আজকাল ওয়েবডেস্ক: দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ আরও বেশি বৃষ্টি বর্ষণ করতে পারে, অথচ একই সঙ্গে ঝড়ের বেগ তুলনামূলকভাবে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। এমনই নতুন পূর্বাভাস দিয়েছে ইউনিভার্সিটি অফ রিডিং-এর সাম্প্রতিক গবেষণা। গবেষণা বলছে, সবচেয়ে শক্তিশালী মৌসুমি নিম্নচাপগুলির ক্ষেত্রে একক ঝড়ের বৃষ্টিপাত প্রায় ২৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে, যখন বিশ্বের তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি বেশি উঠে যাবে।


এই পরিবর্তন দক্ষিণ এশিয়ার গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বৃষ্টি ব্যবস্থাকে নতুন রূপ দেবে— যে বর্ষা ভারতের, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং আশপাশের কোটি কোটি মানুষের কৃষি, পানীয় জল এবং জীবনযাত্রার মূল ভরসা। আরও উদ্বেগজনক বিষয়, মডেল ইঙ্গিত দিচ্ছে— ভবিষ্যতে এই ধরনের ঝড়গুলো আরও ভেতরের দিকে অগ্রসর হবে, যার ফলে পশ্চিম ভারত সহ এমন কিছু অঞ্চলে বন্যার ঝুঁকি বাড়বে যেগুলি বর্তমানে খুব কমই এমন ঝড়ের প্রভাব অনুভব করে।


কীভাবে কাজ করে মৌসুমি নিম্নচাপ
গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ুর মধ্যেই তৈরি হওয়া বড় আকারের ঘূর্ণায়মান নিম্নচাপ— যেগুলো বিশাল জলীয়বাষ্প বয়ে নিয়ে আসে— ভারতীয় উপমহাদেশে বর্ষার বড় অংশের জন্য দায়ী। গবেষণা বলছে, এই নিম্নচাপ ব্যবস্থাগুলো ভারতের মোট বর্ষার অর্ধেকেরও বেশি বৃষ্টি উৎপন্ন করে।
গবেষণার নেতৃত্ব দেন ইউনিভার্সিটি অফ রিডিং-এর জলবায়ুবিজ্ঞানী ড. কিয়েরান হান্ট, যিনি মৌসুমি ঝড়ের গঠন, গতিবিধি এবং উষ্ণায়নের প্রভাবে তাদের আচরণ কেমন বদলায়— তা নিয়ে কাজ করেন।


উষ্ণতায় বাড়বে বৃষ্টি, কমবে ঝড়ের গতি
ভবিষ্যতের জলবায়ু বোঝার জন্য গবেষকরা ১৩টি উন্নত জলবায়ু মডেল ব্যবহার করেন। বিশ্লেষণ বলছে, বিশ্ব উষ্ণায়ন শিল্পপূর্ব যুগের তুলনায় প্রায় ৫.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বাড়লে মৌসুমি ঝড়ের বেগ গড়ে ১০ শতাংশ কমে যায়।


কিন্তু ঝড় দুর্বল হলেও বৃষ্টি কেন বাড়ছে? ড. হান্ট ব্যাখ্যা করেন— ঝড়ের আগমুহূর্তে বাতাসে যে বিশাল পরিমাণ অতিরিক্ত আর্দ্রতা তৈরি হয়, দুর্বল ঝড়ও সেই আর্দ্রতা টেনে নিয়ে কেন্দ্রে জমা করতে পারে। ফলে ঝড়ের বেগ কমলেও বৃষ্টির পরিমাণ অনেক বেশি হয়।


উদাহরণস্বরূপ, বিশ্ব উষ্ণায়ন ৩.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পৌঁছালে সাধারণ একটি মৌসুমি নিম্নচাপ থেকে পাওয়া বৃষ্টিপাত ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে— শিল্পপূর্ব সময়ের তুলনায়। একই মাত্রার উষ্ণতায় মৌসুমি নিম্নচাপের সংখ্যাও ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে।


কেন বাড়বে বৃষ্টির তীব্রতা?
উষ্ণায়নের সঙ্গে সঙ্গে বাতাসে জলীয়বাষ্প ধারণক্ষমতা বাড়ে— যা ক্লসিয়াস-ক্ল্যাপেরন সম্পর্ক নামে পরিচিত। এই বৈজ্ঞানিক নিয়মই দেখায়, তাপমাত্রা বাড়লে চরম বর্ষাও বাড়ে। দক্ষিণ এশিয়ার অসম উষ্ণায়ন ভূমি ও সমুদ্রের আর্দ্রতার পার্থক্যকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। দক্ষিণ ভারতের তুলনায় উত্তরের স্থলভাগ বেশি উষ্ণ হওয়ায় নিম্নস্তরের আর্দ্রতা প্রবাহ আরও তীব্র হয়। ঝড় এগিয়ে এলে এই আর্দ্রতা ঝড়ের বৃষ্টিবাহিত মেঘমালায় প্রবেশ করে, ফলে বৃষ্টিপাত আরও ভারী হয়।


আরও গভীরে ঢুকবে ঝড়, বাড়বে প্লাবনের ঝুঁকি
মডেল অনুযায়ী, ভবিষ্যতের ঝড়গুলো স্থলভাগে আরও দীর্ঘ সময় ধরে সক্রিয় থাকবে। অর্থাৎ, পোস্ট ল্যান্ডফল ডিউরেশন বাড়বে— বিশেষ করে ২.৭ থেকে ৩.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট উষ্ণায়নের পর। এর ফলে বেশি সংখ্যক নিম্নচাপ মধ্য ভারত ও পশ্চিম ভারতে পৌঁছতে পারবে, যেগুলো আজ তেমন প্রভাবিত হয় না।


অতীত পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ভারতের বহু ভয়াবহ বৃষ্টি ও বন্যার ঘটনাই মৌসুমি নিম্নচাপে ঘটে। তাই ভবিষ্যতে আর্দ্রতার গ্রেডিয়েন্ট আরও তীব্র হলে চরম বৃষ্টির ঘটনাও বাড়বে।


গবেষণার সহ-লেখক প্রফেসর অ্যান্ডি টার্নার বলেন, “আমরা ভবিষ্যতের জন্য মৌসুমি বায়ুর চারটি সম্ভাব্য পথ দেখেছি, কিন্তু বার্তা একটাই— পৃথিবী যত উষ্ণ হবে, দক্ষিণ এশিয়ার বৃষ্টি তত বেশি ও আরও তীব্র হবে।”