল্লির সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১১ সাল থেকে তে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে এটিই ছিল গত শুক্রবার পর্যন্ত দিল্লিতে আগস্টের মাসের শীতলতম দিনের রেকর্ড। শনিবার ফের তাপমাত্রার পারদ নতুন রেকর্ড গড়ল। 

 

আবহাওয়া দপ্তর আরও জানিয়েছে, ১৯৬৯ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত আগস্ট মাসে সবচেয়ে কম সর্বোচ্চ তাপমাত্রার প্রথম দশের তালিকায় রয়েছে শনিবারের তাপমাত্রা। আজ, রবিবারেও দিল্লিতে দিনভর মেঘলা আকাশ থাকবে। আজও বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে দিল্লিতে। 

 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার গভীর রাত থেকে দিল্লিতে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। শনিবার সকাল থেকে বেলা পর্যন্ত প্রবল বৃষ্টি হয়েছে দিল্লি জুড়ে। রাতেও ভারী বৃষ্টির হাত থেকে রেহাই মেলেনি শহরবাসীর। হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, শনিবার সফদরজং ৭৮.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। প্রগতি ময়দানে ১০০ মিলিমিটার, লোধি রোডে ৮০ মিমি, পালামে ৩১.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। 

 

আরও পড়ুন: দুই বছর ধরে 'ওইটা' দিলেও অসুখী বউমা! শ্বশুরের 'আসল জিনিস' নিয়ে টানাটানিতে শিউরে ওঠার মতো কাণ্ড

 

ভারী বৃষ্টির জেরে শনিবার জলমগ্ন হয়ে পড়ে গোটা দিল্লি।‌ বিমানবন্দর সূত্রে খবর, শুধুমাত্র গতকাল দিল্লি বিমানবন্দর থেকে ৩৩৯টি বিমান দেরিতে ওঠানামা করেছে। জল জমেছে পুরনো দিল্লি রেল স্টেশনেও। রাখি বন্ধন উৎসব ঘিরে রাস্তাঘাট তুলনামূলক বেশি ভিড় ছিল গতকাল। জলমগ্ন শহরে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। 

 

বৃষ্টিতে যদিও রাজধানীবাসী সাময়িকভাবে তীব্র গরম ও আর্দ্রতা থেকে মুক্তি পেয়েছে, কিন্তু এর ফলে যমুনা নদীর জলস্তর দ্রুত বাড়তে শুরু করে। নদীর জলসীমা সতর্কতা স্তর ২০৪.৫০ মিটারের কাছাকাছি পৌঁছে যায়, যা নিম্নাঞ্চলে সম্ভাব্য বন্যার আশঙ্কা বাড়াচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন নদীর জলস্তর ও বৃষ্টিপাত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এই দুর্ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দিল, শহরের পুরনো ও অনিরাপদ কাঠামো এবং অনিয়ন্ত্রিত বস্তি বিস্তার কীভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে মরণফাঁদে পরিণত হতে পারে। 

 

প্রবল বৃষ্টির জেরেই দেওয়াল ধসে গতকাল দিল্লিতে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে। যার জেরে প্রাণ হারিয়েছেন দুই শিশু সহ মোট আটজন। আহত হয়েছেন আরও একাধিক। নিহতদের তালিকায় রয়েছেন বাংলার চারজন বাসিন্দা। শনিবার সকালে জৈতপুর এলাকার হরি নগরে একটি পুরনো মন্দির সংলগ্ন দেওয়াল হঠাৎ ধসে পড়ে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দেওয়ালের গায়ে হেলান দিয়ে থাকা পুরনো ঝুপড়ি ঘরগুলিতে মোট আটজন বাস করতেন। দেওয়ালটি রাতভর ভারী বৃষ্টির চাপে ভেঙে পড়লে সকলেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েন। স্থানীয়রা ও উদ্ধারকারী দল মিলিতভাবে দ্রুত আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করে সাফদারজং হাসপাতাল ও এমস-এ পাঠায়। সেখানে আটজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।